গত বছর সাংহাইয়ের পুজোয়। ছবি: প্রতিবেদক।
অনেক বছর ধরে চিনের সাংহাইয়ে থাকি। যে বছর পুজোয় কলকাতা যেতে পারি না, অনেকেই জিজ্ঞাসা করেন, ‘‘চিনে কি কোনও পুজো হয়?’’ হ্যাঁ, হয়। তবে যতদূর জানি, এ দেশে দুর্গাপুজো হয় একমাত্র আমাদের শহরেই। আয়োজক ‘সাংহাই আড্ডা’। বুলেট ট্রেনের দেশে, বুলেট ট্রেনের গতিতে আমাদের পুজো এক যুগ পার করতে চলল। ১২ বছর ধরে এই কুংফু-র দেশে দুর্গাপুজো করছি আমরা।
পুজোর অল্প কয়েক দিন বাকি। তাই জোরকদমে তোড়জোড় চলছে আমাদের। কাছাকাছির শহরগুলো থেকে অনেক বাঙালি আসেন এখানে। আমাদের পুজোর জন্য অবশ্য স্থায়ী কোনও জায়গা নেই। এ বার পুজো হবে ‘কাবাব অন দ্য গ্রিল’ রেস্তরাঁর উপরের তলায়। আর পুজো হবে সপ্তাহ দুয়েক পরে, ২৭-২৮ অক্টোবরের সপ্তাহান্তে। কী আর হবে। ওই যে বলে, বিদেশে নিয়ম নাস্তি!
এ দেশে প্রতিমা নিরঞ্জনের কোনও উপায় নেই। কয়েক বছর আগে কলকাতা থেকে নিয়ে আসা প্রতিমার পুজো করি আমরা। পুজোর সরঞ্জামও বেশির ভাগ আনা হয় কলকাতা থেকেই। কলাবৌ অবশ্য চিনের। কয়েক বছর আগে একটি ঢাকও জোগাড় করা হয়েছিল। আমরাই পালা করে সেই ঢাক বাজাই। কয়েক বছর বাজাতে বাজাতে হাত বেশ পাকা হয়ে গিয়েছে। পুজোর ঠিক আগে পুরোহিত মশাই আসবেন কলকাতা থেকে।
আরও পড়ুন: সিঁদুরের লাল রঙে রাঙা হয়ে ওঠে সকলের মুখ
আরও পড়ুন: দেশের স্মৃতি ফিরিয়ে দেওয়াটাই হইচই-এর মূল থিম
পুজো যত এগিয়ে আসছে, উত্তেজনার পারদ চড়ছে। পুজোর খুঁটিনাটি আয়োজন তো রয়েইছে। তার সঙ্গে আছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আর খাওয়াদাওয়ার বন্দোবস্তও। জমজমাট মেনু আমাদের। তাতে থাকবে ফুচকাও।
কী হয় পুজোর ওই দু’দিন? সকাল থেকেই শুরু হয়ে যায় ধুমধাম। জিনিসপত্র গোছানো, আলপনা দেওয়া, ভোগ রান্না করা— সকলের হাতেই কোনও না কোনও কাজ। ষষ্ঠী, সপ্তমী ও অষ্টমীর পুজো হয়ে যায়
প্রথম দিনেই। বিকেলে হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। শুধু বাঙালি নয়, সাংহাইবাসী অনেক ভারতীয়ই জড়ো হন আনন্দে সামিল হতে। আসেন বাংলাদেশিরাও। এমনকি, বেশ কিছু চিনা অতিথিও আসেন। সব থেকে বেশি আনন্দ করে ছোটরা। বসে আঁকো প্রতিযোগিতা, কবিতা, নাচ, গান, নাটক, সব কিছু নিয়ে এক টুকরো কলকাতা হয়ে ওঠে আমাদের পুজো-প্রাঙ্গণ।
এ বার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ— ‘ইন্ডিয়ান ক্লাসিকাল ডান্স, বাই আ চাইনিজ় গ্রুপ’। এ ভাবেই সাংস্কৃতিক বিনিময়ে আমাদের পুজো প্রকৃত রূপেই হয়ে ওঠে সর্বজনীন।