আপনাকে যদি ‘মিস মাচা’ বলি, রাগ করবেন?
এই রে! রাগ নয়। একটু ঝগড়া করে নেব। আসলে ‘মাচা’ কথাটা নিয়ে আমার ভীষণ আপত্তি রয়েছে। লোকে বলে, তাই বলি।
এত দিনেও ‘মিস’ তকমাটা ছাড়লেন না!
আরে, ওটা আমার সারনেম হয়ে গিয়েছে! যখন আমার মেয়ে হয়েছিল তখন আমাকে নার্স বলেছিলেন, মিস জোজো আপনার মেয়ে হয়েছে।
আপনার কেরিয়ারের শুরুর দিকে তো ‘কণ্ঠী’-দের রমরমা...
হ্যাঁ। তবে এর বাইরে যারা বড় বড় শিল্পী, তাঁরা নিজের ঘরানার গান গাইতেন। যেমন, হৈমন্তী শুক্লা, বনশ্রী সেনগুপ্ত, নির্মলা মিশ্র। কণ্ঠীদের মধ্যে ‘রফি কণ্ঠী’ পি.রাজ তো প্রচণ্ডই জনপ্রিয় ছিলেন। কিন্তু উনি আমার চেয়ে অনেকটাই বয়সে বড়। ওঁকে আমি পাইনি। আমার সময় খুব জনপ্রিয় বলতে ছিলেন মিতা পাল, ইন্দ্রাণী গঙ্গোপাধ্যায়। ইন্দ্রাণী মাসি পুরুষ-মহিলা দুই গলাতে গান করতে পারতেন। ওঁর এমন ডুয়েট গান, উফফফফ! উনি মারা গিয়েছেন, অনেক দিন হল। মিতাদির সঙ্গে বেশ কিছু বছর আগে দেখা হয়েছিল। ওঁর নিজস্ব একটি গানের স্কুল আছে। নিজেও টুকটাক গান এখনও করেন। গৌতম ঘোষকে আমি গৌতম মামা ডাকি। দেখা হয় মাঝে মাঝে।
আপনি তো উষা উত্থুপের গান গাইতেন একটা সময়!
সে এখনও গেয়ে থাকি। আমার শুরুটা রুনা লায়লার গান দিয়ে। পরে আশাজি, লতাজি বা অনুরাধা পড়োয়াল অনেকের গান গেয়েছি। এখানে একটা কথা বলি, আমি আমার বাবা-মায়ের পর যদি কোনও মানুষকে মানি, তিনি হলেন উষা উত্থুপ। আমার অনুষ্ঠানে থাকলে আমার প্রত্যেকটা গান শুনতেন। এমনও হয়েছে উষা উত্থুপ গান গাইছেন। আমি শ্রোতা। মঞ্চে ডেকে এক সঙ্গে গান গাইতে বলেছেন। ওঁর বহু অ্যালবামেও আমি আছি।
এখন মাচা তো অনেক কমে গিয়েছে!
মাচা শো শুরু হত বিশ্বকর্মা পুজো থেকে। বড় বড় কলকারখানায় বা যে সমস্ত পাড়ায় কারখানা ছিল, সেখানে বড় বড় ‘মাচা’ শো হত। এখন তো কলকারখানা অর্ধেক বন্ধই হয়ে গিয়েছে!
মাচা করতে নিয়ে অভিজ্ঞতা কেমন?
ভাল মন্দ দুই-ই। একটা সময় আমি থাকলে অনেক শিল্পী গান গাইতে চাইতেন না। আমি তখন নতুন। ওঁরা বলতেন, আমি নেচে নেচে গান করি। পরিবেশ নষ্ট করে দিই। কী বলুন তো, আমি না, কোনও দিন একটা জায়গায় কাঠ হয়ে দাঁড়িয়ে গান গাইতে পারি না। আর গানকে কী ভাবে আরও আকর্ষণীয় করা যায়, তা নিয়ে কেবলই ভেবে চলি। এমনও হয়েছে ‘ম্যায়নে প্যার কিয়া’ সিনেমার গান গাওয়ার সময় আমি একটা পোষা পায়রা নিয়ে যেতাম মঞ্চে।
আপনি এখন পৃথুলা! ঠাট্টা করে না কেউ?
(হাহাহাহা) আসলে আমি নিজেই নিজেকে নিয়ে এতটাই মজা করি যে অন্যরা সুযোগই পায় না। তো, যে কথা বলছিলাম, খারাপ অভিজ্ঞতা যেমন হয়েছে ভাল অভিজ্ঞতাও প্রচুর। মুম্বইয়ের বড় বড় শিল্পীদের সঙ্গে এক মঞ্চে গান করা একটা বড় পাওয়া। যেমন, বিনোদ রাঠৌর, বাপ্পি লাহিড়ি, সোনু নিগম। এমনকি কেকে-র সঙ্গেও। এ দিকে মজার কান্ডও ঘটেছে প্রচুর।
যেমন?
বলছি, দাঁড়ান। (হাহাহাহা) কী সব কাণ্ড! একটা অনুষ্ঠানে গানের সঙ্গে নাচ করতে গিয়ে আমার পায়ের জুতো খুলে গেল। সেটা উড়ে গিয়ে পড়ল সামনের সারিতে বসে থাকা এক বিধায়কের কোলে! কী লজ্জা, কী লজ্জা! আর একটা অনুষ্ঠান মনে পড়ে। বসে রয়েছি। এক ভদ্রমহিলা এসে আমাকে জোর করে এক গ্লাস দুধ খাইয়ে দিলেন। বুঝুন একবার! আর একটি অনুষ্ঠান। তার শেষে এক দিদা এসে আমাকে জোর করে ১০ টাকা হাতে গুঁজে দিয়েছিলেন। এ দিকে পাড়ায় তাঁকে লোকে ডাকত কিপটে দিদা বলে। এতই কৃপণ ছিলেন!
রীতিমতো সুন্দরী আপনি। মাচা-য় গিয়ে প্রেমের প্রস্তাব পাননি?
(হাহাহাহা) না, তা পাইনি!
বলিউড থেকে ডাক পেয়েছেন কোনও দিন?
পেয়েছিলাম। যাইনি। তাতে মুম্বইতে যেতে হত। আমার মা চাননি আমি মুম্বইতে গিয়ে থাকি। টলিউডে বহু কাজ করেওছি কিন্তু প্রচার পাইনি। ক’জন জানেন, আমি সত্যজিৎ রায়ের গল্প অবলম্বনে ওঁর পুত্র সন্দীপ রায়ের ছবি, ‘ক্লাসমেট’-এ আমি অভিনয়ও করেছি!
এ বারে পুজোয় কী করবেন?
বিদেশ যাবার কথা আছে। দেখি ভিসা পাই কিনা!
পুজো খুব ভাল কাটুক আপনার! অনেক অনেক শুভেচ্ছা।
তোমাদেরও, আনন্দবাজার অনলাইন-এর সব্বাইকে! (গেয়ে উঠলেন) ‘চিরদিনই তুমি যে আমার, যুগে যুগে আমি তোমারই’... (হাহাহাহা)
এই প্রতিবেদনটি 'আনন্দ উৎসব' ফিচারের একটি অংশ।