‘‘সবাই যদি পাশে থাকেন, সাহায্য করেন, সুযোগ পেলে ‘নায়ক’ও হয়ে যাব।’’
ইংরেজি ভাষা পুরোপুরি ছাড়তে পারেননি। কথায় হিন্দির টানও রয়েছে। তবু বাংলা বলার আপ্রাণ চেষ্টা নিখিল জৈনের! দীপাবলিতে পুরুষদের জন্য নিয়ে এসেছেন নতুন উৎসব-সাজ। আনন্দবাজার অনলাইনকে নিখিল জানালেন, শুধু পোশাকের ব্যবসাই নয়, সকলে পাশে থাকলে আগামী দিনে টলিউড নায়কের ভূমিকাতেও তাঁকে দেখা যেতে পারে।
প্রশ্ন: দীপাবলিতে নিখিল কী করছেন?
নিখিল: পুরুষদের সাজাতে ‘রন্ঝ’ পোশাক সম্ভার এনেছি। সাজ যে শুধুই নারীর একচেটিয়া নয়, জানাতে হবে তো! পাঞ্জাবি থেকে শেরওয়ানি হয়ে বন্ধগলা কোট, পাজামা, চোস্ত--সব পাওয়া যাবে। সিল্ক, সুতি, লিনেন দিয়ে তৈরি প্রতিটি পোশাক। আমি চাই আলোর উৎসব নতুন আলো জ্বালুক পুরুষের সাজে।
প্রশ্ন: হঠাৎ পুরুষের সাজ নিয়ে এত সজাগ?
নিখিল: গত ৩০ বছর ধরে নারীকে সাজিয়েছি। আমার বাবার আমল থেকে। মনে হল, আমি যে ধরনের পোশাক ভালবাসি সেই পোশাক আমার বিপণিতে থাকা উচিত। ছ’মাস ধরে সেই ভাবনা থেকেই দেশের নানা জায়গায় ঘুরে শিল্পশৈলী জোগাড় করে এনেছি। নারীর শাড়িও আমার অনুপ্রেরণা! বেশ কিছু শাড়ি থেকে বানিয়েছি পুরুষের পোশাক। এই সাজ, এই পোশাক এত দিন পুরুষেরা ভাবতেই পারেননি। কলকাতায় অন্তত এই ধরনের পোশাকের সম্ভার দেখা যায় না। তাই আগে নিজের শহরকে দীপাবলির উপহার দিলাম। পরে দেশের অন্য শহরগুলোতেও যাব। আমার পোশাকে পুরুষেরা সেজে উঠবেন, সেটাই দেখার অপেক্ষায়।
প্রশ্ন: নিজেও ইদানিং কেতাদুরস্ত হয়েছেন! মডেলিং করছেন...
নিখিল: (হেসে ফেলে) ভাল লাগছে? আমি কিন্তু উপভোগ করছি। একই সঙ্গে টের পাচ্ছি, মডেলদের কত কষ্ট করতে হয়! গত এক বছর ধরে নিজেকে মডেলিংয়ের জন্য তৈরি করেছি। খুব খাটনি হয়েছে। সবাই যখন প্রশংসা করছেন, ভাল লাগছে।
‘‘লে লাদাখে আমি গিয়েছিলাম ‘রন্ঝ’-এর শ্যুট করতে।’’
প্রশ্ন: নিন্দকেরা বলছে, সবই হচ্ছে নাকি হিসেব কষে?
নিখিল: কী হিসেব কষব বলুন? পুরুষের পোশাক আনছি। নিজের সংস্থা। নিজেই তাই মডেলিং করেছি। এর বেশি কিচ্ছু নয়। আমি পরিকল্পনা করে একেবারেই চলি না। বলতে পারেন, ঈশ্বরের নির্দেশ মানি। আপাতত এই নতুন কাজে নিজেকে তৈরি করার সঙ্কেত পেয়েছি। সেটাই করলাম। যেটা ভাল লাগে সেটাই করি।
প্রশ্ন: আপনি যখন লে লাদাখে নুসরত জাহান তখন কাশ্মীরে!
নিখিল: পুরোটাই কাকতালীয়। ওর বিষয়ে আর কোনও খবরাখবর রাখি না। লে লাদাখে আমি গিয়েছিলাম ‘রন্ঝ’-এর শ্যুট করতে। তাপমাত্রা পাঁচ ডিগ্রির নীচে। গিয়ে শুনলাম, ও কাশ্মীরে এসেছে। শ্যুট করতে। ভাল থাকুক, সব সময় এটাই চাই। আর কী বলব?
প্রশ্ন: কোনও কথা, যোগাযোগ? কাছাকাছি জায়গায় ছিলেন দু’জনে...
নিখিল: কাছাকাছি কোথায়! ৫০০ কিমি দূরে ছিলাম দু’জনে। ওখানে ফোনের নেটওয়র্কও খুবই খারাপ।
প্রশ্ন: শারীরিক, মানসিক এত ধকল! তার পরেও ইনস্টাগ্রামে ইতিবাচক বার্তা দিচ্ছেন কীসের জোরে?
নিখিল: আমি তো আরও ব্যস্ত থাকতে চাই। সমাজসেবার মাধ্যমে ইতিবাচক ভাবনা ছড়িয়ে দিতে চাই। অতিমারির সময় আমার সংস্থা পোশাক, অর্থ দিয়ে দুর্গতদের পাশে থাকার চেষ্টা করেছে। সেই সমস্ত কাজ এখন আরও বেশি করার চেষ্টা করছি। ভাল লাগছে। হয়তো এ গুলোই শক্তি জোগাচ্ছে। ওঁদের আশীর্বাদ আমাকে ইতিবাচক থাকতে সাহায্য করছে।
প্রশ্ন: কটাক্ষও সামলাচ্ছেন! কোনও দিন ভেবেছিলেন আপনাকে নিয়ে ফ্যানপেজ, ফ্যান গ্রুপ তৈরি হবে?
নিখিল: বিশ্বাস করুন, এক দিনের জন্য ভাবিনি। বাংলায় একটা প্রবাদ আছে, ‘দশের লাঠি একের বোঝা’। আমার সমর্থনে এখন প্রচুর মানুষ। তাঁরা আমায় ভালবাসেন। আশীর্বাদ করেন। তাঁদের জোরেই আমি এগিয়ে যাচ্ছি। এটাও জানি, সবাই পাশে থাকলে আগামী দিনে আমি এ ভাবেই ধাপে ধাপে এগিয়ে যাব।
প্রশ্ন: ভবিষ্যত নিজে কী ভাবছেন?
নিখিল: মন দিয়ে কাজ করতে চাই। এখনও পর্যন্ত যা যা করেছি সাফল্য পেয়েছি। এখন ‘রন্ঝ’ এসে গিয়েছে। আমার থামার ফুরসত নেই।
প্রশ্ন: ব্যক্তিগত জীবন?
নিখিল: মা-বাবা আছেন। পরিবারের সবাই আমায় ঘিরে থাকেন। বন্ধুরা আছেন। সবাইকে নিয়ে দারুণ আছি।
প্রশ্ন: বিয়ে করবেন না?
নিখিল: (সংযত গলায়) এখনই এ সব নিয়ে ভাবছি না। পরে দেখা যাবে। আপাতত নিজের মতো করে জীবন উপভোগ করতে চাইছি। সম্পর্কে জড়ানোর ইচ্ছেই নেই।
প্রশ্ন: নিখিলের বস্ত্র বিপণি নুসরতের ‘বিকল্প’ হিসেবে কাকে তুলে ধরবে?
নিখিল: নুসরত শুধুই বিপণির ‘মুখ’ ছিল না। সংস্থার মালিকানাও দিয়েছিলাম ওকে। এখন ও আমার জীবনে আর কোথাও নেই। তা বলে ওর ‘বিকল্প’ও হবে না। আমি এ বার অন্য ভাবে প্রচার করছি। নতুন পোশাক সম্ভারের প্রচারে আধ্যাত্মিকতার ছোঁয়া দেখতে পাবেন। মডেলদের দিয়েই কাজ করিয়েছি। আর তারকাদের নিয়ে কাজ নয়।
প্রশ্ন: এত ঝড় বয়ে গিয়েছে, কখনও আড়ালে চোখের জল ফেলেননি?
নিখিল: আমার ব্যক্তিগত যন্ত্রণা সামনে এনে লাভ? এই নিয়ে আর কিচ্ছু বলব না। সবাই সমান হয় না। আমি ইতিবাচক ভাবে জীবনকে দেখার, কাটানোর চেষ্টা করছি। ব্যস, এটুকুই।
প্রশ্ন: ব্যক্তিগত ভাবে দীপাবলি কী ভাবে কাটাবেন?
নিখিল: তিন দিন ধরে খুব আনন্দ করব পরিবার, বন্ধুদের সঙ্গে। বোর্ড গেম খেলব। বাড়ি, দোকান পরিচ্ছন্ন করে সাজানো হচ্ছে। খাওয়াদাওয়া হবে। ছোট বেলায় আসতবাজি পোড়াতাম। এখন আর সে সব করি না। যখন রকেট বা শেল ফাটে দূরে আকাশের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখি। মন ভাল হয়ে যায় (হাসি)।
প্রশ্ন: নিখিল স্পষ্ট ‘আতসবাজি’ উচ্চারণ করছেন! টলিউড থেকে ডাক এল বলে...
নিখিল: (অট্টহাসি) আমি আরও ‘পরিষ্কার’ করে বাংলা বলার চেষ্টা করছি। সবাই যদি পাশে থাকেন, সাহায্য করেন, সুযোগ পেলে ‘নায়ক’ও হয়ে যাব।