দেবী জগদ্ধাত্রী (ছবি: সংগৃহীত)
উপনিষদে দেবী জগদ্ধাত্রী প্রথম আবির্ভূতা হন এক যক্ষের বেশে। আর স্বরূপে আবির্ভূতা হওয়ার পরে তাঁর নাম হয় উমা হৈমবতী। আবার, কাত্যায়নী তন্ত্রে উমা বা জগদ্ধাত্রী- এমন কোনও নাম পাওয়া যায় না। সেখানে দেবী কেবল হৈমবতী।
অনেকে আবার মনে করেন, দেবী বৈষ্ণবী শক্তির প্রতীক। পুরাণে দুর্গারও আবির্ভাবের আগে বেশ কয়েক বার এক দেবীর উল্লেখ পাওয়া গিয়েছে, যিনি বিষ্ণুমায়া বা বৈষ্ণবী শক্তি হিসেবে সুপরিচিতা। বিষ্ণুর মতো সেই দেবীর হাতেও রয়েছে শঙ্খ এবং চক্র, ঠিক যেমন দেখা যায় দেবী জগদ্ধাত্রীর হাতে। আবার, বিষ্ণুর মতোই তিনিও ধারণ ও পালন করেন এই বিশ্বকে। অতএব দেবীর বিষ্ণুমায়া হওয়াটাই বেশি যুক্তিযুক্ত।
পুরাণে পাওয়া যায় আরও একটি কাহিনি। মহিষাসুর বধের পর অত্যধিক উল্লসিত হয়ে ওঠেন দেবতারা। তাঁরা মনে করেন, দেবী দুর্গা যেহেতু তাঁদেরই সম্মিলিত শক্তির প্রকাশ, তাই অসুর বধ হয়েছে তাঁদেরই মিলিত শক্তিতে। ব্রহ্মার বরের কারণে মহিষাসুরকে কোনও পুরুষ বধ করতে পারবে না, সেই কারণেই কেবল ওই নারীর প্রয়োজন হয়েছিল মাত্র। মূলত তাঁর শক্তি দেবতাদেরই সম্মিলিত শক্তি।
এই মনোভাবে অহঙ্কারে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠেন দেবতারা। তাঁদের ওই দর্প চূর্ণ করার জন্য পরমেশ্বরী দেবী দেবতাদের শক্তি পরীক্ষা করতে একটি তৃণখণ্ড আড়াল থেকে ছুঁড়ে দেন। ইন্দ্র বজ্র দিয়ে সেই তৃণ ধ্বংস করতে ব্যর্থ হন। অগ্নি সেই তৃণ দহন করতে পারেন না। বায়ু ব্যর্থ হন তা উড়িয়ে নিয়ে যেতে। এবং বরুণদেবের শক্তি সেই তৃণকে জলস্রোতে প্লাবিত করতে পারে না। তখন তাঁদের সামনে আবির্ভূতা হন পরমাসুন্দরী সালঙ্কারা চতুর্ভূজা জগদ্ধাত্রী। এ ভাবেই প্রমাণিত হয়, তিনিই এই জগতের ধারিণী শক্তি।
শ্রীশ্রীচণ্ডীতে বলা হয়েছে, যুদ্ধের সময়ে মত্ত মহিষাসুর ধারণ করেন হস্তীরূপ। সেই হস্তী দেবীকে বধের চেষ্টা করলে দুর্গা ধারণ করেন এক চতুর্ভুজা মূর্তি। চক্র দ্বারা তিনি হাতির শুঁড় ছেদ করেন। দেবীর সেই রূপটিই জগদ্ধাত্রী রূপে পূজিতা হন। সংস্কৃতে হাতির অপর নাম করী। সেই অনুসারে অসুরটির নাম করীন্দ্রাসুর। তাকে বধ করেন বলে জগদ্ধাত্রীর অপর নাম করীন্দ্রাসুরনিসূদিনী।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।