অভিনেত্রী দেবলীনা কুমার
ছোটবেলা থেকেই দক্ষিণ কলকাতার বিখ্যাত পুজো ত্রিধারা সম্মিলনীতেই শারদীয়ার দিনগুলো কেটেছে আমার। যত ভাল-খারাপ, বকুনি খাওয়া, হাসি-মজা-ঠাট্টা, মন খারাপ– সব কিছু এখানেই। আমার বাবা, দেবাশিস কুমার এই পুজোর সঙ্গে ওতপ্রোত জড়িয়ে। আমরা গোটা পরিবারও।
বাঁশ খাটিয়ে বিভিন্ন দিক দিয়ে রঙিন কাপড় লাগিয়ে পুজো প্যান্ডেল সাজানো হচ্ছে– একদম ছোটবেলায় আমি সেই ত্রিধারাকেও দেখেছি। আবার এখন যখন কাতারে কাতারে ভিড় হয়, বাঁশি বাজিয়ে পুলিশরা চেষ্টা করে ভিড় কমাতে, সবাই দেখি স্রোতে ভেসে যায়, সেই ত্রিধারার পুজোও দেখি।
ত্রিধারায় ছোট্ট বসার জায়গায় ছোটবেলায় বেলুন নিয়ে খেলতাম। আর একটু বড় বয়সে প্যান্ডেলে বসে ছেলেদের আড় চোখে দেখাও চলেছে। মা হয়তো বুঝতে পারত, দুষ্টুমি করছি। কিন্তু পাড়ার কাকু-কাকিমাদের জন্য বকতে পারত না। আজও সেই ঘরেই বসি। বদল বলতে, ক্লাবের অল্প পয়সা হয়েছে বলে বাবা সেই ঘরটিতেই এসি বসিয়ে দিয়েছেন। আমরা সকলে সেখানেই এখনও আড্ডা দিই।
মায়েদের সিঁদুর খেলা দেখে বড় হওয়া আমি পরবর্তীতে নিজে সেই প্যান্ডেলেই সিঁদুর খেলেছি। বিবাহিত জীবনে এসে এবং অভিনেত্রী হওয়ার পরেও পাড়ার মেয়ের মতোই এখানে অঞ্জলি দেওয়া, ভোগ খাওয়া, বন্ধুদের সঙ্গে বসে আড্ডা, প্রেম, সব আগের মতো চলছে। আমার স্বামী, অভিনেতা গৌরব চট্টোপাধ্যায় অত্যন্ত ঘরকুনো। তবু আমাদের পুজো প্যান্ডেলে তাকে আসতেই হয়।
এ বছর পুজোটা বেশ অন্য রকম। আর সকলের মতো আমার কাছেও তাই। বাবা বা গৌরব, কারও কাছ থেকেই কোনও জামাকাপড় কেনাকাটা করিনি। নতুন জামাকাপড় পরব না, তা নয় হয়তো। সারা বছর অনেকেই নতুন জামাকাপড় দেয়। সেগুলো সব তো আর পরা হয় না। তাই সেগুলো পরব। কিন্তু প্রতি বছর বাবার সঙ্গে পুজোর বাজার হলেও এ বছর ইচ্ছেই করেনি। পুজোয় যেমন প্ল্যানিং থাকে, এই দিন এটা করব, ওই দিন ওটা– এ বছর তেমন কিছু হয়নি। পুজো বন্ধ থাকবে না। কিন্তু মনে উচ্ছ্বাস বা উত্তেজনা নেই আমার। বরং একটা দুঃখ আছে, অন্ধকার আছে।
সব বাঙালি অপেক্ষা করে দুর্গা পুজোর। আমিও করি। ভোগ খাব, অঞ্জলি দেব, সবই হবে। কিন্তু শহরে ঘটে যাওয়া ঘটনার বিচার চাইব ঠাকুরের কাছে। কলকাতায় যেন শান্তি ফিরে আসে, এটাই চাই। ন্যায় বিচার না পাওয়া পর্যন্ত এই প্রতিবাদ মিছিল শহরের বুকে চলবেই। মন খারাপের আবহে এ বছরের পুজো অনেকটাই যেন ম্লান আমার কাছে।
এই প্রতিবেদনটি আনন্দ উৎসব ফিচারের একটি অংশ