সারা ভারতে নানা নামে প্রচলিত ভাইফোঁটা। পশ্চিমবঙ্গে যা ভাইফোঁটা, উত্তর ভারতে তা ‘ভাইদুজ’, নেপালে ‘ভাইটিকা’, বিহারে ‘ভাইদুতিয়া’, গুজরাতে আবার ‘ভাইবিছিয়া’।
দুর্গা পুজো , কালী পুজোর পরে এই দিনটার জন্যই বছরভর অপেক্ষায় থাকে বোনেরা। ভাইয়ের কপালে চন্দন বা ঘিয়ের ফোঁটা দিয়ে মঙ্গল কামনা, তার পর সবাই মিলে জমিয়ে খাওয়াদাওয়া! তার আনন্দই যে আলাদা!
সূর্য দেবের দুই পুত্র, মনু ও যম। এক কন্যা যমুনা। কার্তিক মাসের শুক্লা দ্বিতীয়া তিথিতে যমুনা তার ভাই যমকে ফোঁটা দিয়ে তার দীর্ঘায়ু কামনা করে। সেই থেকেই শুরু ভাইফোঁটা। এই কাহিনিই প্রচলিত বাঙালির ঘরে। ‘ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা/ যম দুয়ারে পড়ল কাঁটা/ যমুনা দেয় যমকে ফোঁটা/ আমি দিই আমার ভাইকে ফোঁটা।’ পুরাণ মতে, যমুনা যমকে ফোঁটা দেওয়ার সময় এই ছড়াই উচ্চারণ করেছিলেন।
সেই প্রথা মেনে আজও বাঙালি বাড়িতে ‘ভাইফোঁটা’র উৎসব পালন করা হয়। ভাইয়ের কপালে ফোঁটা এঁকে আজও এই পংক্তিগুলোই আওড়ায় বোনেরা। সব বিপদ থেকে তার ভাই যেন নিরাপদে থাকে।
তবে, পুরাণ ঘাঁটলে উঠে আসে ‘ভাইফোঁটা’র আর এক কাহিনি। নরকাসুরকে বধ করে বোন সুভদ্রার কাছে যান শ্রীকৃষ্ণ। সুভদ্রা তাঁকে কপালে টিকা দিয়ে অভ্যর্থনা জানান। অনেকের মতে, এই ঘটনাই ‘ভাইফোঁটার নেপথ্যে।
এ নিয়ে প্রচলিত আছে আরও একটি কাহিনিও। পুরাণ মতে, বলিরাজার কাছে বন্দি হন শ্রী বিষ্ণু। বলিরাজার থেকে বিষ্ণুকে উদ্ধার করতে না পেরে দেবতারা মা লক্ষ্মীর শরণাপন্ন হন। মা লক্ষ্মী বলিরাজাকে আমন্ত্রণ জানিয়ে ফোঁটা দেন, উপহার হিসাবে শ্রী বিষ্ণুর মুক্তি চান। এই কারণেই ‘ভাইফোঁটা’র সঙ্গে উপহার দেওয়ার প্রথাও চলে আসছে।
ভাইফোঁটা’-র ইতিহাসে নন্দীবর্ধন ও অনুসূয়ার কাহিনিও সমান জনপ্রিয়। অনেকেই মনে করেন, এখান থেকেই ভাইফোঁটা পার্বণে সামিল হয়েছে। চতুর্দশ শতাব্দীতে আবিষ্কার হয় তালপাতার এক পুঁথি। তার রচয়িতা হিসাবে লেখা ছিল আচার্য সর্বানন্দসুরীর নাম। এই পুঁথি থেকে জানা যায়, ভাইফোঁটার এই কাহিনি।
জৈন ধর্মের প্রচারক মহাবীরের প্রয়াণের পর তার সঙ্গী নন্দীবর্ধন শোকে আহার-নিদ্রা ত্যাগ করেন। ভাইয়ের এই অবস্থা দেখে বোন অনসূয়া তাঁকে বাড়িতে নিয়ে আসেন।
কার্তিক মাসের শুক্ল পক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে অনসূয়া নানা রকম রান্না করে ভাইকে খেতে অনুরোধ করেন। নন্দীবর্ধনের কপালে রাজতিলক এঁকে দেন। বোনের অনুরোধ ফেলতে পারেননি নন্দীবর্ধন।
এই ভাবে অনসূয়া প্রাণ রক্ষা করেন ভাইয়ের। সেই থেকে কার্তিক মাসের শুক্ন পক্ষের দ্বিতীয়ায় বোনেরা ভাইফোঁটা দিয়ে ভাইয়ের দীর্ঘায়ু কামনা করে আসছেন বলে বিশ্বাস।