তৃতীয়ার সন্ধে, যানজটে কলকাতা স্তব্ধ। চলছে পুজো বাজারের লিপস্টিক, ব্লাউজ, কাজল কেনার টুকিটাকি। দুর্গার মণ্ডপ ভরছে লোকে। তার মধ্যেই এক ছাদের তলায় সৃজিত, যিশু, অনির্বাণ, প্রসেনজিৎ। যিশু সম্পর্কে বলতে গিয়ে সৃজিত বললেন,” হায়দরাবাদ থেকে একজন তেলুগু অভিনেতা এসেছেন কলকাতায়। তিনি যে এত ভাল বাংলা বলতে পারেন! আমি জাস্ট ভাবতে পারিনা। তাঁর সঙ্গে আমার 'দাম্পত্য' কলহ লেগেই থাকে। তিনি আমার 'দশম অবতার' ছবিতে যে ভাবে বাংলায় অভিনয় করেছেন জাস্ট…”। সকলে এক সঙ্গে হেসে উঠলেন।
এই ‘সকলের’ দুই অভিমুখ। এক অভিমুখে ইন্ডাস্ট্রির এই চার হার্টথ্রব পুরুষদের মাঝে ঝলমলিয়ে উঠছেন অভিনেতা জয়া আহসান। তাঁর শাড়ি জুড়ে আলো। কায়দার সাজ। রুপোলি জড়ির ফিনফিনে শাড়িতে শরীর বেঁধেছেন তিনি।কোনটা শরীর? কোনটা শাড়ি? বোঝা দায়।
অন্য অভিমুখে বাঙালি দর্শক। মণ্ডপ ছেড়ে যারা সৃজিতের 'দশম অবতার' দেখতে এসেছেন।
সৃজিত মুখোপাধায়ের পুজোর ছবি ‘দশম অবতারের’ প্রিমিয়ারের সুচনা এই ভাবেই।
ছবি দেখা শেষ।
যিশুর স্ত্রী নীলাঞ্জনা এক রঙা পোশাকে দ্রুত বেরোচ্ছেন প্রেক্ষাগৃহ থেকে। আনন্দবাজার অনলাইনকে বললেন, “বহু দিন বাদে যিশুর প্রিমিয়ারে। প্রিমিয়ারে তো আসাই হয়না। যিশুর ‘এক যে ছিল রাজা’র প্রিমিয়ারে শেষ এসেছিলাম।“
প্রশ্ন করতে হয়নি তাঁকে। ছবিতে যিশুর অভিনয় দেখে তিনি এতটাই আপ্লুত যে বলে উঠলেন, “যিশু কী ভাল করেছে না! ছবিটা যত এগিয়েছে ওঁকে দেখতে দেখতে তত অবাক হয়েছি“। যিশুর দিকেই এগিয়ে গেলেন নীলাঞ্জনা। গ্ল্যামারের ঝকঝকে আলোয় ধরা পড়ে গেল তাঁদের রিয়েল লাইফের ভালবাসা।
কালো পোশাকের বাউনসাররা তত ক্ষণে তাঁকে ধরে রাখতে পারছেন না। দর্শক তাঁর কাছে যেতে চাইছেন। ‘দশম অবতারের’ প্রবীর রায়চৌধুরী। “উফঃ কী দেখিয়েছে বুম্বাদা কে”, “কী চোখা চোখা সংলাপ”, “বয়স তো বোঝাই যায় না”। এ ভাবেই চারিদিকে হালকা রব। আর প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়? কোথাও কোনও অহংকার নেই। অনুরাগীদের সঙ্গে সেলফি তুলছেন। জানতে চাইছেন কেমন লেগেছে তাঁদের ছবি? প্রিমিয়ারে সারা ক্ষণ থেকেছেন টিম ‘দশম অবতারের’ সঙ্গে।
ছবির শেষে ছুটতে ছুটতে ঢুকলেন অনির্বাণ ভট্টাচার্য। যদিও ছবির প্রথম থেকেই একটানা তাঁকে দেখা গিয়েছে । কালো ফুল স্লিভ টি শার্ট আর জিন্স। একে বারে ফুরফুরে অবতারে। ইতিমধ্যেই ছবিতে তাঁর আর জয়ার গাঢ় রসায়ন সঙ্গে চুমু ‘ভাইরাল’। অন্য দিকে প্রবীর আর পোদ্দার জুটির বুদ্ধিদীপ্ত সংলাপ ঘুরতে শুরু করেছে দর্শকের মুখে মুখে। সংগীত পরিচালক অনুপম রায় বিদেশে পুজোর গান নিয়ে প্রবাসীদের মন ভাল রাখার দায়িত্বে। তিনি প্রিমিয়ারে অনুপস্থিত। কিন্তু সস্ত্রীক হাজির ছিলেন ছবির গায়ক রূপম ইসলাম। দেখা গেল ছবির আবহ নির্দেশক ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্তকেও। ছবি দেখতে এসেছিলেন কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, চূর্নী গঙ্গোপাধ্যায় থেকে গার্গী রায়চৌধুরি। মাঝখানে হাজির অঙ্কুশ-ঐন্দ্রিলা। দেখা গিয়েছে উজান গঙ্গোপাধ্যায়, পূজারিনী ঘোষকে।
বিশ্বকাপের আবহাওয়ায় দুর্গা পুজোর মাঠে আদৌ কি ‘রক্তবীজ’, ‘বাঘাযতীন’, ’মিতিন মাসি’ কে পেরিয়ে টিম 'দশম অবতার'-এর হাতেই কি উঠবে ট্রফি? প্রশ্ন থাকল বাঙালি দর্শকের।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।