কালীপুজো শেষ হতে না হতেই ভাতৃদ্বিতীয়া এসে উপস্থিত। বাঙালি বাড়িতে ভাইফোঁটা নাম হলেও, অবাঙালিদের মধ্যে এই উৎসব ‘ভাইদুজ’ নামে খ্যাত। মূলতঃ পারিবারিক উৎসব হিসেবে এই অনুষ্ঠান প্রসিদ্ধ। সারা বাংলা এমনকি ভারতবর্ষের বিভিন্ন জায়গায় এই ভাইফোঁটা অনুষ্ঠানটি মহাসমারোহে ঘরে ঘরে পালিত হয়।
বহু বছর ধরে চলে আসা এই অনুষ্ঠানের পিছনে ইতিহাস ও নানান পৌরাণিক ঘটনা রয়েছে।
দিদিরা কবে থেকে শুরু করল ভাইদের কপালে ফোঁটা দেওয়া, ভাইদের মঙ্গল কামনায় দিদিরা আর কী কী করে, এই নিয়ে পুরাণে বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে।
নামের পার্থক্য থাকলেও ভাইদের মঙ্গল কামনায় দিদিরা ভাতৃদ্বিতীয়ার এইদিন বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠান করে থাকে।
তবে জানেন কি কবে থেকে শুরু হল এই ভাইফোঁটার রীতি-নীতি?
সূর্যদেব এবং দেবী শরন্যুর পুত্র ও কন্যা ছিল যম ও যমী। যমী মানে যমুনা নদী। যমুনা নিজের ভাই এর মঙ্গল কামনায় ফোঁটা দিতেন কপালে।
তারপর থেকেই ভাতৃদ্বিতীয়া বা ভাইফোঁটা অনুষ্ঠানটির সূচনা হয়।
যমুনা ও যমের নামাঙ্কিত ভাইফোঁটার ছড়া লোকমুখে প্রসিদ্ধ।
যমুনা অনেকবার তার ভাই যমকে নিজের বাড়িতে নিমন্ত্রণ করেছিলেন। কিন্তু যম কখনই দিদির বাড়িতে আসেননি বা বা আসতে পারেননি ব্যস্ততায়।
এরপর একদিন কার্ত্তিক মাসের শুক্লপক্ষর দ্বিতীয়া তিথিতে যমুনা দেখেন তার বাড়ির দরজায় এসে দাঁড়িয়েছে যম।
আনন্দে এবং প্রসন্নতায় তিনি ভাই এর কপালে ফোঁটা দেন এবং বিভিন্ন পদ রেঁধে খাওয়ান তার ভাইকে।
এরপর থেকে যম ও যমুনার এই ভালবাসার উৎসব ভাইফোঁটা।
যমরাজ তার দিদি যমুনাকে বর চাইতে বলেন তার নিজের কাছে ভাইফোঁটার উপহারস্বরূপ
তখন যমুনা, ভাই এর কাছে প্রতিজ্ঞা চাইলেন যে, যম প্রতি বছর কার্ত্তিক মাসের শুক্লপক্ষ তিথিতে। যমুনার কাছে ফোঁটা নিতে আসবেন এবং যমুনা নিজের হাতে তাকে বিভিন্ন পদ রেঁধে খাওয়াবেন।
পাশাপাশি যমুনা, কামনা করেন যে, যে দিদি বা বোনেরা, এই শুভদিনে ভাইদের কপালে ফোঁটা দেবে এবং নিজে হাতে রান্না করে ভোজন করাবে, তাদের কখনও যমের ভয় থাকবেনা।
এছাড়া যমুনার জলে স্নান করলে নরক যাত্রা থেকে নিজেকে মুক্ত করা যায় বলেও প্রচলিত বিশ্বাস।
যম পাশাপাশি এমন প্রতিজ্ঞাও করেছিলেন যে দাদা বা ভাইরা দিদি বা বোনকে তিরস্কার করবে, বা অন্যায় করবে তার সঙ্গে, যমরাজ তাকে এসে যমপুরীতে নিয়ে যাবে।
আবার ভাই যদি, যমুনার জলে স্নান করে, সূর্যদেবকে অর্ঘ্য নিবেদন করে, তাহলে তাঁর স্বর্গলাভ সুনিশ্চিত
তাই ভাতৃ দ্বিতীয়ার দিন যমকে সন্তুষ্ট করার জন্য ওনেক ভাই বোন যমুনার জলে স্নান করে।