Durga Puja 2019 Ananda Utsav 2019 Durga Puja Celebration Celebrity Tollywood Celebrity Durga Puja

সপরিবার কলকাতা ছাড়ছি পুজোতে: ঋত্বিক

পুজো বলতেই আমার বেড়াতে যাওয়ার কথা মনে হয়।

Advertisement

ঋত্বিক চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০১৯ ১২:৪৮
Share:

আমি প্রায় ছাত্র জীবন থেকে পুজোয় বেড়াতে যাই। এমন এমন জায়গায় বেড়াতে যাই যেখানে হয়তো পুজো হয় না বা খুব কম পুজো হচ্ছে। অন্তত কলকাতা বা আমার চেনা জায়গার মতো পুজো হয় না। তবে এটা ঠিক, পুজো-ই সেই অবসরটা তৈরি করে যে কারণে আমি বেড়াতে যাই। ফলে পুজো বলতেই আমার বেড়াতে যাওয়ার কথা মনে হয়। অনেক সময় ট্রেনের টিকিট কাটতে হয় তিন মাস আগে থেকে। ফলে ওটা একটা প্রসেস।

Advertisement

আর পুজোর অবসর বলতে, এমনিই আমার ছেলের সঙ্গে আমি প্রচুর খেলি। নিজেও খানিকটা বাচ্চা হয়ে যাই। বাচ্চাদের সঙ্গে আমি অনেক সময় কাটিয়েছি, আমার দুই দাদা ও বোন, তাঁদের ছেলেমেয়ে। এখন নিজের সন্তানের সঙ্গে সময় কাটাতে গিয়ে বুঝতে পারি সেখানে খানিকটা নিজের ছোটবেলা দেখা যায়। খানিকটা নিজের বাবাকেও দেখা যায়। তো এটা দারুণ অনুভূতি। ও-ও তো বেড়াতে খুব ভালবাসে। ওর সঙ্গে আমি আর অপরাজিতা প্রচুর বেড়াই, প্রচুর খেলি। বাচ্চার তো একটা কল্পনার জগত থাকে। বাবা হিসেবে চেষ্টা করি সেই জগতটাকে এক্সপ্লোর করতে বা যতটা সম্ভব উস্কে দিতে, যাতে ওর কল্পনা নানা দিকে খেলতে পারে। আমাকে ও ‘বাবা’ বলে, আমি ওকে... সে একটা ডাক আছে... হা হা হা... নাহ্‌ থাক, বাবার ডাক আর পঞ্চাশটা লোককে বলে লাভ নেই। অবসর পেলেই তাই ওর সঙ্গ আমাদের দু’জনেরই খুব পছন্দের।

তবেআমার পুজোয় জামাকাপড় কেনার শখ অনেক দিন থেকেই নেই। কিন্তু এখন ঘটনাচক্রে পেশার কারণে একটু বেশি জামাকাপড় কিনতে হয়। জামাকাপড় কেনা বছরভর চলতে থাকে। পুজোর জন্য বহু বছর কেনার অভ্যাস নেই। এমনিতেই তখন বেড়াতে যাই। খুব যে একটা নাগরিক জায়গায় যাই তাও নয়। ফলে নতুন পোশাক পরার দায়ও নেই। কিন্তু পুজোতে অনেককে উপহার দেওয়ার থাকে। ছেলের জন্য কিনতে হয়। এগুলোর জন্য যেটুকু শপিংয়ের দরকার হয় করি। কিন্তু নিজের জামা? দুর্গাপুজোর সঙ্গে আমার নতুন জামার সম্পর্ক নেই।

Advertisement

আমার তো মনে হয় ঘোরা, জামাকাপড় পরা, আড্ডা, খাওয়ার জন্য সারা বছর আমি রেখে দিয়েছি। আর পুজোর চার দিন এগুলো আর হয় না। তখন বেড়ানো। আমি বলতে চাইছি পুজোর সময় যদি আমি কুমায়ুনের কোনও গ্রামে থাকি, আমি তো কন্টিনেন্টাল খেতে পারব না। কিন্তু অন্য জিনিস খাব, লোকাল ফুড খাব। সেটা হয়তো খেতে দারুণ নয়। কিন্তু একটা নতুন স্বাদ।

আরও পড়ুন: রুক্মিণীর পুজোর পাসওয়ার্ড এখন কে, তা আমি জানি: দেব

আমি এমনও দেওয়ালি কাটিয়েছি কুমায়ুনে, যেখানে পুরো হোটেলে শুধু আমরা দু’জন, মানে আমি আর অপরাজিতা, গেস্ট হিসেবে। যাঁরা কাজ করেন, তাঁরাও দেওয়ালি উপলক্ষে ছুটি নিয়ে চলে গিয়েছে। চার জন পড়ে আছেন যাঁরা ওই গ্রামেরই বাসিন্দা। আমাদের নিমন্ত্রণ করা হয়েছিল সন্ধেবেলা। একসঙ্গে উৎসব পালন করার জন্য। ওই হোটেলে কাজ করেন এমন এক জন তার বাড়ি থেকে একটা চাটনি রান্না করে এনেছিল। ডিনারের সঙ্গে আমাদের দিয়েছিল। পুজো তো আসলে উৎসব। তো এটাও সেই উৎসবেরই কারণে। উৎসবই যদি না থাকত তিনি ওই রান্নাটা আমাদের জন্য আনতেন না। এসে বলতেন না, ‘দারুণ অ্যাপেটাইজার, খেয়ে হজমটা খুব ভাল হয়।’ লোকাল হার্বস, গাছপাতার একটা চাটনি। পুজোতে এ রকম নানা অভিজ্ঞতা হয়। হয়তো এমন জায়গায় গিয়েছি যেখানে দুর্গাপুজো হয় না, কিন্তু দশেরা হবে। হয়তো বান্ধবগড়ে আছি, রাবণ সাজিয়ে পোড়ান হল। সেইটার সঙ্গে আবার বাংলার অত পরিচিতি নেই। বাংলার বাইরে আবার এটা বিরাট বড় উৎসব।

বাইরে থাকলে কখনও কখনও মনে পড়ে যে আজকে অষ্টমী, আজ খুব ভিড় কলকাতায়। এ বারে পশ্চিমবঙ্গেই কোথাও একটা যাব। খুব প্ল্যান করেছি তা নয়। ফলে হয়তো পুজোর সঙ্গে একটা যোগ থাকবে, ক্ষীণ হলেও যোগ থাকবে। হয়তো ঢাক শুনতে পাব বা ঠাকুরও দেখতে পাব।

পুজোর সময় কলকাতার চেহারা বদলে যায়। মানুষের ঢল নামে, প্রচুর প্যান্ডেল, প্রচুর হোর্ডিং, রাস্তাঘাটের চেহারা বদলে যায়। পুজো শেষে ভাঙা উৎসবের একটা নিজস্ব চেহারা আছে। শূন্য মণ্ডপ মনে এক ধরণের শূন্যতাও তৈরি করে। সেগুলো শহরে ফেরার পর দেখতে পাই। এটা যেমন আছে, তেমন দুর্গাপুজো উৎসবের শুরুও। কালীপুজো হয়, ভাইফোঁটা হয়। পুজোর ঢাক দিয়ে অনেক উৎসবের সূচনা হয়। ভাইফোঁটা পারিবারিক ভাবে চিরকালই আমরা পালন করেছি। আমরা তিন ভাই, এক বোন। এই বারও পালন করা হবে। আমাদের ছেলেমেয়েরাও পালন করবে। সব মিলিয়ে ভাইফোঁটা একটা খুব বড় চেহারা নেয়।

আরও পড়ুন: গভীর রাতে আম্মার সঙ্গে প্যান্ডেল হপিং… কী হত জানেন? জানালেন রাইমা​

এ ছাড়া পুজোর নস্টালজিয়া আমার সে রকম কিছু নেই। তবে বিজয়ায় নানা খাবার হত আমাদের বাড়ি। প্রচুর নারকেল গাছ ছিল। আজকাল আবার সব কিনতে পাওয়া যায়। ছোট ছোট প্যাকেটে নাড়ু, মোয়া সব পাওয়া যায়। কিন্তু মায়ের হাতের ছোঁয়া তাতে থাকে না। আমাদের বাড়িতে মা-ই নাড়ু বানাত। দারুণ, অপূর্ব তার স্বাদ! নারকেল কুরিয়ে, বেটে নাড়ু বানাত মা। ফলে মুখে মিলিয়ে যাবে সে নাড়ু। সেসব নাড়ু বাড়িতেই পাওয়া যায়, কিনতে পাওয়া যায় না। আমরা যেহেতু মফস্সলের মানুষ, একটা সময় কম বয়সে প্রচুর বাড়িতে বিজয়া করতে যেতাম। বিজয়ার সময় এমন এমন বাড়িতে যেতাম সারা বছর যে বাড়িতে যেতামই না। এমন তো নয় যে সাংঘাতিক ভুরিভোজ হবে! সেই তো নিমকি, নাড়ু। কিন্তু দল বেঁধে পাড়ার বন্ধুরা সবাই মিলে বিজয়া করছি। সেটা খুব মজার। যে বাড়িতে হয়তো কোনও দিন যাই না, বল পড়লে ঢুকতে দেয় না বিজয়ার দিন সে বাড়িতেও ঢুকে যাব। আর সে বাধ্য হয়ে নাড়ুআর নিমকি নিয়ে আসবে... হা হা হা হা... খুবই মজার এ সব ছোটবেলার খোলামকুচি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement