ক্যামডেনের দুর্গা প্রতিমা
শারদোৎসব দেশের মাটিতেই হোক বা বিদেশে, উন্মাদনায় এক্কেবারে এক! ঠিক যেমন লন্ডনের ক্যামডেনের পুজো। তাদের এ বারের থিম 'ঘরে ফেরা'। যার সবটুকু জুড়ে আছে বাংলার রূপ-রস-গন্ধ।
১৯৬৩ সাল থেকে লন্ডনের সুইস স্কোটেজ লাইব্রেরিতে শুরু হয় ক্যামডেনের এই দুর্গাপুজো। উৎসবের দিনগুলিতে দেশের মাটির মতোই মেতে থাকে ক্যামডেন। যেন বিদেশের মাটিতে এক টুকরো বাংলা! ছয় দশক আগে লন্ডনে বসবাসকারী কয়েক জন প্রবাসী বাঙালির হাত ধরে এই পুজোর শুরু। যা এ বছর পা দিল ৬১তম বর্ষে। এমন কি কোভিড অতিমারির ভয়াল সময়ও স্তব্ধ করতে পারেনি উমার আগমন।
ক্যামডেনের দুর্গাপুজোর আভিজাত্যের কারণেই বারবার শিরোনামে উঠে এসেছে তারা। আর সেই একই কারণে দেশ-বিদেশের বহু সংবাদমাধ্যম উপস্থিত হয় এখানে। বাংলার রীতিনীতি মেনেই পঞ্জিকা দেখে টেমসের তীরে খুঁটি পুজো দিয়েই প্রতি বছর পুজোর সূচনা হয়। এ বছরও সে ভাবেই শুরু হয়েছে দেবীর আরাধনা। প্রতি বারই ষষ্ঠীর সকাল থেকে শুরু করে দশমীর দিন সিঁদুর খেলায় মেতে শেষ হয় শারদীয়ার আনন্দ। মণ্ডপের প্রতিটি কোণে থাকে বাঙালিয়ানার ভরপুর ছোঁয়া। ষষ্ঠী, সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী ও দশমীর পুজো, সন্ধিপুজো, অঞ্জলি, এমনকি কুমারী পুজো– কিছুই বাদ থাকে না।
এ বারেও প্রত্যেক দিন থাকবে বিশেষ অনুষ্ঠান। নাচে-গানে মেতে থাকবে ক্যামডেনের মণ্ডপ। লালপেড়ে সাদা শাড়িতে মেয়েরা, ছেলেরা ধুতি-পাঞ্জাবি পরে এ ক’দিন পুরোদস্তুর বাঙালি। সঙ্গে থাকবে শঙ্খ, উলুধ্বনি, সিঁদুর খেলা, ধুনুচি নাচ। প্রত্যেক বারের মতো এ বছরও থাকবে খাওয়াদাওয়া, থাকবে হরেক রকম বাঙালি খাবার– যেমন, বাঙালির প্রিয় রসগোল্লা, গোলবাড়ির কষা মাংস, ফুচকা, মোমো প্রভৃতি।
উৎসবের সবটুকু তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করবে সুইস স্কোটেজ লাইব্রেরি চত্বর।
এখানকার পুজো কমিটির প্রেসিডেন্ট আনন্দ গুপ্ত বলেন, "এত বছর ধরে আমরা পঞ্জিকা দেখেই পুজো সেরে আসছি। মায়ের আশীর্বাদ নিয়ে বাংলার শ্রেষ্ঠ উৎসব এবং সংস্কৃতির যুগলবন্দি এক সুতোয় বেঁধে রেখেছে আমাদের। আশা রাখি, আমাদের এই প্রচেষ্টা আগামী প্রজন্মের হাত ধরেও বইতে থাকবে বছরের পর বছর, ক্যামডেনের এই পুজো নিজের ধারাবাহিকতায় অক্ষুণ্ণ থাকবে।”
এ সবের মাঝেই অবশ্য সন্ধিপুজোর ক্ষণে অভয়াকে স্মরণ করে জ্বলবে একশো আট প্রদীপ। সেই দুঃখকে বুকে নিয়ে মাতৃ আরাধনার মাধ্যমে ভেদাভেদহীন এক সমাজের প্রার্থনা করবে ক্যামডেন।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।