জগদ্ধাত্রী পুজো বললেই এক কথায় মনে পড়ে যায় চন্দননগরের নাম। চন্দননগর মানেই জাঁকজমক, পুজোর বিশাল আয়োজন আর মানুষের উপচে পড়া ভিড়। এ ছাড়া, নদিয়ার কৃষ্ণনগর বা মানকুণ্ডু, হুগলির ভদ্রেশ্বরের কথাও উঠে আসে চর্চায়।
তবে কলকাতাও কিন্তু পিছিয়ে নেই। এ শহরে এমন অনেক বনেদি পরিবার রয়েছে, যেখানে আজও জাঁকজমক করে জগদ্ধাত্রী পুজো হয়।
মদন গোপাল দে-র বাড়ির পুজো: মদন গোপাল দে-র বাড়ির এই পুজো বর্তমানে কলকাতার কলেজ স্ট্রিট এলাকায় মদন গোপাল লেনে পরিবারের পৈতৃক বাড়িতে অনুষ্ঠিত হয়। পুজো শুরু হয়েছিল ১৩০ বছর আগে।
জানা যায়, এই পরিবারের শিকড় চন্দননগরে। মদন গোপাল দে স্বপ্নাদেশ পেয়ে এই পুজো শুরু করেছিলেন। আজও বৈষ্ণব রীতি অনুযায়ী উদ্যাপন হয় । ধুনো পোড়ানো এখানকার পুজোর এক বিশেষ আকর্ষণ।
ঠনঠনিয়া দে বাড়ির পুজো: ঠনঠনিয়া কালীবাড়ির কাছেই হয় এই পুজো। ১৮৯৭ সালে গিরিশচন্দ্র দে এই পুজো শুরু করেছিলেন। উত্তর কলকাতার ঠনঠনিয়ার দে বাড়িতে প্রতি বছর নবমীর দিনে জগদ্ধাত্রী পুজো হয়। বর্তমানে মানিক লাল দে-র বাড়িতে হয় এই পুজো।
চোরবাগান মৈত্র বাটির পুজো: এই পুজোর বয়স প্রায় ২৫০ বছর। এই পরিবারের শিকড় ছিল রাজশাহী, বাংলাদেশে। এখন পুজো হয় ১, মুক্তারাম বাবু দ্বিতীয় লেন, কলকাতায়। ১৯১৭ সালে এক বছর পুজো বন্ধ ছিল। তা বাদ দিলে ২৫০ বছর ধরে চলে আসছে পুজো। জানা যায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এই বাড়ির নাম দিয়েছিলেন মৈত্রবাটি। এখানে প্রতি বছর বহু মানুষ পুজো দেখতে আসেন। এখানে মা জগদ্ধাত্রীর দুই পাশে জয়া ও বিজয়ার দু’টি মূর্তি রয়েছে।
বটকৃষ্ণ পালের জগদ্ধাত্রী পুজো: হাওড়ার শিবপুরের বটকৃষ্ণ পাল কলকাতায় আসেন ১৮৫৫ সালে। শোভাবাজার এলাকায় ওষুধের দোকান স্থাপন করেন তিনি।
এই জগদ্ধাত্রী পুজো শুরু করেন তিনি। যার বয়স ১০০ বছরেরও বেশি। এখানে জগদ্ধাত্রী মূর্তির দু’পাশে দেবীর দুই সখী রয়েছে। এখানে চালচিত্রটি তামার তৈরি। তাতে রয়েছে সোনা ও রূপার প্রলেপ।
দুর্গাচরণ মিত্রের জগদ্ধাত্রী পুজো: এই পুজো শুরু হয় ১৭৫২ সালে। বর্তমানে যে দালানটিতে পুজো হয়, সেটি ১৫০ বছরেরও বেশি পুরনো। এখানে শাক্ত রীতি অনুযায়ী পুজো হয়। আগে বলিদানের প্রথা ছিল,যা ১৯৮৯ সালে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এখানে দেবীর মুখের রং শিউলি ফুলের কাণ্ডের মতো। এখানে সিংহের মুখ ঘোড়ার মতো, অর্থাৎ সিংহ ঘোটকমুখী।
ছাতুবাবু ও লাটুবাবুর বাড়ির জগদ্ধাত্রী পুজো: এখানকার পুজো দুশো বছরেরও বেশি পুরনো৷ রামদুলাল দে ১৭৮০ সালে এই জগদ্ধাত্রী পুজো শুরু করেছিলেন। এখানে দেবী কাঠের সিংহাসনে আসীন। এখানে তান্ত্রিক রীতি অনুযায়ী পুজো অনুষ্ঠিত হয়। মাকে দেওয়া হয় নিরামিষ ভোগ।
নীলমণি দে ঠাকুরবাড়ির পুজো: কলকাতার বউবাজার এলাকায় নীলমণি দে-র ঠাকুরবাড়ির পুজো ১৩৫ বছরেরও বেশি পুরনো। এখানে নবমীর দিন চারটি পুজো অনুষ্ঠিত হয়। দেবীকে নিরামিষ ভোগ দেওয়া হয়। এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।