প্রতীকী ছবি
দেখতে দেখতে পুজো এসেই গেল। উৎসবের মরশুমে কোন বাঙালি আর ঘরের কোণে আটকে থাকে! কাশ ফুল মাথা ঝাঁকালো আর আকাশটা পেঁজা তুলোর মতো মেঘ ভাসল কী, শুরু হয়ে যায়, ‘এই পথ যদি না শেষ হয়’-এর বৃন্দগান। সেখানে কি আর গাড়ির পেছন দিকে হাত গুটিয়ে বসে থাকলে চলে!
কিন্তু নিজের শহরের বাইরে গাড়ির স্টিয়ারিং ছুঁতে দেবে কে? এমন চিন্তার দিন শেষ। ভারতের নানা শহরে এখন সেলফ ড্রাইভ মানে নিজেই চালানোর জন্য গাড়ি ভাড়া দেওয়া হয়। ড্রাইভারের সঙ্গে ঝগড়া-ঝাঁটির দিন শেষ, এখানে যাব না, ওখানে গেলে বেশি টাকা দিতে হবে-র সমস্যা নেই, হাতে যদি থাকে গুগল ম্যাপ আর মস্তিষ্কে অজানার হাতছানি। কেবল কয়েকটি ব্যাপার মাথায় রাখুন। এই প্রতিবেদনে রইল তারই কথা।
১. বুক করার আগে
এই মুহূর্তে সেলফ ড্রাইভ বা নিজেই চালানোর জন্য গাড়ি ভাড়া দেওয়ার অনেক সংস্থা আছে। তবে প্রথম বারের জন্য, জুম, রেভ বা মাইচয়েজ-এর মতো প্রতিষ্ঠিত সংস্থার থেকে গাড়ি ভাড়া নেওয়াই ভাল। তবে প্রতিষ্ঠিত সংস্থাগুলোর বাইরে আরও অনেক কোম্পানি নিজেই চালানোর জন্য গাড়ি ভাড়া দেয়। সে ক্ষেত্রে খরচও কিছু কম হয়।
নিজেই চালানোর জন্য গাড়ি ভাড়া নেওয়ার আগে মনে রাখবেন, পাহাড়ি এলাকায় চালানোর আগে মানসিক ভাবে প্রস্তুত হয়ে নেবেন। কলকাতার রাস্তা আর মানালির সাপের মতো আঁকাবাঁকা রাস্তা কিন্তু এক নয়। আর অবশ্যই রাতের বেলা অজানা রাস্তায় চালানোর ঝুঁকি নেবেন না। গুগল ম্যাপ দেখে কত সময় লাগবে দেখে নিন, সেই বুঝে সূর্য ডোবার আগে রাতের আস্তানায় পৌছে যেতেই হবে। আর কখনওই সারদিনে ৬-৭ ঘন্টার বেশি গাড়ি চালাতে যাবেন না।
২. কয়েকটা সেরা রাস্তা
হিমাচল প্রদেশের সিমলার অত্যাশ্চর্য ল্যান্ডস্কেপ তো আছেই, বিশেষ করে সিমলা-মানালি রুট। চাইলে বেছে নিতে পারেন মুম্বই থেকে গোয়ার উপকূলীয় রাস্তা। আপনার উপর ভালবাসা বৃষ্টি হয়ে ঝরবে। এমনই এক রাস্তা কোচি থেকে মুন্নার। সমুদ্র থেকে পাহাড়ি চা বাগানে পৌঁছে যাবেন মাত্র ৪ ঘণ্টায়। আর অবশ্যই বাংলার নিজস্ব প্রেমের সড়ক, দার্জিলিং থেকে গ্যাংটক রুট তো আছেই।
৩. গাড়ি বাছবেন কী ভাবে?
মনে রাখবেন, দু’টো অজানা জিনিস রাখবেন না। রাস্তা যদি অজানা হয়, তা হলে গাড়ি বুক করবেন নিজে কলকাতার রাস্তায় যেমন গাড়ি চালান, তেমন। অটোম্যাটিক বা মানুয়াল গিয়ারের ক্ষেত্রে নিজের যেটা পছন্দ সেটা নিতে পারেন। তবে নিজের শহরে অটোম্যাটিক গাড়ি চললে, ভুল করেও অজানা জায়গায় ম্যানুয়াল গিয়ারের গাড়ি নেবেন না। তার পরের যে জিনিসটা মনে রাখতে হবে, তা হল, কতজন যাত্রী বা জিনিসপত্র আছে। ২-৩ জন হলে ছোট হ্যাচব্যাক গাড়ি চলতে পারে। কিন্তু ৪-৫ জন বা তার বেশি হয়ে গেলে, বড়ো এসইউভি গাড়ি নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
উপরন্তু, মনে রাখবেন, ম্যাপ দেখার সুবিধা গাড়িতে থাকলে ভাল হয়। নিদেনপক্ষে যেন ফোন সামনে রাখার ব্যবস্থা থাকে।
৪. নিরাপত্তা হোক প্রথম শর্ত
প্রথম প্রথম অজানা রাস্তায় গাড়ি ছোটানোর উত্তেজনা স্বাভাবিক। কিন্তু মনে রাখবেন, উত্তেজনার বসে কোনও অপ্রত্যাশিত ঘটনা যেন না ঘটে। রাস্তা যতই সোজা আর মসৃণ হোক না কেন, ঘণ্টা প্রতি ৮০ কিলোমিটারের বেশি গতি যেন না ওঠে। পাহাড়ি রাস্তায় গতি থাক ২০ থেকে ২৫ কিলোমিটারের মধ্যে। তার পরেও যদি দুর্ঘটনা ঘটে, প্রথমে মনে রাখবেন, শান্ত থাকুন। সমস্ত যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন আর তার পর সহায়তার জন্য কল করুন। জরুরি নম্বরগুলি হাতের কাছে রাখুন। এবং যাত্রা পথের নিকটবর্তী চিকিৎসাকেন্দ্রের ঠিকানা আগে থেকেই জেনে রাখুন।
ব্যস আর কী, স্টিয়ারিং বাগিয়ে বেরিয়ে পড়ুন রাস্তায়। অপছন্দের পেছনের সিটে না’ই বা বসলেন!
এই প্রতিবেদনটি 'আনন্দ উৎসব' 'ফিচারের একটি অংশ।