ছিদ্রালংকারের প্রয়োগ বদলে দিতে পারে আপনার ব্যক্তিত্ব
প্রিয়ঙ্কা চোপড়া থেকে মালাইকা অরোরা, সকলেই মেতেছেন এই ছিদ্রালংকারের নেশায়। কিছুদিন আগে নিক জোনস তাঁর কিছু পারিবারিক ভ্রমণের ছবি ভাগ করে নিয়েছিলেন সামাজিক মাধ্যমের পাতায়। যেখানে প্রিয়ঙ্কার নাভিকুণ্ডের অলংকার ছবিগুলোর উত্তাপ বাড়িয়ে দিয়েছিল অনেকখানি।
পৃথিবীর প্রাচীন ইতিহাস খুঁড়লে বোঝা যায়, ত্বক ছেদন করে গয়না পরার এই ঝোঁক নতুন নয়। আফ্রিকা মহাদেশের উপজাতিদের মধ্যে বহু বহু যুগ ধরে এর প্রচলন। তবে এই ত্বক ছেদনের প্রবণতা বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে।
প্রাচীন গ্রামবাংলার আদিবাসীদের মধ্যে নাক-কান-ভুরু, দেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে অলংকার পরার রীতি আছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সঠিক উপায়ে ছিদ্রালংকারের প্রয়োগ বদলে দিতে পারে আপনার ব্যক্তিত্ব। আপনিও ছড়াতে পারেন নীলাভ উষ্ণতা।
তৃতীয় বর্ষের এক কলেজ ছাত্রী আনন্দবাজার অনলাইন-কে বলছেন, ‘ব্যাপারটা বেশ যন্ত্রণার জেনেও লিপ পিয়ার্সিং করাতে গিয়েছিলাম। কিন্তু একটি মুহূর্তের ব্যথা আমার সম্পূর্ণ লুক বদলে দিয়েছে। এখন আয়নার সামনে দাঁড়ালে নিজেকে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী মনে হয়।’
কানের ছিদ্রালংকার
মেয়ে আরাধ্যার জন্মের সময় অভিষেক বচ্চন নিজের কান ছেদন করেছিলেন মেয়ের সঙ্গেই। কারণ, তিনি শিশু কন্যার ব্যথার অনুভূতিটুকু ভাগ করে নিতে চেয়েছিলেন। তাঁর অগুণতি অনুগামীর সংখ্যাই বলে দেয়, এই 'লুক' তাঁকে অনেকটাই মোহময় করে তুলেছিল। পুরুষ-নারী নির্বিশেষে অনেকেই কানের লতি কিংবা নরমাস্থি ছেদন করে গয়না পরেন। এই ফ্যাশন-পথে হেঁটে আপনিও দ্বিগুণ করে তুলতে পারেন নিজের কানের সৌন্দর্য।
নাসিকা ছেদন
কিয়ারা আডবাণীর স্টিল সেপটাম রিং-এর সঙ্গে গাঢ় কাজলের সমন্বয়, মাদকতা মতো নেশা ছড়ায়। রামলীলা ছবিতে দীপিকা পাড়ুকোনের লুক আমরা কেউই ভুলতে পারি না। এ বার পুজোয় নিজেকে তেমন মোহময়ী করে তুলতে বেছে নিতে পারেন নাকের এই অভিনব সজ্জা।
নাভিকুণ্ডের গয়না
শরীরী ভাষার অনেকখানি লেখা থাকে নাভিকুণ্ডেই। তাই নিজের নাভিকে আবেদনময় করে তুলতে বেছে নিন উপযুক্ত ছিদ্রালংকার। বিপাশা বসুর নাভির অলংকার অনেক পুরুষেরই রাতের ঘুম কেড়েছে। সাহসী ক্রপটপের সঙ্গে সঠিক অলংকার আপনার তুমুল উত্তাপ ছড়াতে পারে নিজস্ব চৌহদ্দিতে।
ভ্রু-সজ্জায় ছিদ্রালংকার
নারী-পুরুষ, উভয়েই নিজেদের ভ্রু-যুগলকে আকর্ষণীয় করে তুলতে বেছে নেন ভ্রু-ছিদ্রালংকার। ব্যতিক্রমী কিছু অলংকার বদলে দিতে পারে আপনার চোখের ভাষা। উত্তেজিত করে তুলতে পারে আপনার সঙ্গীটিকে। তাই এবার পুজোয় ভুরু ছেদনই না হয় হয়ে উঠুক আপনার স্টাইল স্টেটমেন্ট!
বক্ষছেদন
বক্ষদেশের আবেদন বৃদ্ধি করতে অনেকেই বেছে নিচ্ছেন বক্ষছেদক অলংকার। শরীরী মৌতাতকে দ্বিগুণ করে তুলতে এই পদ্ধতির কোনও জুড়ি নেই। স্তনবৃন্ত থেকে বক্ষ বিভাজিকা, বুকের সব অংশেই বক্ষালংকার ব্যবহার করা যেতে পারে। পুরুষের ক্ষেত্রেও এই সজ্জা সমানভাবে প্রযোজ্য।
গোপনাঙ্গ-ছেদক অলংকার
এই প্রবণতাটি এখনও মূলত বিদেশে বেশি প্রচলিত। তবে আজকাল এদেশেও নারীরা গোপনাঙ্গের বিভিন্ন স্থানে অলংকার পরতে পছন্দ করছেন। সমীক্ষা বলে, গোপনাঙ্গের অলংকার যৌন সুখানুভূতিও বাড়িয়ে দেয়। চূড়ান্ত আকর্ষণীয় করে তোলে আপনার সঙ্গীকে। তবে এখনও আমাদের দেশে এই অতি সাহসী প্রবণতা সম্পূর্ণভাবে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি।
নারী পুরুষ, উভয়ই শরীরের আরও অনেক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে ছেদক অলংকার পরেন। জিভ ও ঠোঁট তার মধ্যে অন্যতম। বিশেষজ্ঞ জলি চন্দের মতে, শরীর ছেদনের আগে বেশ কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। নইলে ছেদক-অংশ থেকে শরীরে সংক্রমণ ছড়াতে পারে। শরীরে ছিদ্র করার প্রায় আট-ন'মাস পর্যন্ত বিভিন্ন অ্যান্টি-সেপটিক লাগিয়ে ওই বিশেষ অংশটির যত্ন নেওয়া উচিত। অলংকারের উপকরণ মরচে নিরোধক ইস্পাত হওয়াই একান্ত কাম্য ও জরুরি। সমস্ত রকম সতর্কতা মেনে ছিদ্রালংকার পরতে পারলে আপনিও লিখতে পারেন নবতম এক সাজের সংজ্ঞা!
এই প্রতিবেদনটি 'আনন্দ উৎসব' ফিচারের একটি অংশ।