গাড়ি র্যালির সেই জৌলুস আর নেই কলকাতায়।
সেই ১৮৯৭ সালে ভারতবর্ষে প্রথম মোটরগাড়ি হাজির হয়। জামশেদজি টাটা, যিনি কি না টাটা কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা, প্রথম তাঁর হাত ধরেই মোটরগাড়ি ভারতে আসে। এর পর এক বছরের মধ্যে আরও তিনটি গাড়ি আসে ভারতে, আগের মতোই এগুলো তৎকালীন বোম্বাই শহরে আসে, পারসিদের জন্য।
বোম্বাই শহর সর্বপ্রথম গাড়ি নিয়ে আসার জন্যে ইতিহাসে স্থান পেলেও গাড়ির বহুল ব্যবহার বাড়তে থাকে কলকাতা শহরে। কলকাতার ছবি তখন একেবারে অন্য রকম। দেশের সব থেকে চোখধাঁধানো শহর হিসেবে পরিচিত কলকাতায় তখন আভিজাত্য থেকে সদ্য বড়লোকদের ভিড়। ফলে, এই শহরে গাড়ির ব্যবহার চালু হতে বেশি দেরি হয়নি।
গাড়ির সংখ্যা এতটাই বেড়ে যায় কলকাতায়, প্রথম অটোমোবাইল অ্যাসোসিয়েশন চালু হয় এখানেই। পরে বাকি শহরগুলিতে সেই অ্যাসোসিয়েশনের নিয়ম প্রচলন হতে থাকে।
আরও পড়ুন: হন্ডা সিআর-ভি হাজির নতুন রূপে, নতুন সাজে
অটোমোবাইল অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গল প্রথম মোটরগাড়ির র্যালি চালু করে ১৯০৪ সালে। কলকাতা থেকে ব্যারাকপুর, যেখানে আর্মি ক্যান্টনমেন্ট আছে, এই ৪০ কিমির দূরত্বে প্রথম র্যালি রেস হয়। এই রালি রেসের জন্য প্রায় ৬০টি গাড়ি নথিভুক্ত করালেও রেসের জন্যে হাজির হয় মাত্র ১১টি গাড়ি।
বলাই বাহুল্য, ব্রিটিশ রাজের আমলে অত্যন্ত বিলাসবহুল আয়োজন ছিল এই র্যালি রেস। আজকের রেসের সঙ্গে তুলনা করলে সেটি একেবারেই রেসের পর্যায় পড়ে না। এই রেসের মূল উদ্দ্যেশ্য ছিল একসঙ্গে গাড়ি চালানো, মাঝরাস্তায় চা-জলখাবারের বিরতি মহারাজ বাহাদুর জিতেন্দ্র মোহন ঠাকুরের প্রাসাদে।
তবে, সেই সময়ের সঙ্গে তুলনা করলে এই রেস যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। হাতল ঘুরিয়ে ইঞ্জিন স্টার্ট দিতে হত, সেই গাড়ি কতটা ঠিক ভাবে চলবে তার কোনও নিশ্চয়তা ছিল না, সব থেকে বড় ব্যাপার রাস্তা। তখনকার রাস্তা মোটরগাড়ির জন্য বানানো ছিল না, খানাখন্দ আর নুড়িপাথরে একটু পর পরই গাড়ির টায়ার পাংচার হত। সব থেকে ক্ষমতাশালী ইঞ্জিন ছিল ৮.৫ বিএইচপি-র, যা কি না আজকের তুলনায় কিছুই না। ফলে এই ধরনের রেস প্রতিযোগিতামূলক হয়ে ওঠেনি, বরং আরও বেশি গাড়ি, গাড়িচালক ও গাড়ি প্রেমিকের সংখ্যা বাড়তে থাকে।
আরও পড়ুন: ওয়ান্ডারার চেপেই নেতাজির পলায়ন পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে!
এই রেস খুব সফল না হলেও এই ধরনের রেস এ বার বাকি শহরেও চালু হতে থাকে। কোথাও রাস্তা কঠিন, কোথাও আবহাওয়া। কিন্তু চাঁদে প্রথম মানুষ হিসেবে যেমন আমরা নীল আর্মস্ট্রং-কে চিনি, ভারতে র্যালি রেসের পীঠস্থান হিসেবে প্রথম নাম থেকে যাবে কলকাতার।