প্রতীকী চিত্র
‘ওম জয়ন্তী মঙ্গলা কালী ভদ্রকালী কপালিনী
দুর্গা শিবা ক্ষমা ধাত্রী স্বাহা স্বধা নমোহস্তুতে।‘
ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ ভীষণ দিনরাত্রি। চতুর্দিকে কেবল জল আর জল। তার মধ্যে দিয়ে তিনি চলেছেন। হাতে সাবধানে ধরা ব্রহ্ম পদার্থ। এই ব্রহ্ম পদার্থ দিয়ে তিনি সৃষ্টি করবেন নতুন পৃথিবী, নতুন সূর্য। নতুন ধরিত্রীতে প্রাণ সৃজন হবে। কিন্তু তিনি যে আদি! তাঁকেই সঞ্চয় করে জমিয়ে রাখতে হবে এই তিন ব্রহ্ম পদার্থ- অর্থাৎ পূর্বের স্মৃতিসার।
সবারই প্রশ্ন- মায়ের বিবিধ রূপের সঙ্গে কেন কপালিনী শব্দটা জুড়ে যায়। কপাল ধারণ করেছেন যিনি, তিনি কপালিনী। শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত অর্থ ললাটদেশ, যা কলসের অর্ধাংশ স্বরূপ অর্থাৎ মস্তকের অর্ধাংশ। তবে সবাই যেমন ভেবে থাকে, গলার মুণ্ডমালার হারের কারণে মায়ের এমন নাম, তা কিন্তু নয়।
শাস্ত্রমতে তবে কেন কালীর সঙ্গে জুড়ে গেল কপালিনী নাম?
পৌরাণিক ব্যাখ্যা -
একটি যুগ বা মনুর অবসান ঘটে, শুরু হয় নতুন মনুর সময়। একটি মনু হতে আরেক মনুকে বলে মন্বন্তর। ভীষণ দুর্যোগে ঘটে এই পরিসমাপ্তি। মহাকাল ও মহাকালী ছাড়া কেউ বা কিছুরই অস্তিত্ব থাকে না। নতুন মনুর নতুন সূর্য, নতুন চন্দ্র- সবই নতুন। প্রবল ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ মহাপ্রলয়ে সব কিছুর নাশ হয়। সমস্ত ধরা হয় জলমগ্ন।
মা কালী ব্রহ্মা এবং অন্য দেবতাদের কপাল হাতে বিচরণ করেন জলের উপরে। এ ভাবেই রক্ষা করেন তাঁদের আজ্ঞা ও ব্রহ্মসার। সেই দিয়েই গড়া হবে নতুন পৃথিবী৷ তাই প্রতিটি যুগেই তিনি আদিশক্তি, যার তল নেই। তিনি সেই আদি- অনন্ত কপালিনী বা কপালধারিণী।
তন্ত্রমতে ব্যাখ্যা -
মা তারা বা দ্বিতীয় মহাবিদ্যার হস্তে করোটি অর্থাৎ মাতৃহস্তে সাধকের মুক্তি। অস্থি, করোটি হল অন্তিম অর্থাৎ সাধন সিদ্ধি। তন্ত্রমতে সিদ্ধির অর্থ হল চিরন্তন জন্ম। মৃত্যুর চক্র থেকে মুক্তিলাভ করে মায়ের আভূষণ হওয়া, অর্থাৎ মায়ের কোলে স্থান পাওয়া।
যেমন, শবের শিবত্ব প্রাপ্তি। তেমনই সাধকের করোটি মায়ের হাতে অর্থাৎ তার যাবতীয় স্থূল নাশ হয়ে সূক্ষ্মে মাতৃত্বে ঠাঁই পাওয়া।
কৃতজ্ঞতা স্বীকার - শাস্ত্রজ্ঞ অরিজিৎ মজুমদার
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।