দিনে দিনে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা যেমন বেড়ে চলে, গাড়ি কিনে ফেলা বা কেনার প্ল্যান হওয়া নতুন কিছু না। সামনেই পুজো, ফলে এই সময় বাঙালিদের মধ্যে উত্সবের ছোঁয়া লেগে গিয়েছে, জামাপ্যান্ট থেকে বিদেশ ভ্রমণ, নতুন ফ্রিজ থেকে গাড়ি, কেনাকাটার পরিধি অনেক বেশি। কিন্তু যদি গাড়ি কেনার কথা ভেবে থাকেন, অথবা আপনার এক/একাধিক গাড়ি রয়েছে, মাথায় রাখুন এই পাঁচটি টিপস, যাতে গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারবেন খুব সহজে। গাড়ির স্বাস্থ্য যত ভাল থাকবে, গাড়ির পিছনে আপনার খরচ তত কম হবে, ভবিষ্যতে যদি আপনার যত্ন করা গাড়ি বিক্রি করেন, বাজার মূল্যের চেয়ে আপনি বেশি দামে বিক্রি করতে পারবেন!
১) ইঞ্জিন, ইঞ্জিন অয়েল, ফিল্টার
ইঞ্জিনের ভেতর একাধিক যন্ত্রাংশ নির্দিষ্ট ছন্দে নড়তে থাকে, ফলে খুব স্বাভাবিক ভাবে ঘর্ষণের সৃষ্টি হয়। এ বার এই ঘর্ষণের পরিমাণ কমাতেই ব্যবহার করা হয় ইঞ্জিন অয়েল, যাতে ইঞ্জিন মসৃণ ভাবে কাজ করে। দিনের পর দিন ব্যবহার হতে হতে এই তেলের কার্যক্ষমতা কমতে থাকে, ফলে ইঞ্জিনের ঘর্ষণ ও ক্ষয় শুরু হয়, যা কি না ইঞ্জিনের পক্ষ্যে ক্ষতিকর এবং গাড়ির গড়পরতা মাইলেজের পক্ষেও। ৫০০০, ৮০০০ বা ১০,০০০ হাজার কিলোমিটার অন্তর, আপনার ইঞ্জিনের যেমন প্রয়োজন এবং যে ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করেন, সেই অনুযায়ী যদি পাল্টে নেন, অনেক বেশি লাভবান হবেন। কারণ ইঞ্জিন অয়েলের যা দাম, তার তুলনায় ইঞ্জিনের যে ক্ষয় হতে থাকে দীর্ঘ দিন না পাল্টালে, তার মূল্য অনেক বেশি। এর সঙ্গে ইঞ্জিনের যে এয়ার ফিল্টার থাকে, সেটাও ইঞ্জিন অয়েল পাল্টাবার সময় খেয়াল করে নেবেন।
ইঞ্জিনের কার্যক্ষমতা নির্ভর করে এই এয়ার এবং ফুয়েলের ওপর। ফলে কী ধরনের তেল আপনি গাড়ির জন্য নিয়মিত ব্যবহার করেন এবং যে এয়ার ফিল্টার রয়েছে, তা পরিষ্কার অথবা নোংরা, তার ওপরেও আপনার গাড়ির মাইলেজ নির্ভর করবে।
আরও পড়ুন: তেলের দাম আগুন, বাইক কেনার আগে মাইলেজ দেখে নিন
২) স্পার্ক প্লাগ
এর ক্ষয় অনেক কম, চলে অনেক দিন। সাধারণত একটা ভাল কপার স্পার্ক প্লাগ প্রায় ৫০,০০০ কিমি অবধি ঠিকঠাক চলতে পারে, এবং ইরিডিয়াম স্পার্ক প্লাগ এর তিন গুণ, মানে প্রায় দেড় লাখ কিমি অবধি চলতে পারে। কিন্তু মাথায় রাখা দরকার, খারাপ স্পার্ক প্লাগের জন্যে গাড়ি চালু করতে সমস্যা থেকে গাড়ির মাইলেজ কমিয়ে দেওয়া, অনেক কিছুই হতে পারে। গাড়ির ইঞ্জিনের ওপর নির্ভর করবে কতগুলি স্পার্ক প্লাগ থাকবে। সাধারণত চার থেকে আটটা দেখা যেতে পারে, গাড়ির সিলিন্ডারের ওপর নির্ভর করছে সেটি।
৩) টায়ার, ব্রেক প্যাড
চারটি টায়ারের আলাদা আলাদা করে যত্ন নেওয়ার প্রয়োজন, কারণ এই টায়ারের জন্যই ইঞ্জিন থেকে পাওয়ার এসে গাড়িটি এগোতে পারছে, এর জন্যই দ্রুতগতিতে ছুটে আসা গাড়ি থামানো সম্ভব। যদি গাড়ি চালাতে চালাতে খেয়াল করেন গাড়ি ঠিক সোজা যাচ্ছে না, একটু বাঁ দিকে বা ডান দিকে টানছে নিজে থেকে, ভাল করে খেয়াল করুন, কোনও একটি চাকায় ব্রেক প্যাড আটকাচ্ছে কি না। গাড়ি থেকে নেমে গাড়িকে চলন্ত অবস্থায় এবং গাড়িতে উঠে খেয়াল করুন, কোনও বাম্প খেয়াল করছেন কি না, গাড়ির টায়ার চলন্ত অবস্থায় কোনও কাঁপুনি বা লুজ অবস্থায় ঘুরছে কি না। সামান্য একটু খেয়াল রাখলেই আশু বিপদ থেকে মুক্তি পেতে পারেন। গাড়ির টায়ার নিয়মিত চেক করা, যথাযথ হাওয়া আছে কি না, এয়ার প্রেশার বেশি বা কম যেন না থাকে এবং টায়ারের গ্রিপ ঠিক আছে কি না। খেয়াল রাখবেন ব্রেক প্যাড কত দিনের পুরনো হলো, আন্দাজ প্রতি ৩০ হাজার কিমিতে যদি পাল্টে নিতে পারেন, বেশ ভাল, তবে সাধারণত ভিন্ন মডেলের গাড়ির ক্ষেত্রে এই প্যাডের আয়ু আলাদা।
৪) রেডিয়েটর
গাড়ি চললে ইঞ্জিন গরম হবেই। কিন্তু যাতে প্রচন্ড বেশি না গরম হয়ে যায়, তার জন্য গাড়ির ঠিক সামনেই সাধারণত থাকে রেডিয়েটর। গাড়ির ইঞ্জিনের সঙ্গে পাইপ দ্বারা যুক্ত থাকে রেডিয়েটর, সেই পাইপে থাকে কুল্যান্ট বা এক প্রকার তরল, যা সহজে ইঞ্জিনের থেকে তাপ সংগ্রহ করে রেডিয়েটরে এসে ঠান্ডা হয়ে আবার সেই ঠান্ডা কুল্যান্ট ফিরে যায় ইঞ্জিনের তাপ সংগ্রহ করতে। যে কোনও তেল বা তরল গাড়ির ক্ষেত্রে সারা জীবন চলতে পারে না, ব্যবহার হতে হতে তার কার্যক্ষমতা কমবেই, এবং এ ক্ষেত্রেও কোনও ব্যতিক্রম নেই। গাড়ির মডেল এবং কুল্যান্ট, এর ওপর নির্ভর করছে কত দিন পর পর সেটা বদলানোর প্রয়োজন।
আরও পড়ুন: ঘণ্টায় ৪০০ কিমি গতির বাইকে চড়তে চান!
আরও পড়ুন: পুজোয় সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ি কিনবেন? মাথায় রাখুন এ সব টিপস
৫) নিয়মিত সার্ভিসিং
যদি নিজের না সময় থাকে এই সব কিছু করার, বা নিজের পক্ষে সেই কারিগরি করার সুযোগ না থাকে, নিয়ে যান ভাল কোনও সার্ভিস সেন্টারে, নিয়মিত গাড়ির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান। শরীরের মতোই নিয়মিত যত্নে থাকলে তার আয়ু যেমন বাড়বে, সার্বিক ভাবে খরচ কমবে, কারণ হঠাৎ কোনও যন্ত্রাংশ খারাপ হওয়ার আশঙ্কা থাকবে না বললেই চলে। যে গাড়ি করে আপনি রাস্তাঘাটে চলাফেরা করেন, তার ভাল থাকার উপর আপনার ভাল থাকাও যে নির্ভর করে!