১. শা ফালে বা শাবালে: এটি সিকিমের একটি জনপ্রিয় খাবার। সাধারণত পাউরুটি দিয়ে তৈরি হয়। মাঝের অংশে মাংস বা বাঁধাকপির পুর ভরা থাকে। তারপর সেই পুর ভরা পাঁউরুটিকে গোল ও অর্ধচন্দ্রাকার আকারে কেটে প্যানে ভাজা হয়। কখনও কড়াইয়ে ডুবো তেলেও ভেজে রান্না করা হয়। সাধারণত চাটনি অথবা ভাজা বার্লি এবং চিজের সঙ্গে খেতে দেওয়া হয়। এটি সিকিমের খাবার হলেও উত্তর বাংলাতেও পাওয়া যায়।
২. শেকুয়া: এটি দার্জিলিঙের একটি বিখ্যাত ‘রাস্তার খাবার’। একে মোটামুটি কাবাব বলা যায়, তবে সে কাবাব নেপালি-ঘরানায় তৈরি। এটি বানানোর জন্য কাঁচা মাংসে বিভিন্ন প্রাকৃতিক মশলা এবং ওষধি পাতা মেশানো হয়। সেই মিশ্রণটিকে কাঠের চূলায় রোস্ট করা হয়। এরপর আদা কুচি, পেঁয়াজ, ধনেপাতা এবং লেবুর রস মিশিয়ে পরিবেশন করা হয়। স্থানীয় বাজারে বা দার্জিলিং ম্যাল-এর পাশে এই বিখ্যাত ‘রাস্তার খাবার’টি পাওয়া যায়।
৩. ছুরপি: দার্জিলিং-এর একটি বিখ্যাত দুগ্ধ-বিশেষ খাবার ছুরপি। এটি অনেকটা চিজ-এর মতো দেখতে। নরম ও শক্ত দু'রকমই হয়। খুব পুষ্টিকর।
৪. ঢিড়ো বা ঢেড়ো: এটি ভুট্টা, গমের আটা, লবণ ও গরম জল এক সঙ্গে সিদ্ধ করে রান্না করা হয়। শেষে গোল গোল মণ্ড করে খেতে দেওয়া হয়। নেপালের স্থানীয় জনসাধারণের কাছে এটি অতি পরিচিত খাবার। বর্তমানে খাবারটি নেপালের ঐতিহ্যবাহী খাবারের তকমা পেয়েছে। উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত লোকেরা একে নিজেদের ঐতিহ্যের অংশ মনে করে নিয়মিত খেয়ে থাকেন।
৫. থাকালি থালি: নেপালের অন্যতম প্রসিদ্ধ খাবার থাকালি থালি। নেপালের স্থানীয় আদিবাসী সম্প্রদায় নেওয়ারিরা এই খাবার খেয়ে থাকেন। থাকালি থালিতে থাকে ভাত, রুটি, পাঁপড় ও ঘি-ডাল, মুলা ভাজি, সরিষা শাক ভাজি, মুরগির ঝোল, ঝাল আচার, পনির, পেঁয়াজ, শসা ও গাজর। এটি উত্তর বাংলাতেও পাওয়া যায়।
৬. সেল রুটি: এটি দেখতে অনেকটা ডোনাট মতো। স্বাদে মিষ্টি। নেপালের অন্যতম জনপ্রিয় খাবার। ময়দার তৈরি এই সেল রুটি কড়া করে ভাজার ফলে বাইরেটা হয় একদম মুচমুচে। ভেতরটা কিন্ত নরম। সেল রুটিতে মাখনকে পুর হিসেবে দেওয়া হয়। নেপালের স্থানীয় জনসাধারণ এটি জলখাবার হিসেবে খান। এর সঙ্গে অনেকে দই দিয়ে তৈরি সস ও সবজি নেন। আবার অনেকে মুরগি অথবা খাসির মাংস দিয়েও খেয়ে থাকেন।
৭. গুন্দ্রুক: নেপালের আরেকটি বেশ জনপ্রিয় খাবার হল গুন্দ্রুক। নেপালি কিছু টক জাতীয় সবুজ পাতা দিয়ে এ খাবার তৈরি করা হয়। গুন্দ্রুক রান্নার জন্য সরিষা, মুলো ও ফুলকপির সঙ্গে এ সব পাতা একটি মাটির পাত্রে এক বা দুই দিন রেখে দেওয়া হয়। এর ফলে সবুজ পাতা গুলির টক ভাব চলে যায়। এর পর গুন্দ্রুক তৈরি করা হয়।
৮. তংবা: তংবা এক ধরনের পানীয়। নেপালীদের কাছে খুব প্রিয় এই পানীয়। একে ভুট্টার শরবত বললেও ভুল হবে না। নেপালের লিম্বু জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী এই পানীয় একটি বাঁশের মগে পরিবেশন করা হয়। সঙ্গে বাঁশের তৈরি স্ট্র থাকে। শীতের সময় নেপালীদের এই পানীয়টি পান করতে দেখা যায়। এটি নেপালের পানীয় হলেও উত্তর বাংলায় পাওয়া যায়।
৯. ইয়োমারি: ইয়োমারি এক ধরনের ভাপা পিঠা। যেখানে চালের গুঁড়ো সেদ্ধ করে মণ্ডর এর মতো করা হয় এবং ভেতরে তিল, নারিকেল, গুড়, দুধ, ঘি এবং আটা দিয়ে তৈরি ধেড়ো বা মোলাসের একটা পুর দেওয়া হয়। এর পর এ গুলিকে ভাপিয়ে খাওয়া হয়। ইয়োমারি শুধুমাত্র মিষ্টি ধরনেরই হয় না। বরং মুরগি, বিভিন্ন ধরনের সবজি এবং মহিষের মাংসের কিমা দিয়েও এটি তৈরি করা হয়। নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে পূর্ণ চাঁদের আলোয় রাত ভর নেওয়ারিদের ‘ইয়োমারি পুন্নি’ উৎসব হয়। এই উৎসবের অন্যতম আয়োজনের মধ্যে থাকে নেচে গেয়ে ইয়োমারি খাওয়া ও চাঁদের বন্দনা করা।
১০. চাটামারি: নেওয়ারিদের আরেকটি জনপ্রিয় খাবার হল চাটামারি। অভিজাত নেওয়ারি পরিবারে এটি প্রায়ই খাওয়া হয়। নানা ধরনের টপিংস ব্যবহার করা হয় এতে। প্রচুর সুগন্ধি ওষধি পাতা, ইয়াক চিজ, মাংসের কিমা এবং ডিম থাকে এই খাবারে। এটি পিৎজার মতো দেখতে। বেস তৈরি করা হয় চালের আটা দিয়ে। ছইলা নামের ঐতিহ্যবাহী নেওয়ারি খাবারটি সাধারণত মহিষের মাংস দিয়ে তৈরি হয়। তবে কখনও কখনও পাঁঠা বা হাঁসের মাংস দিয়েও এটি তৈরি হয়। চূড়া নামের এক ধরনের চালের তৈরি খাবারের সঙ্গে এটি খাওয়া হয়। নেপালি উৎসবের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ খাবার।
১১. তিব্বতী রুটি: সিকিমের মানুষের অন্যতম প্রিয় খাবার হল তিব্বতী রুটি। অলিভ অয়েল দিয়ে এই বিশেষ ধরনের রুটি তৈরি করা হয়। স্বাদে ভিন্নতা আনতে খাবারটিতে পনির দেওয়া হয়।
১২. লাচ্ছি: সিকিমের স্থানীয় মানুষদের কাছে লাচ্ছি খুব জনপ্রিয়। বিকেলের জলখাবার হিসেবে স্থানীয়রা এটি বেশ পছন্দ করেন। অনেকেই গোল মরিচ দিয়ে লাচ্ছি খান জলখাবারে। অনেকে আবার রাতে খাবার খাওয়ার পরেও লাচ্ছি খেয়ে থাকেন।
১৩. সিংকি স্যুপ: গুন্দ্রুকের মতোই বিভিন্ন সবজি দিয়ে তৈরি হয় সিংকি স্যুপ। এটি সিকিমের ঐতিহ্যবাহী খাবারগুলির মধ্যে অন্যতম।
১৪. মালা চিকেন: এটি চিনাবাদাম দিয়ে করা এক ধরনের স্যালাড জাতীয় ঠান্ডা মুরগির মাংসের তৈরি খাবার। সিকিমের স্থানীয় মানুষজনদের কাছে খুবই জনপ্রিয়।