দেবদূত ঘোষ
অনেকেই বলেন, আমি বাম রাজনীতি করা একজন মানুষ হয়ে কী করে পুজো উদ্বোধনের ফিতে কাটতে যাই! দেখুন, মানুষ তো আমাকে রাজনীতি করার জন্য চেনেননি, চিনেছেন একজন অভিনেতা হিসেবেই। আমি আড্ডা আলোচনায় আস্তিক-নাস্তিকের তর্ক উপভোগ করি।
আমি মানুষের সঙ্গে থাকতে ভালবাসি। বাম রাজনীতি করি বলে, পুজোয় এইটুকু অন্তত যুক্ত থাকব না, এ ভাবনায় আমি বিশ্বাসী নই। তবে এও ঘটনা, আমি মহালয়ায় তর্পন করতে যাই না।
আমি মূলত থিয়েটার, সিনেমার লোক। আমার কাজই হচ্ছে মানুষকে খুশি রাখা। এই যে পুজো সে’ও তো মানুষকে নিয়েই একটা উৎসব, আর মানুষ নিয়েই আমার কাজ। আবার রাজনীতির ক্ষেত্রেও আমার কাজ মানুষ নিয়েই। সেটা বুক স্টল গুলোতে সময় কাটানো হতে পারে, মানুষের হাতে বই তুলে দেওয়া বা তাদের সঙ্গে কথা বলা হতে পারে অথবা বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়াও হতে পারে। এ ভাবেই কেটে যায় আমার সপ্তমী-অষ্টমী-নবমী।
অস্বীকার করব না, বিজয়ার দিনটায় যখন সাজানো গোছানো সমস্ত কিছু আস্তে আস্তে খুলে নেওয়া হতে থাকে, তখন আমার নাস্তিক মনেও ভিড় করে বিষণ্ণতা। ওই দিনটায় আমার মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে ঘুরতে চলে যাই জলে-জঙ্গলে। এবারেও জঙ্গলে যাচ্ছি। মংলাজোরিতে। পাখি দেখতে।
পুজোর সময় থিয়েটারও থাকে। এই বছর তিনটে নাটকে কাজ করছি। তিনটি তিন ধরনের কাহিনি। একটা মতি নন্দীর লেখা ‘কোনি’, দ্বিতীয়টা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা ‘জন্মান্তর’, তৃতীয়টা শেখ মুজিবুর রহমানের শতবর্ষে তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়ে ‘জয় বাংলা’।
শেষ নাটকের বিষয়বস্তুর মধ্যে এমন একটা ব্যাপার আছে, যা এখনকার রাজনীতিতে খুব প্রাসঙ্গিক। কেন বলি, যারা রাজনীতি করতেন, তাঁরা দেশকে ভালবেসে মানুষের জন্য ত্যাগ করতেন। গদির নীচে টাকা লুকিয়ে রাখতেন না। এর পর নিশ্চয়ই বিশদে কিছু বলতে লাগে না!
ক’দিন আগে আমার পরিচালিত সিনেমা ‘আদর’ রিলিজ করেছে, যেখানে একটি হাতি নায়ক। পৃথিবীটা শুধু যে মানুষের নয়, উদ্ভিদ-প্রাণী সবাইকে নিয়ে আমার সিনেমায় এ রকমই একটা বার্তা দেওয়া আছে। আমার ইচ্ছে, পরবর্তী কাজটিও পশুকে নিয়ে করার।
আমি তিন দশক এই বাংলা সিনেমায় কাজ করেছি। ইদানীং একটা ঘোরতর পরিবর্তন লক্ষ করছি। বহু দিন ধরে আমি ইউনিয়নের সহ-সম্পাদকের দায়িত্ব আমি পালন করেছি। কিন্তু ২০১১-র আগে টালিগঞ্জের কাজে রাজনৈতিক প্রভাব বুঝতে পারতাম না। কিন্তু এখন হাড়ে হাড়ে সেটা টের পাই। এ গুলি বোধ হয় ভাল লক্ষণ নয়।
অনুলিখন: মেঘদূত
এই প্রতিবেদনটি 'আনন্দ উৎসব' ফিচারের একটি অংশ।