গত তিন-চার বছর ধরেই এ-ই আমার সংসার। মা, আমি আর শ্রীমা। সঙ্গে বন্ধুবান্ধবেরাও থাকে। আর থাকে কলকাতার সেরা পুজোগুলো। ভিড় ঠেলে ঠাকুর আমি দেখবই। এটাই হয়ে এসেছে এতগুলো বছর। আর এ বছর দেখুন। ঠাকুর দেখার কথাই মনে আনতে পারছি না! রাস্তায় বেরোব কী?
পুজোর ফিতে আমার হাতে? কভি নেহি
উদ্বোধন করব! আমি কে এমন কেউকেটা! বিনয় বলুন বা যা খুশি, এটাই আমি। গত ১০-১১ বছর ধরে কাজ করছি। কিন্তু এই মানসিকতা কিছুতেই তৈরি হতে দিইনি, প্রতিমার উদ্বোধন হবে আমার হাতে! আমি না আসা পর্যন্ত সবাই অপেক্ষা করবেন, দেবী মা-ও! মন থেকে এ সবে একদম সাড়া পাই না। ফলে, আমি কোনও বছর ফিতে কাটায় নেই। বিচারকের আসনে নেই। একমাত্র কোনও ব্লাইন্ড স্কুল, ক্যানসার রোগী বা প্রতিবন্ধীদের জন্য তৈরি স্কুল, কিংবা স্বেচ্ছ্বাসেবী সংস্থা ডাকলে আমি সেখানে আছি। গত বছরেই একটি প্রতিবন্ধী স্কুল পুজোয় তাদের বাচ্চাদের সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য নিমন্ত্রণ জানিয়েছিল। গিয়েছিলাম, খুদেদের মুখ চেয়ে। এই ধরনের শো-এর জন্য কোনও টাকা নিই না আমি। আমার এই ধরনের ভাবনার পিছনে কারণও আছে। একদম মাটি থেকে উঠে এসেছি তো। সেই অর্থে কোনও শিক্ষক ছিলেন না। ইন্ডাস্ট্রির সমস্ত টেকনিশিয়ানদাদারা হাতে ধরে কাজ শিখিয়েছেন। এখনও কিন্তু সবার আমি ছাত্র।
আরও পড়ুন: বাগডোগরার প্লেনের টিকিটটা শেষ মুহূর্তেও হয়ে যেতে পারে...
পরিবার আর পুজো একাকার
শুরুতেই বলেছি, আমার পরিবার খুবই ছোট। চার-পাঁচ বছর আগে বাবাকে হারিয়েছি। তার পর থেকে মা-ছেলের সংসারে। পুজোয় আসেন মাসি-মেসো। আর থাকে শ্রীমা। এদের নিয়েই আড্ডা, হুল্লোড়, খাওয়াদাওয়া, ভিড় ঠেলে ঠাকুর দেখা। এ বার যেহেতু এই সবই বন্ধ, তাই বাড়ি আর পাড়ার পুজোয় সময় কাটানো। শুধু ঠাকুর দেখা নয়, খাওয়া-দাওয়ার জন্যও এ বার বাড়ির বাইরে পা রাখব না। নিশ্চয়ই ভাবছেন, তা হলে কি ভাল-মন্দ খাব না চারটে দিন?
এবার পুজোয়খুশির আয়োজন হিসেবে শ্রীমাকে, মাকে সারপ্রাইজ গিফট দেওয়ার কথা ভাবছি।
আলবাৎ খাব। তবে পুরোপুরি মায়ের হাতের রান্না। পুজোয় আমার পোলাও আর মাটন কষা লাগেই। মা যদি পোলাও রেঁধে উঠতে পারেন, ভাল। না হলে সাদা জুঁই ফুলের মত ভাত আর মাটন কষাতেই দিব্যি চলবে। আর যদি স্বাদে-আহ্লাদে খাওয়ার কথা বলেন তাহলে বলব, কানা উঁচু কাঁসার থালায় চুড়ো করা ভাত। উপরে হাল্কা করে ঘি ছড়ানো। ভাজা সোনা মুগের ডাল, একটু ভাজি, মাছ। যেন অমৃততুল্য!
শ্রীমার জন্য সারপ্রাইজ
জামাকাপড় প্রতি বছরই দিই। নিজের জন্যও কেনাকাটা সারা বছরেই হয়ে যায়। এ বছর যেহেতু অনলাইন শপিং, তাই বাইরে বেরোনোর সুযোগ নেই। সত্যি বলতে কি,এ বছরের পরিস্থিতিটাও এতটাই মনখারাপের যে, কেউই যেন মন থেকে পুজোয় মেতে উঠতে পারছেন না। কিন্তু বচ্ছরকার দিন, পরিবারের মুখে যদি হাসি না দেখি, তা হলে সারা বছরের পরিশ্রমটাই যে জলে গেল! তাই বাড়তি খুশির আয়োজন হিসেবে শ্রীমাকে, মাকে সারপ্রাইজ গিফট দেওয়ার কথা ভাবছি। সারপ্রাইজ যখন, কী দেব বলবই না এখন! চিন্তা নেই, শ্রীমাই উপহার হাতে পেয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ফলাও করে সবাইকে জানিয়ে দেবে।
আরও পড়ুন: কলকাতার পুজোর গন্ধ গায়ে মাখতে প্রাণ ছটফটিয়ে উঠছে
সরস্বতী পুজো, দোল আর অষ্টমীতে সব মেয়েই সুন্দরী
এটা যে কী করে হয়, আজও বুঝে উঠতে পারলাম না! এই তিনটে দিন ছেলেরা পাঞ্জাবি-পাজামা আর মেয়েরা শাড়ি। রূপ যেন উড়ে বেড়ায় প্রজাপতি হয়ে! সবাই, সব কিছু যেন ভীষণ সুন্দর, ভীষণ মায়াবি। এমন দিনে সকালে পাটভাঙা শাড়ি পরা তরুণী হাতে এসে ফুল দিয়ে যাচ্ছে। বা কোনও মেয়ের হাতে একই ভাবে ফুল গুঁজে দিচ্ছে কোনও ছেলে। ভাল লাগবে না আবার! তবে ওটা তো সেই স্কুল লাইফের ঘটনা। যাকে দেখতাম, তাকেই ভাল লাগত। ক্রাশ বলতে এখনও পর্যন্ত শ্রীমা-ই!