কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার। —ফাইল ছবি।
প্রদেশ কংগ্রেসে জমানা বদলের পরে পেরিয়েছে এক মাসের বেশি সময়। রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক নানা প্রশ্নে ধোঁয়াশা এখনও কাটেনি। এর মধ্যেই এসে পড়েছে ৬টি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন। এমতাবস্থায় বাংলায় দলের কাজে সমন্বয় ঠিক রাখতে সেতুবন্ধনের চেষ্টায় নেমেছেন কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।
সূত্রের খবর, এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) কে সি বেণুগোপালের সঙ্গে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকারের দফায় দফায় কথা হয়েছে। উপনির্বাচন থেকে দলের সাংগঠনিক প্রস্তুতি-সহ সব প্রসঙ্গই আলোচনায় এসেছে। আবার প্রাক্তন ও বর্তমান দুই প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী এবং শুভঙ্করের মধ্যে সমন্বয়ের লক্ষ্যেও কথা বলেছেন বেণুগোপাল। বার্তা দেওয়া হয়েছে, এআইসিসি-র ওয়ার্কিং কমিটি ও কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিটির সদস্য এবং বহরমপুরের পাঁচ বারের প্রাক্তন সাংসদ অধীরের মতামত যেন তাঁর মুর্শিদাবাদ জেলার ক্ষেত্রে গুরুত্ব পায়। কংগ্রেস সূত্রের খবর, বর্তমান প্রদেশ সভাপতিও এআইসিসি-কে আশ্বস্ত করেছেন, অতীতে বরকত গনি খান চৌধুরী বা প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের মত নিয়েই তাঁদের জেলার ক্ষেত্রে কংগ্রেস সিদ্ধান্ত নিত। এখনও অন্যথা কিছু হয়নি।
এ বারের উপনির্বাচনে সমঝোতার বার্তা নিয়ে বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসুর সঙ্গে কথা বলেছিলেন অধীর ও শুভঙ্কর, দু’জনেই। বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান অবশ্য জানিয়েছিলেন, তত ক্ষণে বাম শরিকদের মধ্যে আসন ভাগের প্রক্রিয়া এগিয়ে গিয়েছে। বাম শরিক ফরওয়ার্ড ব্লকের আপত্তিতে কোচবিহারের সিতাই আসনও (গত দুই নির্বাচনে যেখানে কংগ্রেস লড়েছিল বামেদের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে) কংগ্রেসকে ছাড়া যাচ্ছে না। তবে এই উপনির্বাচনই সমঝোতার প্রশ্নে শেষ কথা, এমন মনোভাব পোষণ করছেন না দু’পক্ষের নেতৃত্বই। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্করের মতে, এই ক্ষেত্রে কোনও ‘বিভ্রান্তি’ও নেই। তাঁর বক্তব্য, ‘‘এই উপনির্বাচনে কংগ্রেস ৬টি আসনেই লড়াই করছে। সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের শরিক যেমন বাম দলগুলি, তেমন তৃণমূল কংগ্রেসও। মনে রাখতে হবে, ‘ইন্ডিয়া’ গড়ে উঠেছিল স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের কথা বলে। সেই মঞ্চের শরিক কেউ যদি স্বৈরাচারের পথে যায়, কংগ্রেস তার প্রতিবাদেও কোনও আপস করবে না!’’
বর্তমান সভাপতির পাশাপাশি প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীরের সঙ্গেও এআইসিসি নেতা বেণুগোপালের দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। সূত্রের খবর, অধীর তাঁকে বলেছেন, রাজ্যে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের আবহে তৃণমূল প্রথম বার জেলা পরিষদ জিতেছিল। কিন্তু তার আগেই বাম আমলে বামফ্রন্টের সঙ্গে লড়াই করে জেলা পরিষদ দখল করেছিল কংগ্রেস। বরাবরই কংগ্রেস সেই জেলা থেকে বহু বিধায়ক, সাংসদ পেয়ে এসেছে। এ বারের লোকসভা নির্বাচনেও কংগ্রেসের ভোট-প্রাপ্তির যে শতাংশের হিসেব, সেটাও মূলত মুর্শিদাবাদ, মালদহ ও উত্তর দিনাজপুরের সৌজন্যে। কিন্তু সেই মুর্শিদাবাদ জেলায় আসনের প্রশ্নে দল যে ধাক্কা খেয়েছে, সেখান থেকে পাল্টা লড়াই দিতে চান অধীর। সেই মতো বেণুগোপালও বর্তমান প্রদেশ নেতৃত্বকে বলেছেন মুর্শিদাবাদে প্রাক্তন সাংসদের মত নিয়েই চলতে। সূত্রের খবর, বর্তমান প্রদেশ সভাপতিও এআইসিসি-কে বলেছেন, রাজ্যে দুই প্রাক্তন সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য ও অধীর, দু’জনের মতকে ‘মর্যাদা’ দিয়েই দল চলছে। আর অধীরের কথায়, ‘‘মুর্শিদাবাদের লড়াই আমার কাছে চ্যালেঞ্জ!’’
প্রদেশ সভাপতির দায়িত্ব নেওয়ার পরে শুভঙ্কর রাজ্যে সেচ দফতরের সামনে ধর্না-অবস্থানের কর্মসূচি নিয়েছিলেন নদী ভাঙনের প্রতিবাদে। ভাঙন যে শুধু মালদহ, মুর্শিদাবাদ বা বীরভূমের মাথাব্যথা নয়, সেই বার্তা দিতেই এমন আয়োজন। তবে সেই কর্মসূচির প্রেক্ষিতে দলের মধ্যে কিছু ‘ভুল বোঝাবুঝি’ তৈরি হয়েছিল বলে কংগ্রেসের একাংশের বক্তব্য। যদিও সংশ্লিষ্ট সকলকেই প্রদেশ সভাপতি বলছেন, তাঁদের কাউকে ‘অসম্মানে’র প্রশ্ন নেই।