Lakshmi Puja Stories

দুর্গাপুজোর পরেই কেন লক্ষ্মীপুজো হয়?

মা লক্ষ্মী পূজিতা হন দেবীপক্ষের শেষের পূর্ণিমাতে। কিন্তু বিপত্তিনাশিনী, দুর্গার পুজোর পরেই কেন ধন-ঐশ্বর্যের দেবী লক্ষ্মীর আরাধনা করা হয়?

Advertisement

শ্রী মণি ভাস্কর

শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০২৩ ১২:৫৮
Share:

ধন ও সৌভাগ্যের দেবী মা লক্ষ্মী। অনেকে লক্ষ্মীপুজোর দিন মা লক্ষ্মীর আরাধনায় সামিল হন, অনেকে আবার কালীপুজোর দিনেও দেবী লক্ষ্মীর আরাধনা করেন। মা লক্ষ্মী পূজিতা হন দেবীপক্ষের শেষের পূর্ণিমাতে। কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো নামে যার মূল পরিচিতি। কিন্তু জানেন কি, বিপত্তিনাশিনী, বিজয়প্রাপ্তির দেবী দুর্গার পুজোর পরেই কেন ধন-ঐশ্বর্যের দেবী লক্ষ্মীর আরাধনা করা হয়?

Advertisement

মহাভারতের শান্তিপর্বে এর উল্লেখ রয়েছে। বলা হয়, এক বার দেবতাদের কিছু আচরণে(অতি অহংকার, মদমত্ততা, আলস্য প্রভৃতি) অসন্তুষ্ট হয়ে স্বর্গলোক ত্যাগ করেন দেবী লক্ষ্মী। স্বর্গপুরী ত্যাগ করে শ্রী চলে যান পাতাললোকে-দৈত্যপুরীতে। স্বর্গ থেকে চলে গিয়ে দেবী লক্ষ্মী অধিষ্ঠান করলেন সমুদ্রের অতল গহ্বরে। মুহূর্তের মধ্যে স্বর্গ লক্ষ্মীছাড়া হল। চার দিক শ্রী-হীন, ছন্নছাড়া হয়ে গেল। হারিয়ে গেল স্বর্গের ঔজ্জ্বল্য, সুখ, সমৃদ্ধি। দেবতারা চিন্তায় পড়ে গেলেন। পরিশেষে দেবরাজ ইন্দ্র দেবী লক্ষ্মীর অনুসন্ধান শুরু করলেন। প্রথমে মর্ত্যলোক, কিন্তু সেখানে লক্ষ্মীর কোনও অস্তিত্ব না পেয়ে পাতাললোকে গিয়ে পৌঁছলেন দেবরাজ ইন্দ্র। দৈত্যপুরীর চোখধাঁধানো ঐশ্বর্য দেখে দেবরাজ ইন্দ্রের বুঝতে বাকি রইল না যে দেবী লক্ষ্মী পাতাললোকে বিরাজ করছেন।

কিন্তু পাতাললোক থেকে কী ভাবে দেবী লক্ষ্মীকে স্বর্গে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়? কোনও উপায় খুঁজে না পেয়ে সমস্ত দেবতাদের সঙ্গে নিয়ে শ্রী বিষ্ণুর স্মরণাপন্ন হলেন দেবরাজ ইন্দ্র। সব শুনে শ্রী বিষ্ণু বললেন, শুধু মাত্র দেবতাদের পক্ষে মহালক্ষ্মীকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। দেব-দানবের সম্মিলিত প্রয়াসেই সমুদ্রের অতল গহ্বর থেকে মহালক্ষ্মীকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। শ্রী বিষ্ণুর পরামর্শ মেনেই, দেবতা, অসুর একজোট হয়ে সমুদ্রমন্থন শুরু করলেন। ক্রমে ক্রমে সমুদ্রের অতল গহ্বর থেকে উঠে এল মণি, মাণিক্য, রত্ন, অমৃতসুধা। সমুদ্র থেকে উঠে এলেন সমুদ্রোদ্ভবা মহালক্ষ্মী। জগতের পালক শ্রী বিষ্ণুর অনন্তশয্যায় অধিষ্ঠান করলেন মহালক্ষ্মী। বিষ্ণু অনন্তশয্যা অর্থাৎ এই অনন্ত বিশ্বকে মহালক্ষ্মীর সম্পদ ও সমৃদ্ধি দিয়ে পালন করে আসছেন। দেবী কিন্তু জানিয়ে দিলেন, যখনই কেউ ঐশ্বর্য-ধন-ক্ষমতা বলে অহংকারী হয়ে উঠবে, আলস্য যাকে গ্রাস করবে, লক্ষ্মী তাকে ত্যাগ করবেন।

Advertisement

দেবী-পক্ষে, দুর্গার অকালবোধন এবং রাবণের পরাজয়ও সেই একই কথা বলে, ‘অতি দর্পে হতা লঙ্কা অতি মানে চ কৌরবাঃ। অতি দানে বলির্বদ্ধঃ, সর্বমত্যন্তগর্হিতং।’ অতিরিক্ত দর্প বা অহংকার যেমন রাবণের পরাজয়ের কারণ হয়েছিল, তেমনই অতি অহংকার বা মদমত্ততা বা আলস্য যেন আমাদেরও শ্রী-হীন না করে তোলে। মহিষাসুরকে বধ করে দেবীর বিজয়, রাবণকে পরাজিত করে রামচন্দ্রের জয়, বিজয়াদশমী-অর্থাৎ জয়ের উদযাপন। কোনও জয় যেন আমাদের মধ্যে অহংকার-আলস্যের জন্ম না দেয়, অহংকারের উন্মত্ততায় যেন লক্ষ্মীছাড়া না হই, সে কারণেই দেবী দুর্গার আরাধনার পরেই পূজিতা হন দেবী লক্ষ্মী, যিনি লক্ষ্যপ্রাপ্তি করান, একাগ্র চিত্তে যার আরাধনা না করলে তিনি সদা চঞ্চলা......

মানুষ এই মহালক্ষ্মীকেই বিভিন্ন রূপে পুজো করে। মানুষের কল্পনায় কখনও তিনি ধনলক্ষ্মী, কখনও ভাগ্যলক্ষ্মী, আবার কখনও তিনি ঘরের মেয়ে— গৃহলক্ষ্মী। বৈদিক যুগে তাঁর নাম ছিল শ্রী। তখনও তিনি ঐশ্বর্যের দেবীই ছিলেন, তবে সেখানে তিনি চিন্ময়ী দেবী হিসেবেই পুজো পেতেন, মৃন্ময়ী ছিলেন না। পুরাণের যুগে এসে অন্যান্য দেব-দেবীর মতো তিনিও মৃন্ময়ী হলেন, পেলেন তার বাবা, মায়ের আদর।

আমরা বিশ্বাস করি তাঁর কৃপাতেই আমাদের সুখ সমৃদ্ধি বৃদ্ধি পায়, তাই লক্ষ্মীদেবী সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ বলছেন—

‘লক্ষ্মী আমায় বল দেখি মা

লুকিয়ে ছিলি কোন সাগরে

সহসা আজ কাহার পুণ্যে

উদয় হলি মোদের ঘরে’

এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement