প্রতীকী চিত্র
বাঙালি শুধু আলোর উৎসব দীপাবলিই উদযাপন করে না, কালীপুজোও উদযাপন করে ভক্তিভরে। কার্তিক মাসে অমাবস্যার রাতে হয় এই পুজো। তার পরে মায়ের ভোগপ্রসাদ নিতে মানুষের ঢল নামে মন্দিরে মন্দিরে। কিন্তু জানেন কি, মা ভবতারিণী থেকে আদ্যাশক্তি কালী বা তারা মা– রাজ্যের নানা প্রান্তে ছড়িয়েছিটিয়ে থাকা কালীক্ষেত্রগুলিতে কী কী নিবেদন করা হয় ভোগ হিসেবে?
দক্ষিণেশ্বর- শ্রীরামকৃষ্ণের স্মৃতিবিজড়িত দক্ষিণেশ্বরে পুজো ঘিরে থাকে হরেক আয়োজন। কালীপুজোয় মায়ের অন্নভোগ হিসাবে দেওয়া হয় ভাত ও ঘি-ভাত। সঙ্গে পাঁচ রকমের তরকারি, পাঁচ রকম ভাজা ও পাঁচ রকমের মাছ। পরিচিত সবজি দিয়ে ভাজা ও তরকারি হয়। কোনও বাঁধাধরা নিয়ম নেই। পোনা, পার্শে, কই, চিংড়ি, রুই, কাতলা— যে রকম পাওয়া যাবে বাজারে, সে রকমই। সঙ্গে চাটনি, পরমান্ন (পায়েস) ও পাঁচ রকমের মিষ্টি। বিকেলের ভোগ ‘বৈকালিক’-এ দেওয়া হয় হরেক রকম ফল। মন্দিরের রান্নার দায়িত্বে রয়েছেন নিরঞ্জন মিশ্র। গত ২৫ বছর ধরে তিনিই দক্ষিণেশ্বরে মায়ের রান্নায় নিয়োজিত। এক সময়ে পশুবলি হত এই মন্দিরে। বহুকাল হল বলি বন্ধ। মাংস থাকে না মায়ের খাদ্যতালিকায়।
প্রতীকী চিত্র
তারাপীঠ- কালীপুজোতে মাকে দেওয়া হয় রাজকীয় ভোগ। সকালে একপ্রস্ত অন্নভোগ। তাতে থাকে পোলাও, খিচুড়ি এবং সাদা অন্ন। সঙ্গে পাঁচ রকম ভাজা, তিন রকম তরকারি। চারাপোনা, কাতলা, রুই-সহ বিভিন্ন মাছের ভোগ থাকে। তান্ত্রিক মতে নিবেদিত বলির পাঁঠার মাংস কারণবারি সহযোগে নিবেদিত হয়। আর থাকে পায়েস, চাটনি, দই, এবং পাঁচ রকম মিষ্টি। রাতে খিচুড়িই প্রাধান্য পায়। চাল-ডাল মিলিয়ে প্রায় দেড় কুইন্টাল রান্না হয় ১০টি বড় হাঁড়িতে। থাকে করলা, বেগুন, আলু– এমন সাধারণ পাঁচ রকম সবজির ভাজা, তরকারি, শোল মাছ পোড়া, ও বলি-দেওয়া পাঁঠার মাংস। সঙ্গে পাত্রে থাকে কারণবারি। মন্দির কর্তৃপক্ষ যেমন ভোগ নিবেদন করেন, তেমনই ভক্তরাও তাঁদের ইচ্ছেমতো সবজি,মাছ, মাংসের ভোগ নিবেদন করেন তারা মাকে।
বংশপরম্পরায় তারাপীঠ মন্দিরের ভোগ রান্না করছে ময়ূরেশ্বর দক্ষিণগ্রামের কয়েকটি পরিবার। তাঁদের সঙ্গে থাকেন তারাপীঠের মন্দিরের সদস্যরা। কালীপুজোর ভোগের রান্না করেন জনা পনেরো জন মিলে। ভোর থেকে দুপুরের ভোগ রান্না শুরু হয়। আর দুপুরের পরেই শুরু রাতের ভোগের রান্না। ভোগগৃহ, নাটমন্দিরে বসে প্রসাদ খান সহস্রাধিক ভক্ত। আরও অনেকে প্রসাদ নিয়ে বাড়িতে গিয়ে খান।
প্রতীকী চিত্র
কালীঘাট – এই শক্তিপীঠে নিত্য কালীপুজোর সঙ্গে লক্ষ্মীপুজোও করা হয়। নিত্যপুজোর ভোগে নানা পদের কোনও হেরফের হয় না। শুধু পরিমাণে বেশি ভোগ দেওয়া হয়। পুজোর দিন যে পালাদার ভোগের দায়িত্বে থাকেন, সব খরচ তাঁর উপরেই বর্তায়। কালীঘাট মন্দিরে প্রায় ৬০০ সেবায়েত রয়েছেন। কালীপুজোর দিন দায়িত্বপ্রাপ্ত পালাদার-সহ আরও প্রায় শ’দেড়েক সেবায়েত ভোগ দেন। অমাবস্যা তিথি শুরু হওয়ার আগে মা কালীকে একপ্রস্ত ভোগ দেওয়া হয়। তাতে থাকে শুক্তো, পাঁচ রকমের ভাজা (আলু, বেগুন, পটল, উচ্ছে অথবা করলা, ও কাঁচকলা), পোলাও, তিন রকম মাছের পদ (রুই, ইলিশ, চিংড়ি), কচি পাঠার মাংস, চাটনি (খেজুর-আমসত্ত্ব-আনারস) ও পায়েস, পান ও জল।
প্রতীকী চিত্র
কঙ্কালীতলা- বোলপুরে কোপাই নদীর তীরে কঙ্কালীতলা মন্দির। সতী পীঠের অন্যতম এই পীঠে মায়ের কাঁকাল, অর্থাৎ কোমরের হাড় পড়েছিল বলে কথিত। আবার ৫১ পীঠের শেষ পীঠ হল কঙ্কালীতলা। এখানে মহাকালী রূপে পূজিত হন মা। দুপুরে অন্ন ভোগে মাকে দেওয়া হয় পাঁচ রকমের ভাজা, ডাল, ফ্রায়েড রাইস, বাঁধাকপির তরকারি, চাটনি ও পায়েস।