আপাতত ঝড়-ঝঞ্ঝা কাটিয়ে বাঙালি রোদের মুখ দেখেছে। হেঁসেলে এসে পড়েছে সূর্যের আলো। আর ঠিক সেই সঙ্গেই ভূতচতুর্দশী, দীপাবলি এবং কালীপূজার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে বাঙালি। কালীপুজো অনেক জায়গাতেই বারোয়ারি হলেও, ভূতচতুর্দশী বাঙালির চিরন্তন ঐতিহ্য।
ভূতের সঙ্গে বাঙালির সম্পর্ক অনেক বছরের। আর তাই চতুর্দশীর প্রাক্কালে চোদ্দ শাক খেয়ে এবং চোদ্দ প্রদীপ জ্বালিয়ে, ভূতচতুর্দশী উদযাপনের হিড়িক দেখা যায় সকলের মধ্যে। কিন্তু শুধুই কি পৌরাণিক তত্ত্ব? নাকি বছরের এই সময় চোদ্দ শাক খাওয়ার পিছনে লুকিয়ে রয়েছে অন্য কোনও কারণ? এখানে রইল তার হদিস। জেনে নিন চোদ্দ শাকের অপার পুষ্টিগুণের কথা।
অনুশ্রী ডায়েট অ্যান্ড ক্লিনিকের কর্ণধার অনুশ্রী ভৌমিকের মতে, এই ১৪ রকম শাকে রয়েছে নানা রোগের সঙ্গে মোকাবিলা করার ক্ষমতা। শুধু তাই নয় কালীপুজোর সময় থেকেই হালকা শীতের আমেজ শুরু হয়। তাই ঋতু পরিবর্তনের সময় নানা রোগ শরীরে দানা বাঁধে। যা প্রতিরোধে এই শাকগুলি বিশেষভাবে কার্যকরী।
আয়ুর্বেদ শাস্ত্র মতে, এই সময় বিভিন্ন ধরনের শাক পাতা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। কিছু শাক বেশ তিটকুটে, যা সচরাচর খাওয়া হয় না। কিন্তু হেমন্তকাল এমন একটি ঋতু, ঠিক তার পরেই শীতের প্রবেশ। তাই শরীরকে সুস্থ রাখতে এবং রোগের সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য আবহাওয়া পরিবর্তনের এই সময়টায় সব রকম শাক খাওয়ার রীতি প্রচলিত রয়েছে। দেখে নেওয়া যাক, কোন শাকে রয়েছে কী কী গুণ।
পুঁই শাক- যাদের ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যা রয়েছে, তাদের পুঁইশাক খাওয়ায় বিধি নিষেধ রয়েছে। কিন্তু এই পুঁইশাক ক্যালরি সমৃদ্ধ। প্রতি ১০০ গ্রামে ১০ গ্রাম ক্যালরি রয়েছে। কম ক্যালরি থাকার জন্য, ডায়াবেটিস ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে। ভিটামিন বি-সিক্স ও ফলিড উপস্থিত থাকার জন্য, অ্যানিমিয়া রোগীদের পক্ষে খুবই উপকারী এই শাক।
পালং শাক - প্রতি ১০০ গ্রামে কুড়ি গ্রাম ক্যালরি রয়েছে। এছাড়া প্রোটিন ফ্যাক্ট-সহ আরও খনিজ রয়েছে। ক্যালসিয়াম, আয়রন, জিংক থাকার জন্য এই শাক খুবই উপকারী। এই সব দৃষ্টিক্ষমতা বাড়ায় এবং হাড় শক্ত করতে সাহায্য করে।
লাল শাক- প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই থাকার জন্য, চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
মেথি শাক - মেথিতে প্রচুর পরিমাণ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের উপাদান রয়েছে, তাই মেথি শাক ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য খুবই উপকারী।
ছোলা শাক- রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে এই শাক শরীরকে সুস্থ রাখে।
নিম- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ ছাড়াও নিমের জীবনদায়ী গুণ ত্বকের যে কোনও সমস্যার সমাধান করে।
সর্ষে শাক - লিভারের সমস্যার জন্য খুবই উপকারী এই শাক। এ ছাড়াও চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়।
শুসনি শাক- অনিদ্রাজনিত সমস্যায় যাঁরা ভোগেন, শুসনি শাক তাঁদের জন্য খুব উপকারী।
ঘেটু শাক- ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে এই শাক।
সেলুকা শাক- হার্টের সমস্যা কমায় এই শাক। মায়েদের মাতৃদুগ্ধ উৎপাদনের সহায়ক।
হিঞ্চে শাক- পেটের সমস্যা দূর করে, গ্যাস এবং অম্বলের সমস্যা মেটায়। এ ছাড়া হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে, ত্বকের সমস্যায় সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
লাউ শাক- শক্তিবর্ধক ও দুর্বলতা কমানোর জন্য উপকারী লাউ শাক।
কুমড়ো শাক - দুর্বলতা দূর করতে সাহায্য করে এই শাক।
গুলঞ্চ শাক- এই শাক উচ্চ রক্তচাপজনিত সমস্যায় ওষুধের কাজ করে।