Kashipur Rajbari Durga Puja

কুলদেবী কার দখলে, যুদ্ধ বাধে লক্ষণ সেন ও রাজা কল্যাণ শেখরের

পঞ্চকোট রাজবাড়িতে দেবী পূজিতা হন ষোড়শী রূপে। অর্থাৎ ১৬ দিন ১৬ টি রূপে চলে পুজো। অষ্টমীর দিন শ্রীনাথ মন্ত্র পাঠ করা হয়, যা অতি প্রাচীন ও গুপ্তমন্ত্র।

Advertisement

আনন্দ উৎসব ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১২:০০
Share:

পুরুলিয়ার কাশীপুর রাজবাড়ি

পঞ্চকোট রাজপরিবারের দুর্গা রাজরাজেশ্বরী রূপে পূজিতা। পুরুলিয়ার কাশীপুর রাজবাড়ির এই কুলদেবীর পুজো কয়েকশো শতক পুরোনো। পরিবারের রাজকন্যা মাহেশ্বরী দেবীর পুত্র আনসুল রাজোয়াট জানালেন তাঁদের পারিবারিক ইতিহাস আর পুজোর সাতকাহন।

Advertisement

রাজপরিবারের উত্তরসূরীর কথায়, "রাজা বল্লাল সেনের মেয়ে সাধনাকে বিয়ে করে ফিরছিলেন কাশীপুরের তৎকালীন রাজা কল্যাণ শেখর। যৌতুক হিসেবে সঙ্গে ছিল একটি কালো ঘোড়া এবং রাজ তরবারি। বাপের বাড়িতে কুলদেবী শ্যামারূপার নিত্যপুজো করতেন সাধনা। তাই বিয়ের পরে তিনি বায়না ধরেন শ্যামারূপাকেও নিজের সঙ্গে শ্বশুরবাড়ি নিয়ে যাবেন। বল্লাল সেন তাতে অনুমতি দেন। বল্লাল সেনের ছেলে লক্ষণ সেন কুলদেবীকে নিয়ে চলে যাওয়ার খবর পেয়ে ক্ষুব্ধ হন। কুলদেবীকে ফিরিয়ে আনতে কাশীপুরের দিকে রওনা দেন তিনি। তা নিয়েই যুদ্ধ বাধে রাজা কল্যাণ শেখরের সঙ্গে। সেই সময়ে কুলদেবীকে একটি গুহার মধ্যে রাখেন লক্ষ্মণের দিদি সাধনা। যুদ্ধে হেরে যান লক্ষণ সেন। এ দিকে গুহা থেকে কুলদেবীকে নিতে গিয়ে সাধনা দেখেন দেবী সেখানে স্থির হয়ে গিয়েছেন। সাধনা তখন সেখানেই প্রতিষ্ঠা করেন কল্যাণেশ্বরী মন্দির। আর দেবীর নির্দেশ মতো কাশীপুর ফিরে যান তাঁরা স্বামী-স্ত্রী। তার পরে চর্তুভুজা মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন, নাম হয় রাজরাজেশ্বরী।"

রাজপরিবারের উত্তরসূরী আনসুলের কথায়, "আমাদের পরিবারের ইষ্টদেবতা শ্রীরামচন্দ্র। রামচন্দ্র যেমন রাবণ বধের জন্য কৃষ্ণাষ্টমীতে পুজো আরম্ভ করে দশমীতে শেষ করেছিলেন, ঠিক সেই নিয়ম মেনে এখানেও দেবী পূজিতা হন ষোড়শী রূপে। অর্থাৎ ১৬ দিন ১৬টি রূপে পুজো হয় দেবীর। অনেকে একে ষোড়শ পর্বের পুজোও বলেন। এই পুজোর বিশেষত্ব হল দেবী যেহেতু এখানে প্রতিষ্ঠিত, কাজেই বেল্লীবরণ হয় না। অষ্টমীর দিন শ্রীনাথ মন্ত্র পাঠ করা হয়, যা অতি প্রাচীন ও গুপ্তমন্ত্র। অষ্টমীর দিন দেবী মন্দিরে মায়ের পায়ের ছাপ পড়ে। তবে তা সকলকে দেখতে দেওয়া হয় না। মায়ের পায়ের ছাপের সিঁদুর দশমীর দিনে সকলকে তিলক হিসেবে পরানো হয়। রাজবাড়িতে কোনও বলি প্রথার প্রচলন নেই।"

Advertisement

বর্তমান প্রজন্ম আনসুল রাজোয়াটের তত্ত্বাবধানেই এখন পুজো হয় রাজবাড়িতে। তাঁর কথায়, "পুজোর চার দিন এক অন্য মহিমায় সেজে ওঠে কাশীপুর রাজবাড়ির মন্দির। সারা বছর বহিরাগত দর্শনার্থীদের প্রবেশের অনুমতি না থাকলেও পুজোর সপ্তমী থেকে দশমী রাজবাড়ির দ্বার খুলে দেওয়া হয় জনসাধারণের উদ্দেশ্যে। পুজোর চার দিন এ রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে মানুষ আসেন। এ ছাড়া ঝাড়খণ্ড, বিহার থেকেও প্রচুর মানুষ আসেন এই পুজো দেখতে।"

(এই মন্দির সম্পর্কে প্রচলিত কাহিনিতে জীবন যাপন নিয়ে যে দাবি করা হয়ে থাকে, তা নিয়ে আনন্দবাজার অনলাইন দায়ি নয়। )

এই প্রতিবেদনটি 'আনন্দ উৎসব' ফিচারের একটি অংশ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement