গত বছর ৭ অক্টোবর হামাসের হাতে বন্দি ইজ়রায়েলিদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ তেল আভিভে। ছবি: রয়টার্স।
আচমকাই সাইরেন বাজতে শুরু করেছিল মধ্য ইজ়রায়েল জুড়ে। এই সাইরেনের আওয়াজ বাসিন্দাদের অচেনা নয়। রকেট ছুড়েছে হামাস। গত চার মাসে এই প্রথম আজ রকেট হামলা চালাল প্যালেস্টাইনি জঙ্গি গোষ্ঠী। ঝাঁকে ঝাঁকে রকেট এসে পড়ল রাজধানী তেল আভিভ-সহ মধ্য ইজ়রায়েলে। হামাস নিজেই জানাল সে কথা।
হামাসের সশস্ত্র শাখা ‘আল-কাসাম ব্রিগেড’ ঘোষণা করেছে, তেল আভিভে বড় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে তারা। গাজ়ায় সাধারণ মানুষের উপরে যে ভাবে অত্যাচার চালানো হচ্ছে, যে ভাবে হত্যা করা হচ্ছে, এই হামলা তার ‘জবাব’। হামাসের আল-আকসা টিভিতেও বলা হয়েছে, ইজ়রায়েলের ভূখণ্ড লক্ষ্য করে গাজ়া স্ট্রিপ থেকে রকেট ছোড়া হয়েছে।
ইজ়রায়েলি বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী জানিয়েছে, অন্তত ৮টি রকেট দক্ষিণ গাজ়ার রাফা থেকে ছোড়া হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনও হতাহতের খবর নেই।
আজ প্রায় ২০০টি ত্রাণবাহী ট্রাক কেরেম-শালোম সীমান্ত দিয়ে গাজ়ায় প্রবেশ করছে বলে জানিয়েছেন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির কর্তা খালেদ জ়ায়েদ। মিশরের সরকারি টেলিভিশন চ্যানেলেও দেখানো হয়েছে ত্রাণসামগ্রী বোঝাই ট্রাকের সারি। প্রসঙ্গত, রাফা সীমান্ত বন্ধ করে রেখেছে ইজ়রায়েল। সেই সীমান্ত যত দিন খোলা না হচ্ছে, তত দিন দিয়ে এখান দিয়েই ত্রাণ পাঠানোর বিষয়ে সম্মত হয়েছিল সংশ্লিষ্ট সব পক্ষই। রাষ্ট্রপুঞ্জ জানিয়েছে, ইজ়রায়েল-প্যালেস্টাইন দ্বন্দ্বে গাজ়ার প্রায় ১১ লক্ষ মানুষ বিপজ্জনক ক্ষুধার মুখোমুখি হচ্ছেন।
ইজ়রায়েলের দাবি, ত্রাণের ট্রাক গাজ়ায় ঢোকার পরেই এই হামলা। মিশর-রাফা সীমান্ত বন্ধ রয়েছে। তাই ওই পথে গাজ়ায় ত্রাণ ঢুকছে না। খাবার নেই, পানীয় জল নেই, অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন গাজ়ার মানুষ। এই নিয়ে ইজ়রায়েলের উপর আন্তর্জাতিক স্তর থেকে চাপ ক্রমশ বাড়ছিল। সম্প্রতি আমেরিকা ও মিশরের মধ্যস্থতায় বিষয়টি নিয়ে রফা হয়। দক্ষিণ ইজ়রায়েল দিয়ে গাজ়া ভূখণ্ডে ত্রাণ ঢুকতে অনুমতি দেয় এ দেশের সরকার। তার পরেই আজকের রকেট হামলায় প্রশ্ন তুলেছে ইজ়রায়েল। তারা অভিযোগ করে চলেছে, রাফায় সাধারণ মানুষের ভিড়ে লুকিয়ে রয়েছে হামাসের জঙ্গিরা। এ দিনও তারা জানিয়েছে, রাফায় গা ঢাকা দিয়ে থাকা হামাসকে নিশ্চিহ্ন না-করা পর্যন্ত যুদ্ধ থামবে না। যদিও ইজ়রায়েলি বাহিনীর হামলায় যে অসংখ্য নিরীহ প্যালেস্টাইনি প্রতি দিন প্রাণ হারাচ্ছেন, তা শুনতে নারাজ বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। গাজ়ার হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রকের দাবি সাত মাস ব্যাপী যুদ্ধে কমপক্ষে ৩৬ হাজার প্যালেস্টাইনির মৃত্যু হয়েছে।
গত বছর ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইজ়রায়েলে হামলা চালায় হামাস। অন্তত ১২০০ মানুষের মৃত্যু হয় ওই হামলায়। ২৫০ জনকে অপহরণ করে নিয়ে যায় হামাস। এর পরেই হামাস-ইজ়রায়েল যুদ্ধ শুরু হয়। বন্দি-বিনিময় চলাকালীন শ’খানেক ইজ়রায়েলিকে ছেড়েছে হামাস। এখনও শতাধিক ইজ়রায়েলি গাজ়ায় আটকে। তাঁদের অবিলম্বে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবিতে ইজ়রায়েল জুড়ে প্রবল বিক্ষোভ চলছে। গত কাল তেল আভিভের রাস্তায় নামেন হাজার হাজার মানুষ। তাঁরা সরকার-বিরোধী স্লোগান দেন। প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর পদত্যাগের দাবি জানান। বিক্ষোভকারীদের কারও হাতে ছিল বন্দি ইজ়রায়েলি মহিলাদের ছবি, কারও হাতে ছিল পোস্টার— ‘যুদ্ধ বন্ধ করো। সাহায্য করো।’ সাধারণ মানুষের দাবি, অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ করে হামাসের সঙ্গে সমঝোতা করা হোক। গাজ়ায় পণবন্দি থাকা ইজ়রায়েলিদের ফিরিয়ে আনা হোক। হামাসের হাতে বন্দি থাকা ইজ়রায়েলিদের অসংখ্য ভিডিয়ো সাম্প্রতিক কালে প্রকাশ্যে এসেছে। বিক্ষোভকারীদের প্রশ্ন, ‘‘ওই সব ভিডিয়ো দেখার পরে ঘরে বসে থাকা যায়! কী করে সরকার দেশের মানুষকে এ রকম অসহায় অবস্থায় ফেলে রাখছে!’’