দুর্গাপুজোকে ঘিরে বাঙালির অনেক আবেগ জড়িয়ে। সবচেয়ে বড় উৎসব। আর পাঁচটা বাঙালির মতো আমারও পুজোর লক্ষ কোটি স্মৃতি। পুজোর আগে থেকে জামাকাপড় পাওয়া নিয়ে একটা প্রতিযোগিতা চলতেই থাকত। কার কতগুলো নতুন জামা হল। কে কে কী উপহার দিল।
আমি গল্ফ গ্রিনে বড় হয়েছি। সেখানে পাড়ায় পাড়ায়, অলিতে গলিতে দারুণ দারুণ সব পুজো হত। ছোটবেলায় সব প্যান্ডেলে গিয়ে গিয়ে ঠাকুর দেখতাম, আর গুনতাম ক’টা ঠাকুর দেখেছি। বড় হওয়ার পরে পেশার কারণে আর সেই কড়ি গোনা হয়ে ওঠে না। বিশেষ করে পুজোর সময় নানা জায়গায় যেতে হয় অনুষ্ঠানের জন্য। তাই নিজের বাড়ির পাশের পুজোগুলিতেও আর ঢুঁ মারা হয় না।
তবে এর যে ভাল দিক হল, সারা বিশ্বের দুর্গাপুজো দেখার সৌভাগ্য হয়েছে আমার। সারা ভারতের অন্যান্য শহরের বড় ছোট পুজোতে গান করেছি। সেখানকার ঠাকুর দেখেছি। বিদেশের পুজোয় প্রবাসী বাঙালিদের সঙ্গে পুজো কাটিয়েছি। ভিনদেশে গিয়েও বাঙালিরা নিজেদের ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য যে কতটা উদ্য়োগী, তা সত্যিই প্রশংসনীয়।
কিন্তু এত পাওয়ার মধ্যেও ছোট ছোট আনন্দগুলি হারিয়ে গিয়েছে। নিজের ভিটেমাটির পুজোর গন্ধ পাওয়ার সুযোগ আর পাই না। তবে কোভিডের সময় পুজোয় আমি একবার বাড়িতে ছিলাম। ডিজিটালি অনেক অনুষ্ঠান হত তখন। সে বার পুজোটা একটু অন্যরকম ছিল। কিন্তু কলকাতা শহরের পুজোয় থাকতে পেরে ভাল লেগেছিল।
ঠিক এ বারও পুজোটা একটু আলাদা। আনন্দের নয়। আরজি করের নারকীয় ঘটনার পর তাতে খানিক ছন্দপতন হয়েছে। যাঁরা মানুষের মতো মানুষ, তাঁদের মানসিক অবস্থাটা এই জায়গায় নেই যে, প্রতি বারের মতো আনন্দ করতে পারব।
পুজো পুজোর মতো হবে। অনেকের রোজগার এই সময়ের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু উদযাপন করার মতো পরিস্থিতি এ বার নেই। এ বছর যদি সবাই মিলে বিচারের জন্য গলা তুলি, তা হলে হয়তো পরের বছর আবার খুব ধুমধাম করে নারীশক্তির আরাধনা করতে পারব।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।