Durga Puja 2020

এই তো আমার মা দুগগা, যাঁকে নিজে হাতে সাজাচ্ছি

ঢাকের বোল, কাঁসর, ধূপ-ধুনো মিলিয়ে সে এক অদ্ভুত নেশা ধরানো আবেশ, আমেজ চারটে দিন আমায় বুঁদ করে রাখত।

Advertisement

অরিন্দম শীল

শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০২০ ১২:৪২
Share:

উত্তর কলকাতার ছেলে। আদি বাড়ি কলেজ স্ট্রিটে। সেখানে নিষ্ঠার সঙ্গে জগদ্ধাত্রী পুজো হয়ে এসেছে দেড়শো বছর ধরে। ওই দেবী প্রতিমাকে দেখতে দেখতেই ছোট বেলায় দাদুর কাছে বায়না, আমার দুর্গা চাই। পরের বছর থেকেই বাড়িতে মহা ধুমধামে দুর্গা পুজোর শুরু।

Advertisement

পুজোর ভোর বিসমিল্লা খানের সানাইয়ে

সে এলাহি ব্যাপার। তিনটে বাড়ির ছাদ ঘিরে প্যান্ডেল। ভিয়েন বসেছে। মিষ্টি থেকে ঠাকুরের ভোগ- সবটাই বাড়িতে রান্না। বাইরে থেকে কিচ্ছু আসত না। ঝুড়ি ঝুড়ি ছানা এনে সেই দিয়ে রকমারি মিষ্টি। আত্মীয়দের ভিড়ে বাড়ি গমগম করত। পুজো-বাড়ি মানেই সকাল-সন্ধে নানা ধরনের গান। মনে আছে, পুজোর ভোর হত বিসমিল্লা খানের সানাই দিয়ে। ঢাকের বোল, কাঁসর, ধূপ-ধুনো মিলিয়ে সে এক অদ্ভুত নেশা ধরানো আবেশ, আমেজ চারটে দিন আমায় বুঁদ করে রাখত।

Advertisement

বছরের চাকা ঘুরেছে। আমরা বড় হয়েছি। বিশাল পরিবার ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছত্রাখান। অত বড় আদি বাড়ি রক্ষণাবেক্ষণ করতে না পারার জন্য একটা সময়ে আমরা সবাই যে যার মতো করে আলাদা আস্তানা বেছে নিলাম। কিন্তু একসঙ্গে মিলে পুজো করার নেশা রয়েই গেল।

আরও পড়ুন: ধুনুচি নাচের আফসোস নেই, নারীও কি থাকতে নেই!

লেক ডিস্ট্রিক্ট থেকে আর্বানা...সব পুজোতেই আমি

কলেজ স্ট্রিট ছেড়ে উঠে এলাম প্রথমে লেক ডিস্ট্রিক্টে। সেখানে টানা পাঁচ বছর পুজোর সমস্ত কর্মকাণ্ডে আমার উপস্থিতি। তার পর চলে আসি আর্বানায়। সেখানকার পুজোর সঙ্গেও গত তিন বছর ধরে আমি ভীষণ ভাবে যুক্ত। প্যান্ডেল, ঠাকুর পছন্দ করা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের দায়িত্ব-সব হাসিমুখে পালন করি।

ঢাক বাজানো, ভাসানের নাচ তোলা থাক আগামী বছরের জন্য।

এ বছর সে সব থেকেও দূরে। তার বদলে নতুন একটি কাজে সামিল হয়েছি। আর্বানার কিছু বন্ধু মিলে আমাদের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন করেছি। ‘হুজুগে’ তার নাম। শনিবার সেই দল মিলে চলে গিয়েছিলাম সুন্দরবনে। ৮০০ নারীর হাতে ধনেখালি শাড়ি তুলে দিয়েছি। তার আগে আমরা সবাই গিয়েছিলাম ধনেখালিতে। নিজেরা পছন্দ করে শাড়ি কিনে সে কী আনন্দ!

সেই শাড়ির বান্ডিল নিয়ে যখন পৌঁছলাম, সবার হাতে শাড়িগুলো তুলে দিচ্ছিলাম। দেখি ওঁদের সব্বার চোখে চিকচিকে জল। মুখে হাসি চুঁইয়ে নামছে। হঠাৎই এক জন ভীষণ বয়স্কা মহিলা আমাকে আরও কাছে ডাকলেন। কিছু বলবেন ভেবে নিচু হয়ে তাঁর কাছে পৌঁছতেই তিনি মাথায় হাত রেখে আশীর্বাদ করলেন আন্তরিক ভাবে।

মনে হল, মা আসেননি কই? এই তো আমার মা দুগ্গা! যাঁকে নিজে হাতে সাজাচ্ছি। এটাই এ বছর আমার পুজো। যা করে অসম্ভব তৃপ্তি পেলাম।

ঢাক বাজাব, বিসর্জনেও নাচব...আগামী বছরেও

এ বছর আর্বানায় পুজো নমো নমো করে। লোকজন, ভিড় থাকবে না। কোনও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে না। পুজোর জামাও হবে না। তবে দেওয়া-থোওয়া করেছি নিয়ম মেনে। কিছু উপহার পেয়েছি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতি বছরের মতো এ বছরও আমাকে জামা, শুক্লাকে শাড়ি পাঠিয়েছেন।

আরও পড়ুন: এ বছর পুজো থাক, আসছে বছর জমিয়ে হবে!

আবাসনে খাওয়াদাওয়াও হবে। তবে পাত পেড়ে নয়। শহরের বড় বড় রেস্তোরাঁ থেকে খাবার আসবে। কন্টেনারে ভরে সেই খাবার পৌঁছে যাবে প্রতি বাড়িতে। ঢাক বাজানো, ভাসানের নাচ? তোলা থাক না হয় আগামী বছরের জন্য।

সুদে আসলে সবটা উশুল করব আগামী বছর। ঠাকুর আনা, ঢাক বাজানো থেকে বিসর্জনের নাচ পর্যন্ত।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement