বিরিয়ানির থালায় প্রেমের উষ্ণায়ণ। কফি নয়, পিৎজা বা বার্গার নয়। ‘দিওয়ানা বনা না হ্যায় তো, দিওয়ানা বনা দে...’।
আধো আলো-অন্ধকারে বাজছে বেগম আখতার। চোখে চোখে কথা বলছেন জয়া আহসান আর অনির্বাণ ভট্টাচার্য?
বাদলা দুপুরে বিরিয়ানিসহ গল্প করতে এলেন প্রসেনজিৎ, সৃজিত, জয়া, অনুপম। সঙ্গে শুধু মাত্র আনন্দবাজার অনলাইন।
‘দশম অবতার’ য়ের পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায় এ বার মজেছেন প্রসেনজিৎ-অনির্বাণ এবং জয়া-অনির্বাণ জুটি নিয়ে। ছবিতে জয়া আর অনির্বাণের চাউনি আর চুমুতেই নাকি রসায়ন, মনে হয়েছে পরিচালকের।
দুর্গাপুজোর জন্য তৈরি এই ছবিতে ‘চুমু’র মধ্যেই একটা বড় জায়গা নিয়ে নিয়েছে। গলৌটি কাবাবের গন্ধ মেখে সৃজিত বললেন, ‘‘চুমু নিয়ে মিম দেখছি। বেশ মজার। কথায় কথায় বললেন পরিচালক, পরমের মতো চুমু কেউ খেতে পারে না। পরম চুমু খেতে শিখিয়েছে ইন্ডাস্ট্রিকে।’’
একটু দূরত্বেই দুধ সাদা গোল গলার টপ আর খয়েরি রঙের স্কার্ট পরে নির্মেদ জয়া, হাসলেন। প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়কে পেরিয়ে ঠিক অমনই দুধ সাদা টি-শার্টে অনির্বাণ।
তিনি বললেন, ‘‘স্বশিক্ষায় চুমু খেয়েছি আমরা। ২০২৩য়ে পর্দায় চুমু খাওয়া নিয়ে এত আলোচনা?’’ বিস্ময় অনির্বাণের কণ্ঠে। আওধি মেজাজে খানাপিনা আর গল্পের দিনে প্রথা ভেঙেছেন তিনি আর জয়া। দু’জনেই পশ্চিমি পোশাকে। রং আর ছন্দ মিলিয়ে বিরিয়ানিতে মন দিলেন তাঁরা।
অন্য দিকে নরম পরোটায় মন দিয়ে চুমু চর্চায় ঢুকলেন অনুপম। তাঁর কথা কম। গান বেশি। বললেন, ‘‘সৃজিতদা শেষে তুমি কি ‘দশম অবতার’য়ে চুমু সৃষ্টি করলে!’’
সে দিন ছিল প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের জন্মদিন। জয়া, সৃজিত, অনির্বাণ, অনুপম কেক খাইয়ে তাঁদের আদরের ‘বুম্বাদা’র জন্মদিন পালন করলেন।
জয়া আলাদা করে প্রসেনজিতের সঙ্গে ছবি তুললেন। মনে পড়ল পরিচালক অতনু ঘোষের ‘রবিবার’-এর কথা।
বারবার জন্মদিন এলেও প্রসেনজিতের বয়স হয় না। রাত বারোটায় ছেলে মিশুক বাবাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। জন্মদিনের ২৫ নম্বর কেক কাটতে কাটতে প্রসেনজিৎ জানালেন, আজ তাঁর ঠাকুরদাদারও জন্মদিন। এই প্রথম সকলের সামনে পরোটা আর মাংসের কাবাব খেলেন ‘বুম্বাদা’।
তাঁর রোজের নিয়মে কোনও দিন, কোনও ভাবেই এই খাবার থাকে না। থাকতে পারে না। মনে হচ্ছিল ছাই রঙা, হাতে সাদা পাড়ের নকশা করা পাঞ্জাবিতে আরও দশ বছর যেন পিছিয়ে গেছেন তিনি!
অনির্বাণের সঙ্গে জুটি বেঁধে ছবিতে ‘প্রবীর’ আর ‘পোদ্দার'’ যে ভাবে লড়াই করেছেন... সৃজিতের দাবি, ‘‘এটা আসলে ‘ব্রোম্যান্স’। এ বার ঋতু তো বলবেই আমার আর প্রসেনজিতের ৫০তম জুটির কী হবে!’’
খুব মন দিয়ে বিরিয়ানি খাচ্ছিলেন জয়া। সে দিকে দেখে চঞ্চল সৃজিত বললেন, ‘‘যে যাই বলুক। কলকাতার বিরিয়ানির সঙ্গে বাংলাদেশের বিরিয়ানির কোনও তুলনাই হয় না।’’
শুনে জয়ার চাউনিতে বদল! চমকে বললেন জয়া, ‘‘তাই নাকি! তোমার এই কথা ছবি দিয়ে দিকে দিকে ছড়িয়ে দেব। দেখি এ বার শ্বশুরবাড়ি গিয়ে চেটেপুটে কেমন করে খেতে পারো।’’
খাওয়া প্রায় শেষের দিকে। বিরিয়ানির ঝগড়া মিটিয়ে জয়া বললেন, ‘‘এই আওয়াধি বিরিয়ানি কিন্তু আমার খুব প্রিয়।’
বাংলাদেশ আর পশ্চিমবঙ্গের বিরিয়ানি লড়াইয়ের পথ ঘোরালেন পরিচালক নিজেই। অনুপমের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘‘এই এত খাওয়া, জুটি, প্রেম নিয়ে কথা হচ্ছে, তো আমি একটা গল্প বলি।
আমার পাশের বাড়িতে এক ভদ্রলোক থাকেন। আমি বাড়ি ঢোকার সময় জানলা থেকে মুখ বাড়িয়ে তিনি প্রায়ই বলতেন, ‘‘দাদা ছবিতে কী একটাও প্রেমের গান থাকবে না?’’ জয়া চমকে তাকান সৃজিতের দিকে।
তাঁর ছবির গান নিয়ে বরাবর স্পর্শকাতর সৃজিত। অন্য দিকে অনুপম বললেন, ‘‘২০১৬ সৃজিতদার সঙ্গে শেষ ‘জুলফিকার’য়ে পুজোর কাজ করেছি। করোনা সব তছনছ করে দিয়েছিল। আবার ইন্ডাষ্ট্রি মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে। ভাল লাগছে।"
ইন্ডাস্ট্রি মাথা তুলে তো দাঁড়াচ্ছে। কিন্তু সিনেমার যুদ্ধ? দুর্গা পুজোয় এক সঙ্গে বড় বাজেটের চারটে ছবি আসছে। হিসেব গোলমাল হয়ে যাবে না তো?
প্রশ্ন শুনেই মুখ খুললেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। বললেন, ‘‘দেখুন চারটে ছবি এক সঙ্গে ভাল ব্যবসা করবে। আর টলিউডেই তো টাকা আসবে। তাতে আমাদেরই তো লাভ।"
যোগ দিলেন সৃজিত, ‘‘পারস্পরিক বিরোধিতা কিন্তু নেই। প্রতিযোগিতা আছে। সেটা তো থাকবেই। যেমন ‘জওয়ান’, ‘গদর২’, ‘ও মাই গড’য়ের এক সঙ্গে হিসেব দেওয়া হচ্ছিল। এখানেও পুজোর পরে ইন্ডাস্ট্রির হিসেব দেওয়া হবে।’’ সত্যিই কি ঘুরবে ইন্ডাস্ট্রির চাকা? এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।