Myth behind Owl as Devi Lakshmi's vehicle

পেঁচাই কেন মা লক্ষ্মীর বাহন? ব্যবহারিক ও তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা চমকে দেওয়ার মতো!

গভীর রাত্রি। গভীর নিদ্রায় মগ্ন জীব কুল। তিনি মন্থর পায়ে নেমে এলেন ভূলোকে। তিনি যে কথা দিয়েছেন, কোজাগরী রাতে তিনি আসবেন। যে জেগে থাকবে, তার ঘরেই তিনি নেবেন অধিষ্ঠান।

Advertisement

তমোঘ্ন নস্কর

শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০২৪ ১১:২৫
Share:

গভীর রাত্রি। গভীর নিদ্রায় মগ্ন জীব কুল। তিনি মন্থর পায়ে নেমে এলেন ভূলোকে। তিনি যে কথা দিয়েছেন, কোজাগরী রাতে তিনি আসবেন। যে জেগে থাকবে, তার ঘরেই তিনি নেবেন অধিষ্ঠান।

Advertisement

গাছের উপর তখন বসেছিল একটি শ্বেত বর্ণের প্যাঁচা। রাতেই শিকার ধরার কাজ তার। মা লক্ষ্মীকে এমন ভাবে অন্ধকারে হেঁটে যেতে দেখে তার ভারী কষ্ট হল। না-ই বা হল শিকার ধরা, না-ই বা মিটল খিদে। তবু সে জেগে থাকতে মা কী ভাবে হেঁটে যাবেন! উড়ে এসে তাই মাকে নিজের পিঠে তুলে নিল সেই পেঁচা। সেই রাত থেকেই সে মা লক্ষ্মীর বাহন।

আর এক মতে, সমুদ্র মন্থনে একই সঙ্গে উত্থিত হয়েছিলেন দুই দেবী— লক্ষ্মী ও অলক্ষ্মী। এক জন উজ্জ্বল স্বর্ণালঙ্কারে সজ্জিতা। অন্য জন আঁধারস্বরূপিনী, গায়ে লোহার গয়না। তাই দেবী লক্ষ্মীর অর্ধেক অংশ অলক্ষ্মী। আবার কথিত, মা লক্ষ্মী ব্রহ্মার মুখের উজ্জ্বল অংশ থেকে এবং অলক্ষ্মী তাঁর পিঠের অন্ধকার দিক থেকে আবির্ভূতা। পেঁচা লক্ষ্মীর পায়ের কাছে বসে, অর্থাৎ সেই অন্ধকার পৃষ্ঠদেশ বা অলক্ষ্মী।

Advertisement

তবে গভীরে ভেবে দেখলে একটি সুস্পষ্ট ব্যবহারিক ব্যাখ্যাও মেলে।

মা লক্ষ্মী শস্যের দেবী। তিনি সুজলা সুফলা ধরণীর আহ্বায়ক। ইঁদুর, পঙ্গপাল, প্রতিটি কীটপতঙ্গ হানিকারক। গভীর রাত্রে ইঁদুর বেরোয় শস্যের ক্ষতি করতে। ঠিক সেই সময়ে সারাদিন অন্ধ হয়ে থাকা পেঁচা নিখুঁত লক্ষ্যে তাকে গ্রাস করে শস্য বাঁচায়। কীটপতঙ্গ খেয়ে সে শস্যকে রক্ষা করে। তাই শস্যরক্ষক পেঁচাকে মা লক্ষ্মীর বাহন কল্পনা করা হয়েছে।

ইদানীং বিভিন্ন ভিডিয়োয় দেখা যায় পেঁচার শিকার ধরার কৌশল। দীর্ঘ সময় ভীষণ ধৈর্য ধরে সে শিকারকে লক্ষ্য করে, পর্যবেক্ষণ করে। তারপর সে শিকার ধরে। অর্থাৎ, পেঁচা ধৈর্যের প্রতীক।

কোজাগরী কথাটির মধ্যেও ধৈর্যের আভাস লুকিয়ে আছে। মা বলছেন, রাতে আমার জন্য যে ধৈর্য ধরে জেগে থাকবে, আমি তার গৃহে অধিষ্ঠান করব। তাই ধৈর্যের প্রতীক পেঁচা মায়ের বাহন।

পেঁচা বুদ্ধিমত্তা ও প্রজ্ঞার প্রতীক। রাতের অন্ধকারে পেঁচা দেখতে পায়। যেমন এক জন জ্ঞানী ব্যক্তি অন্ধকারের মধ্যে সঠিক পথের দিশা খুঁজে নেন। এক জন বুদ্ধিমান ব্যক্তিও চরম বিপদের অন্ধকার থেকে নিজের আলোর দিশা খুঁজে পান। তাই অন্তঃদৃষ্টি অর্থাৎ হৃদয়ের সম্পদস্বরূপিনী মা লক্ষ্মীর বাহন পেঁচা।


এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement