মা কালীকে নিয়ে একটি প্রশ্ন প্রায়ই অনেকে করেন, কালী মায়ের পুজোয় জবা ফুল লাগে কেন?
এ নিয়ে একটি ব্যাখ্যা নিছকই শোনা। সেটিই বলা যাক এই লেখায়।
ফুলের মধ্যে জবা হল সব চাইতে দুর্বল। পদ্ম, গোলাপ দেখতে যেমন সুন্দর, তেমন তার গন্ধ! গাঁদাও খানিক তাই। গাঁদা আবার দীর্ঘদিন তাজা থাকে।
কিন্তু জবা বড়ই সাদামাঠা। এর না আছে গন্ধ, না আছে স্থায়িত্ব। রঙেও বড় কটকটে।
এক দিন মা কালীর কাছে কেঁদে পড়ল জবা।
বলল, "মা, আমায় কেউ মান দেয় না। কোন পূজায় লাগি না। তুমি এর বিচার করো।"
প্রত্যুত্তরে মা বললেন, ”যাদের কেউ নেই। তাদের মা আছে। আজ থেকে আমার পুজোয় তুমিই হবে অপরিহার্য। আর রং কটকটে কে বলেছে! তোমার বর্ণ টকটকে লাল! আমি জগত্তারিণী, ক্রমাগত সৃজন এবং সংগ্রামে আমি রক্তলিপ্ত। লাল সৃজন ও শৌর্যের প্রতীক তুমি তো আমারই প্রতিনিধিত্ব কর।"
সেদিনের মতো শিশু মন সেই তত্ত্ব দ্বারা শান্ত হয়েছিল।
পরবর্তীকালে বিভিন্ন তথ্য এই কথাকে বারবার প্রতিষ্ঠা দিয়েছে।
লাল রঙের তত্ত্ব বিশ্লেষণ করলে, যে ভাষ্যগুলি পাওয়া যায়। তা হল-
১. মা কালীর জিহ্বার রং লাল। জিহ্বা কথার অর্থ হল পরম বাক। কন্ঠ, তালু, মূর্ধা, দন্ত... জিহ্বা স্পর্শ করলেই ধ্বনি তৈরি হয়, উচ্চারণ হয়। সেই লাল জিহ্বার প্রতীক জবা। আদি বাক-কে নির্দিষ্ট করে।
২. লাল রং ঋতুচক্রের প্রতীক এবং ঋতুচক্র সৃজনের, তাই লাল রং দ্বারা অনন্ত সৃজনকে নির্দিষ্ট করা হয়। এই কারণেই রক্ত জবা কালীপুজোয় অপরিহার্য।
৩. লাল রং শৌর্যের প্রতীক। অসুরদলনী, রক্তবীজবিনাশিনী মায়ের শৌর্যের কথা সর্বজনবিদিত। অতএব আর গলায় যে রক্তজবার অঙ্গ ভূষণ হবে এইতো স্বাভাবিক।
৪. লাল রং ভালবাসা, স্নেহের প্রতীক। মা অর্থই হল জগতব্যাপি ভালবাসা। তাঁর ভালবাসা এবং স্নেহ আছে বলেই, মৌমাছি পরাগরেণু বহন করে ফুলে এসে বসে। ফুল থেকে ফল হয়। সম্পর্ক তৈরি হয়। এভাবেই অনন্ত সৃজনের দ্বারা পৃথিবী গড়িয়ে চলে। এই তত্ত্বের নিরিখে জবাই তো শ্রেষ্ঠ।
৫. আবার লাল রং হল বিপদের প্রতীক অর্থাৎ নারীকে অসম্মান করলে, তার ফল ভয়াবহ হতে পারে। এর বহু নিদর্শন আমাদের প্রাচীন মহাকাব্য হতে বর্তমান সময়ে ছড়িয়ে রয়েছে। সেই লালের বিপদ বার্তা ও সাবধান চেতনা জবা দ্বারা সূচিত করা হয়।
এই কারণেই তো সাধক বলে গিয়েছেন, "মায়ের পায়ের জবা হয়ে ওঠ না ফুটে মন”, অর্থাৎ জবার ন্যায় বৃন্তচ্যুত সমর্পণ হয়ে মায়ের কাছে পড়ে রইলে মুক্তি মিলবে।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।