তৈরি হচ্ছে ৪০ ফুটের দুর্গা প্রতিমা।নিজস্ব চিত্র।
পুজোর বাকি মাত্র কয়েকটা দিন। দর্শক টানতে থিমের লড়াইয়ের আঁচ অনেক আগেই পৌঁছে গিয়েছে জেলায়। পুজোর আগে তাই সাজ সাজ রব পুজোর উদ্যোক্তাদের মধ্যে। বাহুবলীর প্রাসাদ থেকে প্যারিসের আইফেল টাওয়ার কিংবা পিঁপড়ের একতা থেকে ছোটা ভীম—থিমের মাতামাতি সর্বত্রই।
শুধু থিম নয়, দর্শক টানতে এ বার প্রতিযোগিতা প্রতিমা নিয়েও। পাঁশকুড়ার গোগ্রাস কেশববাড় তরুণ তীর্থ ক্লাবের এবারের আকর্ষণ ৪০ ফুট উচ্চতার দুর্গা। শুধু উচ্চতাই এখানে দুর্গার হাতের সংখ্যা দশ থেকে বাড়িয়ে তিরিশ করা হয়েছে। সঙ্গে থাকছে কৈলাস পর্বতের আদলে তৈরি মণ্ডপ।
২০১৫ সালে কলকাতার দেশপ্রিয় পার্কের ৮০ ফুট উচ্চতার দুর্গা প্রতিমা দেখতে মানুষের ঢল নেমেছিল। শেষ পর্যন্ত ভিড়ের চাপে প্রতিমা দর্শন বন্ধ করে দেয় প্রশাসন। দর্শক টানতে পাঁশকুড়ার প্রত্যন্ত গ্রামের এই পুজো কমিটিও তাই উঁচু প্রতিমার দিকে ঝুঁকেছে। পুজোর বাজেট ৮ লক্ষ টাকা। হাতে রয়েছে মাত্র আর কয়েকটা দিন। তাই নাওয়া খাওয়া ভুলে প্রস্তুতি চলছে জোরকদমে।
আরও পড়ুন: স্বামী ব্রহ্মানন্দের বাড়ির পুজোয় জাগে নিদ্রাকলস
আরও পড়ুন: রেষারেষিটা বাস-ট্রেকারের দৌড়কেও লজ্জা দেবে
পুরাণে দেবী দুর্গা অষ্টাদশভূজা, ষোড়শভূজা, দশভূজা হিসাবে পরিচিতি রয়েছে। তবে দুর্গার তিরিশটা হাতের প্রসঙ্গে উদ্যোক্তাদের পক্ষে সমর গুছাইত বলেন, ‘‘দুর্গার তিরিশটি হাতের কোনও পৌরাণিক প্রেক্ষাপট নেই। তবে মা অসুর দলনী। তাঁর শক্তি কয়েকশো হাতের সমান। সেই শক্তির প্রতীক হিসেবেই আমরা মায়ের তিরিশটা হাতের রূপ গড়েছি।’’ তিনি জানান, দুর্গার দু’টি হাতেই থাকবে ত্রিশূল। বাকি আঠাশটি হাতে থাকবে পদ্ম। ওই ২৮টি পদ্ম আশীর্বাদের প্রতীক। তবে থিমের পাশাপাশি সাবেকিয়ানাকে মাথায় রেখে তৈরি করা হচ্ছে দশভূজার ছোটো মূর্তি।
এই ক্লাবের পুজো এবার ১৫ বছরে পা দিয়েছে। ভিড়ের কথা আঁচ করে পঞ্চমীর দিন থেকেই দর্শকদের জন্য পুজোমণ্ডপ খুলে দেওয়া হবে বলে জানান পুজো উদ্যোক্তারা। পাঁশকুড়া ব্লকে মোট পুজোর সংখ্যা ৬৪। এর মধ্যে প্রশাসনিক অনুমতি রয়েছে ২৬ টির। পাঁশকুড়া থানার ওসি অজিত কুমার ঝা বলেন, ‘‘নতুন করে কোনো পুজোর অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। তবে শীঘ্রই সমস্ত পুজো কমিটিকে নিয়ে সভা করে পুজোর গাইড লাইন ঠিক করা হবে।’’ কেশববাড় তরুণ তীর্থ ক্লাবের অনুমোদন না থাকলেও উদ্যোক্তাদের দাবি তাঁরা থানার গাইড লাইন মেনেই পুজো করেন। তাঁদের দাবি, এ বার ভিড় সামলাতে ৮০ জন স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করবেন তাঁরা। থাকবে সিভিক ভলান্টিয়ার। পুজো মণ্ডপ পর্যন্ত দমকলের গাড়ি যাওয়ার রাস্তা নেই। তাই কোনও বিপর্যয় হলে তা এড়াতে মণ্ডপের চারপাশে ৪ টি পাম্প মজুত রাখা হবে। সেই সঙ্গে বিসর্জন নিয়ে কোনওরকম বিশৃঙ্খলা এড়াতে পুজোর পর প্রতিমা বিসর্ঝন না দিয়ে মণ্ডপেই পাম্পের জলে গলিয়ে ফেলা হবে বলে উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন।
পাঁশকুড়ার বড় দুর্গা নিয়ে দর্শকদের আগ্রহও কম নয়। পুরুষোত্তমপুর গ্রামের বাসিন্দা অরিজিৎ মান্না বলেন, ‘‘প্রতি বছর পুজো দেখতে কলকাতায় যাই। এবার বাড়ির সামনে এত বড় দুর্গা দেখার সুযোগ হাতছাড়া করব না।’’
সব মিলিয়ে পাঁশকুড়ার বড় দুর্গা নিয়ে দর্শকদের মধ্যে ক্রমশই চড়ছে উত্তেজনার পারদ।