আমি এখনও চেষ্টা চালিয়েই যাচ্ছি। অভিনয়, শপিং, পুজো প্ল্যানিংয়ের মধ্যেও পাখির চোখ ওই প্লেন। কে বলতে পারে, শেষ মুহূর্তে হয়তো বাগডোগরার টিকিটটা কেটেই ফেললাম! যদিও মা বলে রেখেছেন, যদি যাস, ফিরে কোনও হোটেলে থাকবি কোয়ারান্টিনে। বাড়িতে পা দিলেই পায়ের গোছায় বাড়ি খাবি! ওখান থেকে শুটিং করবি। টেস্টের রেজাল্ট নেগেটিভ এলে ১৪ দিন পরে ফিরবি!
শুটিংয়ের চাপ বেড়েছে...পুজো আসছে
সবার মনখারাপ। শরৎ এসেছে। পুজো আসছে কই? আমার মনে হালকা ছন্দে জয় ঢাক। শুটিংয়ের চাপ বেড়েছে। ব্যাঙ্কিং রাখতে হবে। অর্থাৎ, শেষ পর্যন্ত পুজো আসছেই। আসলে আমি মানুষটা ভীষণ কল্পনাপ্রবণ। আকাশের বুকে টুকরো টুকরো সাদা মেঘ, কাশ ফুল...দারুণ লাগে দেখতে। আগে সময় পেলেই প্রকৃতির এই রূপ দেখতাম দু’চোখ ভরে। এখন সময়ই পাই না! কতদিন সামনে থেকে কাশ ফুল দেখিনি!
গায়ে শাড়ি ফেলে না দেখলে মন ভরে না
আর এ বার! হাতের পাঁচ সেই অনলাইন। দোকানে দোকানে ঘুরে নিজের জন্য, কাউকে কিছু দেওয়ার জন্য কেনাকাটা আমার নেশা। ধরুন, বড় একটা শাড়ির দোকানে ঢুকলাম। একটা শাড়ি বেছে সেটা পাশে লাগানো আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে গায়ে ফেলে না দেখলে যেন মন ভরে না! আমি নিজেকে দেখব। মা দেখে বলবেন, মানাল কি মানাল না, তার আগে একবার উইন্ডো শপিং সারব নতুন কী কী এসেছে দেখতে- তবে না শপিং! এ বার তো সবটাই ভার্চুয়াল। এ বছর স্টুডিয়োর এক টেকনিশিয়ান পুজোর আগে জামা-কাপড়ের ব্যবসা শুরু করছেন। ঠিক করেছি, মা, মাসি বা অন্যদের আর নিজেরটা ওঁর থেকেই কিনব। বাবা, ভাইয়ের জন্য অনলাইন ছাড়া গতি নেই।
আরও পড়ুন: অবাক কাণ্ড, এই দুর্দিনেও পুজোর সব জোগাড় হয়ে গেল ঠিক ঠিক!
মাঝরাতে বেরিয়ে ছোট পুজোয় হুল্লোড়
বন্ধুদের আদৌ মা-বাবা বাড়িতে ঢুকতে দেবে? এটা একটা বিশাল প্রশ্ন! একেই ওরা নানা জায়গা থেকে আসবে। মা হয়তো সটান বলে দেবেন, বাইরে দাঁড়িয়ে আড্ডা মার। কিংবা ছাদে চলে যা! আমার তাই প্ল্যান, মাঝরাতে যদি কার্ফু বা কোনও বাড়তি বিধি-নিষেধ না থাকে তা হলে ছোট পুজোর প্যান্ডেলে যাব। প্রতি বছর বড় পুজো দেখতে গিয়ে ছোট পুজো মিস করি। বিচারক, উদ্বোধক হিসেবে গত বছরেও টালা থেকে টালিগঞ্জ টো টো কোম্পানি করেছি বড় পুজোর পিছনে। অথচ ছোট পুজো কমিটিগুলোও ছিমছাম ভাবে পুজো করে। কী সুন্দর শাঁখ বাজানোর প্রতিযোগিতা, ধুনুচি নাচের আয়োজন থাকে! এ সব দেখতে দেখতে ঝাঁপিয়ে পড়ে ফুচকা বা কুলফি আইসক্রিম খাওয়া হবে? একটু একটু ভয় করছে। যতই করোনা আসুক, সবাই বড় পুজো দেখতেই ছুটবে।
আমি বন্ধুদের দল অথবা গৌরবকে নিয়ে গলির ভিতর দিয়ে তস্য গলিতে ঢুকে পড়ব। সেখানের প্যান্ডেলে আরাম করে বসব। ঠাকুর দেখব। অথচ ভিড়ে ধাক্কাধাক্কি করব না। দারুণ প্ল্যান না?
মায়ের অঞ্জলি বনাম পেপসি কোলা
মনে রাখার মতো কত যে কাণ্ড! মায়ের অঞ্জলি দিতে গিয়েছি এক দঙ্গল বন্ধু। স্কুল, কলেজ মিলিয়ে জনা কুড়ি। কেউ মানিব্যাগ সঙ্গে নিইনি। এদিকে মাঝ রাস্তায় জলতেষ্টায় গলা শুকিয়ে কাঠ। কী করি? সবার পকেট হাতড়ে জড়ো হল কিছু খুচরো পয়সা। সেই দিয়ে এক টাকার পেপসি কোলা দু’টাকা দিয়ে কেনা হল। সেই কোলা খেয়ে জিভ রঙিন। মুঠোফোন অন করে সব্বাই সেই রঙিন জিভের সেলফি নিলাম দলবেঁধে! বড্ড মিস করব এই দুষ্টুমিগুলো।
আরও পড়ুন: ‘একলা আমি'র সবটা জুড়ে ছিল পিসির বাড়ির পুজো
গত বছরও সকাল সকাল উঠে মায়ের সঙ্গে শিউলি ফুলের মালা গেঁথেছি। বাড়ির গাছটায় প্রচুর ফুল হয়। সারা রাত গন্ধে আকুল। রাত ফুরোলেই মাটি সাদা করে ঘুমিয়ে পড়ে আটপৌরে মেয়ের মতো। সাজিতে সেই ফুল তুলে এনে আমি আর মা মালা গেঁথে সাজাতাম তাই দিয়ে। গত বছরে আমার শুট ছিল না।
এ বছর সেটাও পারছি না। ভোর ছ’টায় টেনেহিঁচড়ে নিজেকে বিছানা থেকে ছাড়াই। তার পরে সেই যে শুরু হয় দৌড় দৌড়...আর পিছু ফিরে দেখা নেই। ছাদের গাছে কতগুলো স্থলপদ্ম ফুটেছে? জানিই না! আমার বদলে পাড়ার লোকে শিউলি কুড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে!