সব্যসাচীর বাড়ি
এই তো সেদিন হাউজ ওয়ার্মিং পার্টি দিল সুদীপা। আমাদের ইঞ্জিনিয়ার্স ক্লাবের সকলকেই নিমন্ত্রণ জানিয়েছিল। ওদের আবাসনটা বেশ বড়। পনেরো তলায় আঠারশো বর্গফুটের ফ্ল্যাট নিয়েছে। সুইমিং পুলটা ঠিক পুবদিকের ছোট ব্যালকনিটার নীচে। ফুরফুরে হাওয়া আসে। রাতের সময় ওয়ার্ম লাইট জ্বলে পুলের ধারে। অসাধারণ লাগে। বসার ঘরটা বেশ বড়। শুনলাম শুধু অন্দরসজ্জার খরচ পড়েছে ৩০ লাখ টাকা। আমরা তো সবাই বলছিলাম, ‘দু’জনের রোজগার বলেই সম্ভব!’
— এই নন্দিনী, সুদীপার বরটা যেন কোথায় চাকরি করে রে?
— বন্ধন দা'র তো গারমেন্টস–এর ব্যবসা। পারিবারিক। শুনেছি অনেক টার্নওভার।
— শুধুই কী টার্নওভার রে! ওই রকম বাড়ি সাজাতে হলে টেস্ট লাগে টেস্ট।
সোনালি বর্ডার দেওয়া সাদা চায়ের কাপে গ্রিন টি–তে চুমুক দিতে দিতে সবাইকে চমকে দিল সুস্মিতা! কল্প–গল্পের এই সুস্মিতার বক্তব্য এই সময়ে নিঃসন্দেহে বেশ প্রাসঙ্গিক। আপনার বাড়ির অন্দরসজ্জা আসলে আপনার অন্তরের সৃজনশীলতারই প্রতিচ্ছবি। সেই সৃজনবোধ যদি যথাযথ হয় তা হলে যে কোনও বাড়িই রাজকীয় রূপ নেবে!
সম্প্রতি নেটদুনিয়ায় ভাইরাল হয়েছে পোশাকশিল্পী সব্যসাচীর অন্দরসজ্জার কালেকশন। ‘সব্যসাচী’ নামটি নিয়ে আলাদা করে পরিচয় দেওয়ার অবকাশ না থাকারই কথা। বলিউডের নামজাদা সেলিব্রিটি– প্রিয়ঙ্কা, দীপিকা থেকে শুরু করে অনেকেই তাঁর বিয়ের দিন সেজে উঠেছিলেন রাজকন্যার মতো করে। যদি বলা হয়, সব্যসাচী ছাড়া বলি পাড়ার অভিনেত্রীদের বিয়ে জমে না, তা হলে সে কথা কোনওক্রমেই অতিরঞ্জিত করে বলা হবে না! সেই মানুষটি এবার অন্দরসজ্জার জন্যেও নিয়ে এসেছেন অভিনব ভাবনা। সেই ভাবনায় প্রতিফলিত হয়েছে তার টেক্সটাইল, ফ্যাশন ও আর্টের প্রতি ভালবাসা ও সৃজন বোধ। পুজোর আবহে যখন আপনি নিজের স্বপ্নের বাড়ির অন্দরসজ্জা নিয়ে চিন্তিত, তখন চোখ রাখতে পারেন সব্যসাচীর এক্সক্লুসিভ কালেকশনে।
সাজানো ঘর
ভিন্টেজ:
সিঁড়ি দিয়ে উঠেই সুবিস্তৃত বসার ঘর অপানার। সেই সিঁড়িতে সেগুন কাঠের রেলিং আপনার অতিথিদের মনে ঐতিহ্যের ছোঁয়া লাগাবে। প্রবেশ পথ ছাড়িয়ে অতিথিরা যখন বসার ঘরে আসবে তখন তারা ইতিহাসের সম্মুখীন হবে নতুন করে। সেই জায়গায় বসে যখন তারা বারান্দার দিকে তাকাবে তাদের চোখ ভরে উঠবে সবুজে।
এক টুকরো প্রকৃতি:
বাড়ির অন্দরসজ্জার প্রাথমিক শর্তে মিশে থাকবে প্রকৃতি। অন্তরমহলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকবে প্রাণবন্ত সবুজ গাছ। বারান্দা বা সামনের ছোট বাগান জুড়ে থাকবে একরাশ সবুজ সতেজতা। যেখানে উৎসবের আয়োজন হবে, মাটির গন্ধ বুকে নিয়ে।
সতেজ সকাল:
রান্নাঘরের পাশেই হবে প্রাতঃরাশ ও ডাইনিংয়ের জায়গা। এখানে বাজবে অন্য সুর। বিজ্ঞান অনুযায়ী প্রাতরাশ হওয়া উচিত রাজার মতো, তাই বাড়ির এই বিশেষ জায়গাটির সাজ হবে রাজকীয়।
শান্তিপূর্ণ যাপন:
সাজসজ্জা থেকে জীবনযাপন, সব কিছুতেই আরাম খোঁজে মন। সারাদিনের ক্লান্তি কাটাতে ঘুমের থেকে শান্তি বোধহয় আর কিছুতেই নেই। তাই শয়নকক্ষ জুড়ে ছড়িয়ে থাকুক আরামের টুকরো ছবি। বিছানার টান টান মসলিনের চাদর, পাশে রাখা ছোট্ট ট্রাঙ্ক, একটা গাছ, দেওয়াল জোড়া উষ্ণতা ঘুম নিয়ে আসুক চোখে।
আদতে ডিজাইনার সব্যসাচী মুখোপাধ্যায়ের কলকাতার বাড়ির অন্দরসজ্জা এরকমই। শিল্পী নিজের বাড়ির অন্দরসজ্জায় রেখেছেন এরকমই ভিন্টেজ ছোঁয়া। অপনারাও অনুপ্রাণিত হতে পারেন।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।