প্রবাসে দুর্গাপুজো একটু ভিন্ন স্বাদের, কিছু চেনা ছবিকে নতুন করে সাজানো। আমেরিকার নর্থইস্ট ওহায়ো রাজ্যের সবচেয়ে বড় দুর্গাপুজো হয় ক্লিভল্যান্ড চার্চে। এখানে প্যান্ডেলে পুজোর চল নেই। চার্চের প্রার্থনাগৃহে মাতৃবন্দনা যেন ‘সর্বধর্মের সমন্বয়’। এই পুজোর বয়স প্রায় কুড়ি বছর এবং তিনশোর বেশি বাঙালি এই পুজোয় যোগদান করেন। এখানে এই সময় হেমন্তের হিমেল পরশ অনুভূত হয়। কাশফুল খুঁজে পাই না, বরং গাছে গাছে লাগে নানা রং। ‘ফল-কালার’ই আগমনীর বার্তা আনে।
দেবীপক্ষের এক শুক্রবারের সন্ধ্যা থেকে রবিবারের সন্ধ্যা, এই আড়াই দিনের দুর্গোৎসব। বাঙালি অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা নিজেরাই উদ্যোক্তা। মিলেমিশে চলে ফল কাটা, নৈবেদ্য সাজানো, চন্দন বাটা, প্রদীপের সলতে পাকানো, প্রসাদ বিতরণ ইত্যাদি। সিডি-তে বাজে ঢাক, পৌরোহিত্য করেন বর্ষীয়ান সদস্য। ২০১৮-তেই নতুন মাটির প্রতিমা এসেছে কুমোরটুলি থেকে। শুক্রবার সন্ধ্যায় বোধন ও মহাষষ্ঠীর পুজো, পুরুষ ও মহিলারা সাজেন সাবেক বাঙালি ঘরানায়। শনিবার হয় সপ্তমী, অষ্টমীর পুজো ও পুষ্পাঞ্জলি, করজোড়ে মায়ের কাছে বলি, ‘রূপং দেহি, জয়ং দেহি...’। রাত্রে কাঁসরঘণ্টা বাজিয়ে, ধূপধুনোতে চলে সন্ধিপুজো। শনিবারের ভিড় এবং মায়ের সঙ্গে সেলফি তুলে সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্ট করার তাড়া চোখে পরার মতো। হলঘরের একটি মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় উপভোগ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, থাকে স্থানীয় বাসিন্দাদের কয়েকটি স্টল, সঙ্গে পেটপুজো। আমরা নিজেরাই রান্না করে মেনুতে রাখি খিচুড়ি, লাবড়া, ভাজা, পোলাও, মাংস ও চাটনি। রবিবার সকালে হয় মহানবমীর ধুনুচি নাচ, দুপুরে দেবীবরণ ও সিঁদুরখেলা। চোখের জলে মিষ্টিমুখে শুভবিজয়া, বলি, ‘আসছে বছর আবার হবে’! এখানে প্রতিমা নিরঞ্জনের ব্যবস্থা নেই, তাই পুজোশেষে প্রতিমা চলে যায় এক সদস্যের বাড়ির স্টোররুমে।
পুজো যখন শেষের পথে, তখন ভাবি, যদি ম্যাজিসিয়ান হয়ে নিয়ে আসতাম কলকাতার দুর্গোপুজোকে, তা হলে হয়তো পেতাম শিউলির গন্ধ, আলোর রোশনাই, প্যান্ডেলে-প্যান্ডেলে ঠাকুর দেখার মজা, লাইন দিয়ে প্রতিমাদর্শনের ব্যাকুলতা, বিসর্জনের হুল্লোড় ও আনন্দ। পর ক্ষণেই ভাবি, হয়তো এখানে পুজোর সেই মাদকতা বা উন্মাদনা নেই, কিন্তু আছে একাত্ববোধ, আছে বাড়ির পুজোর ছোঁয়া। তাই প্রতি বছরের মতো এ বছরও দুর্গোৎসবে মাতব হাজার হাজার মাইল দূরে কলকাতায় ফেলে আসা কিছু সোনালী স্মৃতি হাতড়ে।