Ambarish Bhattacharya Puja Memories

পুজোর আগে বিগ বি-র সঙ্গে অভিনয় করার স্বপ্ন দেখছেন? কী বললেন অম্বরীশ ভট্টাচার্য

পুজো। প্রেম। গান। শক্তি-সুনীল। অমিতাভ বচ্চন। সবটা নিয়ে খোলামেলা আড্ডায় অম্বরীশ ভট্টাচার্য

Advertisement

আনন্দ উৎসব ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৮:২২
Share:

আচ্ছা, আপনাকে ‘মোটা’ বলে এ পর্যন্ত কত জন পিছনে লেগেছে?

Advertisement

অসংখ্য জন। কিন্তু তাতে আমার কিস্যু এসে যায় না। আমার প্রথম কাজ ' রাজা গজা'। সেখানে একটা মোটা ছেলের দরকার ছিল। আমার মোটাত্ব সেখানে কাজে লেগেছে!

আপনার এক স্থূলকায় সহকর্মী কিন্তু ‘মোটা’ বললে মারধোর করেন!

Advertisement

তাই নাকি? আমি জানি না তো। আমি মনে করি মোটা বা রোগা হওয়ার চাইতে ফিট হওয়াটা বেশি জরুরি।

কী করে বুঝলেন আপনি ফিট?

'দুর্গরহস্য' ছবিতে আমি মধ্যপ্রদেশে শুটিংয়ের গিয়ে প্রতিদিন চারশো সিঁড়ি ওঠা নামা করেছি বারো দিন। তখনই বুঝেছি।

আচ্ছা ধরুন পুজো প্যান্ডেলে ঠাকুর দেখতে গিয়েছেন। ফট্ করে একটা দুষ্টু ছেলে আপনার ভূঁড়িটা টিপে দিল। কী রকম লাগবে?

(হাসি) হয়েছে তো এই রকম। সিঁথির কাছে একটা বাচ্চাদের স্কুলে গিয়েছিলাম। সেখানে একটা ছোট্ট বাচ্চা এসে ভুঁড়ি টিপে দিল। আমিও তৎক্ষণাৎ ঘুরে গিয়ে সেই বাচ্চার ভূঁড়িটা টিপে দিলাম।

সাধারণত মোটাদের লোকে চটকাতে ভালবাসে। ছোটবেলায় কেউ আপনাকে চটকেছে?

ছোটবেলা থেকে আজ অবধি মহিলারাই আমাকে বিশেষ করে শুধুই চটকেছেন। গাল টিপে দিয়েছে।

বোঝো! তারা এখনও আপনার জীবনে আছে?

না, না। কেউ নেই। এসেছে এবং চলে গেছে।

তা হলে বিয়েটা?

ওটা বোধ হয় আর হবে না।

শোনা যায়, আপনি তো খুব খেতে ভালোবাসেন!

বয়স বাড়ার ফলে খাওয়াদাওয়া অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছি। তিন চার বছর ধরে আমি তেমন কোন ভাজাভুজি খাই না। আর সূর্য ডোবার পর তো কিছুই খাই না। খেলেও সামান্য।

আপনার গানের গলাটি ভারী সুন্দর!

আরে বাবা! অনেক ধন্যবাদ। তবে আমি সে ভাবে গান শিখিনি কারও কাছে। তবে থিয়েটারের গানে আমার গুরু মা কেতকী দত্ত। উনি যত দিন বেঁচেছিলেন, ওঁর সঙ্গে থিয়েটারের গানের শো-ও করতাম।

এখন সোহিনী সেনগুপ্তের সঙ্গে করছেন!

হ্যাঁ সেটা ঠিক। যে ক’টা শো করেছি সবই হাউসফুল। খুবই ভাল লাগছে। ১৮৩৫ সাল থেকে শুরু করে থিয়েটারের গান আছে আমার কাছে।

পুজোর সময় মাচা অনুষ্ঠান করেন এখন?

আগে করতাম। এখন আর করি না। তার কারণ আমার মনে হয় সব কিছুরই একটা সময় থাকে। ২০১৬-১৭ সাল অবধি বছরে চারশো থেকে সাড়ে চারশো মাচা করেছি।

পুজোয় 'রক্তবীজ' ছবিতে আপনি আছেন। সে ছবি নিশ্চয়ই দেখবেন আশা করা যায়। আর অন্য ছবিগুলো দেখবেন না?

পুজোর সময় যে ক’টা ছবি রিলিজ করছে, প্রত্যেকটা দেখব। আমার সব চেয়ে পছন্দের পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ছবি আছে পুজোয় 'দশম অবতার'। সে ছবি দেখার জন্য মুখিয়ে আছি। 'মিতিন মাসি', 'বাঘা যতীন'ও দেখব।

পছন্দের পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়? তা হলে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়? ওঁর ছবিতে আপনার অভিনয় স্মরণীয় হয়ে থাকবে তো....

কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় আমার আমার গুরু। ঈশ্বরের মতো। কিন্তু সৃজিতদা আমার প্রিয় পরিচালক। সৃজিতদার অ্যাপ্রোচটা আমার কাছে খুব স্মার্ট লাগে।

আপনার বাবা তো সেই শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতার নায়ক, 'অবনী বাড়ি আছো'র অবনী।

হ্যাঁ। পুরো নাম অবনী ভট্টাচার্য।

বাবা কী করতেন?

ফ্রিলান্স সাংবাদিক ছিলেন। প্রায় সব বড় পত্রপত্রিকায় সাংবাদিকতা করেছেন। পরবর্তী কালে ' বেঙ্গল ফিল্ম জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন' -এর প্রেসিডেন্ট হন। এই সব কাজের সূত্রে বহু বিখ্যাত মানুষ বাড়ি আসতেন। বাবা আর শক্তি চট্টোপাধ্যায় খুবই বন্ধু ছিলেন।

কী রকম?

দু’জনে ঘণ্টার পর ঘন্টা গল্প করতেন। আড্ডা মারতেন। কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় তো একটা কবিতার মধ্যে দিয়ে তাঁর বন্ধুকে অমর করে গেলেন।

আপনার সঙ্গে শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের সম্পর্ক কেমন ছিল?

আমি তখন ক্লাস নাইন কি টেন-এ। এক দিন জিজ্ঞাসা করেছিলাম ওঁকে, আচ্ছা, অবনীটা কে? আমার বাবা? আমার বন্ধুরা বলে, আমি নাকি ঢপ মারি। উনি বললেন, ‘তোর কি মনে হয়?’ বললাম, অবনী তো আমার কাছে নানা ভাবে এসেছে। কখনো মনে হয়েছে অবনী এক শুভবুদ্ধি, কখনও প্রেম, কখনও’বা অবনী একটা বিপ্লব। কড়া নেড়ে যাকে বারবার ডাকা হচ্ছে। আমার কথা শুনে উনি খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে বলেছিলেন, ‘বাহ, ভাল ভেবেছিস তো। তোর আমার কবিতা ভাল লাগে?’ আমি বলেছিলাম, ‘না, তোমার থেকে আমার সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতা বেশি ভাল লাগে।’ তখন উনি খানিকক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে একটা শিশুর মতো বলেছিলেন, ‘বড় হ। তখন দেখবি আমিই বেশি ভাল।’ সত্যিই তাই। এখন মনে হয়, ওঁর মতো পদ্য বাংলাদেশে খুব কম মানুষই লিখেছেন।

শক্তি চট্টোপাধ্যায় তো বারদুয়ারিতে যেতেন!

সে তো আমার বাবাও যেতেন ওঁর সঙ্গে।

আপনি গেছেন বারদুয়ারি?

আমি এমনি দেখতে গেছি বারদুয়ারি জায়গাটা কেমন?

অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে পর পর দুটো বিজ্ঞাপনের কাজ করলেন। তার পর যোগাযোগ আছে?

হ্যাঁ। ওঁর নম্বর আছে আমার কাছে। নিউ ইয়ার, ওঁর জন্মদিন, দিওয়ালিতে মেসেজ করি। পাঁচ মিনিটের মধ্যে আমাকে উত্তর দেন।

এ বছর বিজয়ায় শুভেচ্ছা জানাবেন না?

বিজয়া-তে ওঁকে শুভেচ্ছা জানাইনি কোনও দিন। ওঁর পছন্দের পরব গুলিতে শুভেচ্ছা জানাই। তবে আমি জানি, বিজয়াতে শুভেচ্ছা জানালে উনি সঙ্গে সঙ্গে উইশ করবেন, এতটাই ভদ্র মানুষ। ওঁর সঙ্গে দু' বার কাজ করলাম। দু’বারই অনেক আড্ডা মেরেছি। ২০২২ সালে যখন আমি ওঁর সঙ্গে শুটিং করতে গেলাম ওঁর ভ্যানে উঠেছিলাম। অনেক গল্প করলেন ভ্যানে বসেই। উনি কমলালেবু খাচ্ছিলেন। আমাকে দিলেন। ওঁর কাছ থেকে একটা ব্যাপার শেখার আছে। এত্ত আপডেট একজন মানুষ, কী বলি!

এ রাজ্য মানে বাংলা সম্পর্কে ওঁর দৃষ্টিভঙ্গি কেমন?

পুরনো বাংলা থিয়েটার নিয়ে উনি অনেক কিছু জানেন। উনি শম্ভু মিত্রের নাটক দেখেছেন। 'রক্তকরবী' দেখেছেন। রবি ঘোষকে খুব শ্রদ্ধা করেন।

ওঁর সঙ্গে বড় পর্দায় অভিনয় করার স্বপ্ন দেখেন?

যে ব্যাপারটা আমার হাতে নেই তা নিয়ে আমি কোনও স্বপ্ন দেখি না।

দেখতে দেখতে পুজো এসে যাচ্ছে। পুজোয় কী করছেন?

পুজোয় আজকাল খুব বেশি বেরই না। রেস্ট নিই। পড়ি। সিনেমা দেখি। গান শুনি। খাইদাই।

আড্ডা?

পুজোর আড্ডার ব্যাপারে আমি সিলেকটিভ। হাতে গোনা তিন চারজন বন্ধু আছে আমার। আড্ডা দিলে তাদের সঙ্গেই দিই।

অনুলিখনঃ সংযুক্তা বসু

এই প্রতিবেদনটি 'আনন্দ উৎসব' ফিচারের একটি অংশ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement