অভিনেত্রী সন্দীপ্তা সেন
আমি ভবানীপুরের মেয়ে। ফলে পুজো সব সময়ই একটা হই হই ব্যাপার। প্রায় ৩০০ বছরের পুরনো বাড়ি ছিল আমাদের। খুব ছোটবেলা থেকেই হরিশ মুখার্জি পার্কের পুজো ছিল আমার কাছে প্রধান আকর্ষণ। কারণটা আর কিছুই নয়, নানা ধরনের রাইড। ছোটবেলার সেই অভ্যাস এখনও কাটাতে পারিনি। পুজোর সময় যেখানেই মেলা বসে, রাইড আসে তা সে নাগরদোলা হোক বা অন্য কিছু আমি চড়বই। পরিচিত মুখ হয়ে ওঠার পরও একবার ওড়নায় মুখ লুকিয়ে নাগরদোলা চড়েছি। আর ছোটবেলায় তো বটেই। তাই বাড়ির কাছে হরিশ মুখার্জি পার্কের পুজোতে যেতেই বেশি পছন্দ করতাম। প্রতিমা দর্শনের আগেই গিয়ে হাজির হতাম ওই রাইডগুলোর নীচে। বাবা অনেক সময় ধমকে মণ্ডপে ঢুকিয়ে নিত।
আর একটু যখন বড় হলাম, একা বেরনোর ছাড়পত্র পেলাম। সঙ্গে হয় বন্ধুরা অথবা, তুতো দিদিরা। প্রথম একা একা পুজোর সময় ঘুরতে গেছি যখন, আমি ক্লাস ইলেভেনে পড়ি। তা’ও বাবা ছিল সঙ্গে, তবে একটু দূরে দূরে থেকেছিল। সেই থেকেই শুরু ছেলে দেখা। নাহ, একেবারেই নিজের জন্য নয়। প্রেম করব কখনও ভাবিনি। বরং আমি অন্যদের জন্য ছেলে খুঁজে দিতে বেশি পছন্দ করতাম।
পুজোর মণ্ডপে মণ্ডপে ছেলে দেখে বেড়ানোর আনন্দই আলাদা। আর সেই ছেলেও যদি ফিরে তাকায়, আহা! অনেক বন্ধু, দিদির সঙ্গে এই সব নিয়ে মজা করেছি। ‘এই দেখ দেখ তোর দিকে তাকালো’… তারপর এমনও হয়েছে সেই বন্ধু বা দিদি আমাকে ঢাল বানিয়ে প্রেম করতে গিয়েছে। বাড়িতে বলেছে সন্দীপ্তার সঙ্গে যাচ্ছি। আর ওদের মধ্যে আমি হয়ে থেকেছি ‘কাবাবের হাড্ডি’ হয়ে।
আমি সব সময়ই বাবা-মায়ের বাধ্য মেয়ে। তাই পুজোর সময় মারকাটারি কোনও দুঃসাহসিক কাজ করেছি, এমনটা মনে পড়ে না। আসলে আমার বাবা-মা খুবই ভাল মানুষ। ওঁরা ভাল বাবা-মা, তাই আমিও ভাল মেয়ে। কখন কোন কাজটা মেয়ে করতে পারে ওঁরা জানতেন। শাসনে আগলে রাখতেন বটে, তবে তা কখনই বকুনি হয়ে দাঁড়ায়নি। তাই আমারও আর কোনও দুষ্টুমি করে ওঠা হয়নি।
পুজো মানে ঘোরাঘুরি, এই বিষয়টা কেটে গেল কেরিয়ার শুরু হওয়ার পর। এখন কোনও ভাবেই ভিড় রাস্তায় ঠাকুর দেখা হয় না। তবে হ্যাঁ, বেশ কিছু মণ্ডপে যাই। আমাদের মতো অভিনেতারা অবশ্যই কৃতজ্ঞ মানুষের কাছে, তাঁদের জন্যই বেশ কিছু খুঁটি পুজো, পুজোর উদ্বোধনে যেতে পারি আমরা। অনেক সময় বিচারক হিসেবেও যাই। এর বাইরে নিজেদের বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গেই পুজো কাটে।
গত কয়েক বছর পুজোর সময় কলকাতায় ছিলাম না। এ বছর গোটা পাঁচ দিনই থাকব। পরিবারের সঙ্গে। সৌম্যর সঙ্গে। আমাদের দু’জনের বন্ধুবান্ধবদের মধ্যেও বেশ ভাল সম্পর্ক রয়েছে আমাদের। তাই হইচই তো হবেই। গত বছর পুজোর মধ্যে একদিন টানা রিকশায় চেপে ভবানীপুর এলাকাটা ঘুরেছিলাম। দারুণ মজা হয়েছিল। এবারও ইচ্ছে আছে খুব মজা করার। আমি একটা নতুন কমপ্লেক্সে থাকতে শুরু করেছি। এখানে পুজো হয়। সবাই এক সঙ্গে মজা করব। এই নিয়ে দ্বিতীয় বছর সৌম্যর সঙ্গে পুজো কাটাব। ফলে আর একটু বেশি প্ল্যানিং চলছে।
শাড়ি পরে সেজেগুজে থাকব সারাদিন। এমনিতে আমি শাড়ি পরতে পছন্দ করতাম না খুব একটা। কিন্তু এখন মলমল শাড়ির ওপর দারুণ একটা টান জন্মেছে। কিনব ভাবছি একটা, রেট্রো লুকের ফুলছাপ একটা শাড়ি এবার পরবই পুজোয়। আর গয়না, মাথায় ফুলের মালা—সব মিলিয়ে জমজমাটি করে তুলব।
এই প্রতিবেদনটি 'আনন্দ উৎসব' ফিচারের একটি অংশ।