করোনা আবহে দীর্ঘদিন লকডাউন থাকায় পার্লার গিয়ে ত্বকের পরিচর্যার সুযোগ মেলেনি। আনলন পর্বে সব খুলে গেলেও অনেকেই সংক্রমণের ভয়ে এসব জায়গায় গিয়ে ত্বক পরিচর্যা করতে চাইছেন না। কিন্তু তাই বলে কি ত্বক রুক্ষ-শুষ্ক-অবহেলিত থেকে যাবে? তাছাড়া দুর্গা পুজোর আর হাতে গোনা কয়েকটা দিন বাকি। তার আগেই কিভাবে পেয়ে যাবেন উজ্জ্বল কোমল ত্বক? মাত্র একটি প্রাকৃতিক উপাদানের উপর নির্ভর করে ঘরেই সেরে ফেলুন ত্বক পরিচর্যা।
কি সেই উপাদান? ফুল। ফুলের পাপড়ি বা তার নির্যাস থেকে তৈরি এসেনশিয়াল অয়েলের সাহায্যে বাড়িতে খুব সহজেই ত্বকের যত্ন নেওয়া সম্ভব। ফুল দিয়ে ত্বক পরিচর্যার বিষয়ে রূপ বিশেষঞ্জ শর্মিলা সিং ফ্লোরা জানালেন “যদি সতেজ ফুল পাওয়া যায় তাহলে তা দিয়ে খুব ভাল ভাবেই ত্বক পরিচর্যা করতে পারি। তৈলাক্ত ত্বকের ক্ষেত্রে ফুলের নির্যাসের সঙ্গে কর্পূর মিশিয়ে ব্যবহার করলে ভাল ফল মিলবে।” তিনি আরও বলেন “ বর্তমান ট্রেন্ডে ফুল দিয়ে ত্বক পরিচর্যা ইন। তবে সম্পূর্ণ ভাবে ত্বকের পরিচর্যা করাতে হলে মনের ভয় কাটিয়ে পুজোর আগে একবার পার্লারে যেতেই হবে।”
আরও পড়ুন: গরম জামা রোদে দেওয়া মানেই পুজো আসছে
গোলাপ: পছন্দের ফুলের তালিকায় কম-বেশি অনেকেরই প্রিয় গোলাপ। গোলাপ যে নিজেই সুন্দর তাই নয়। এটি ব্যবহার করে আপনিও পেতে পারেন গোলাপের মত কোমল, উজ্জ্বল ত্বক। মূলত শুষ্ক ত্বকের কোমলতা ফেরাতে, জৌলুস ফেরাতে গোলাপ জলের জুড়ি মেলা ভার। এছাড়া বলিরেখা, ত্বকের দাগ, স্ট্রেচ মার্ক দূর করতে গোলাপ জলের ব্যবহার হয়। গোলাপ জলের ব্যবহার শুষ্ক ত্বককে হাইড্রেট করতে সাহায্য করে।
শুষ্ক ত্বকের কোমলতা ফেরাতে, জৌলুস ফেরাতে গোলাপ জলের জুড়ি মেলা ভার।
কী ভাবে ব্যবহার করবেন?
তুলোর প্যাড অথবা বলের মধ্যে কিছুটা গোলাপ জল নিয়ে ভাল করে ত্বকে লাগিয়ে নিন। চোখের নিচে যদি ফোলা ভাব থাকে সেখানেও খুব আলতো করে গোলাপ জল লাগিয়ে নিন। এতে চোখের নিচের ফোলা ভাব কমে যায়। আপনার ত্বক যদি বেশি মাত্রায় শুষ্ক হ্য়, ফেস প্যাকের সঙ্গে গোলাপ মিশিয়ে লাগান। ভাল ফল পাবেন।
আরও পড়ুন: ফটো ফ্রেম বা পোশাক, পুজোর উপহারে ‘ব্যক্তিগত ছোঁয়া’ কী ভাবে
গাঁদা: ঠিকই পড়ছেন। গাঁদাফুল হয়ে উঠতে পারে আপনার ত্বকের পরম বন্ধু। এর মধ্যে থাকা অ্যান্টিসেপ্টিক উপাদান যেকোনো রকমের ছোটখাটো কাটা অথবা পোড়া দাগ সারিয়ে তুলতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট যা ঝুলে যাওয়া ত্বক ঠিক করতে সক্ষম। এছাড়া ত্বকের মরা কোষ দূর করে তাকে উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে।
ত্বকের মরা কোষ দূর করে তাকে উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে গাঁদা।
কী ভাবে ব্যবহার করবেন?
গাঁদা ফুলকে আপনি স্ক্রাব, ফেস-ওয়াস কিংবা ফেস প্যাক হিসাবে ব্যবহার করতে পারেন। কিছুটা টক দই, গোলাপ জল এবং লেবুর রসের সঙ্গে গাঁদার পাপড়ি মিশিয়ে ফেস প্যাক হিসাবে ব্যবহার করুন। পাপড়ি ব্যবহার করতে না চাইলে আপনি এই ফুলের নির্যাস থেকে তৈরি এসেনশিয়াল অয়েল এর সঙ্গে গোলাপ জল মিশিয়ে ত্বকে প্রয়োগ করতে পারেন। এছাড়া গাঁদা ফুলের পাপড়ি ব্যবহার করে চা বানিয়ে খেলে তা খুব ভাল ডিটক্স করার কাজ করে।
আরও পড়ুন: করোনাসুরকে হারাতে হবে, ‘ইমিউনিটি’ বাড়াতে কী কী খাবেন
জুঁই: এই ফুলের মন জুড়ানো মিষ্টি গন্ধের সঙ্গে ত্বকের নানা উপকারেও এর জুড়ি মেলা ভার। এর নির্যাসে তৈরি এসেনশিয়াল অয়েল ত্বকের রুক্ষ এবং শুষ্ক ভাব দূর করতে সাহায্য করে। এটি যে কোনও ধরনের ত্বকের জন্য কার্যকর। সংবেদনশীল ত্বকের ক্ষেত্রেও এটি ব্যবহার করা যায়। এর মধ্যে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সময়ের আগে ত্বকে বার্ধক্য আসতে দেয় না এবং বলি রেখা প্রতিরোধ করে।
সংবেদনশীল ত্বকের ক্ষেত্রেও জুঁই ফুল ব্যবহার করা যায়।
কী ভাবে ব্যবহার করবেন?
কিছুটা জুঁই এর পাপড়ি থেঁতো করে নিয়ে তাতে এক চা চামচ দুধ এবং বেসন মিশিয়ে ফেস প্যাক তৈরি করে নিয়ে মুখে লাগান। ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। আপনার ত্বক উজ্জ্বল দেখাবে। এছাড়া এর পাপড়ি দিয়ে চা বানিয়েও পান করতে পারেন।
আরও পড়ুন: আদা, ডাল বাটা, কফির গুঁড়ো, রান্নাঘরেই পুজোর পার্লার
ল্যাভেন্ডার: এই ফুলের বহুমুখী গুণের কথা অনেকেই জানি আমরা। ত্বক পরিচর্যার ক্ষেত্রে স্পা এবং পার্লারে এই ফুলের ব্যবহার হয়ে থাকে। ল্যাভেন্ডার অয়েল ত্বকের ওপেন পোরস ঠিক করতে সক্ষম। এছাড়া ব্যাক্টেরিয়া নিধনেও এই অয়েল খুব উপকারী। এর পাপড়ি থেকে থাকা উপাদান ত্বকের দাগ, স্ট্রেচ মার্ক এমনকি এগজিমা-সোরিয়াসিসের মত চর্মরোগ সারাতেও সক্ষম।
ল্যাভেন্ডার অয়েল ত্বকের ওপেন পোরস ঠিক করতে সক্ষম।
কী ভাবে ব্যবহার করবেন?
হাফ চা চামচ ল্যাভেন্ডার অয়েল, এক চা চামচ মধু এবং এক চা চামচ বেকিং সোডা মিশিয়ে ফেস প্যাক বানিয়ে মুখে লাগিয়ে নিন। তারপর ১৫ মিনিট রেখে ঈষদুষ্ণ জলে মুখ ভাল করে ধুয়ে ফেলুন।
যেকোনও ফুলের তৈরি ফেস মাস্ক বা প্যাক মুখে লাগানোর আগে অবশ্যই তা ত্বকের অন্য কোন অংশে অল্প পরিমাণ লাগিয়ে কিছুক্ষণ রেখে দেখুন। যদি কোন রকম অ্যালার্জি দেখা না দেয় তবেই তা সারা মুখে প্রয়োগ করুন। যদি অ্যালার্জি দেখা দেয় তবে যত শীঘ্রই সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।