কলকাতায় গত বহু নামী-দামি চিনে খাবারের দোকানের কথা আমরা জানি
চিন দেশ থেকে ভারতে আসার সময় প্রথম নাকি বঙ্গদেশেই পদার্পণ করেছিলেন চাইনিজ মানুষজন। সে প্রায় ২৫০ বছর আগের কথা। ক্রমশ পোশাকে, ভাষায়, স্থাপত্যে তাঁরা আমাদের মধ্যে মিশে গেলেও খাবারের দিক থেকে বরং বাঙালিকেই আকর্ষণ করেছে চিনে খাবারদাবার। সমীক্ষায় দেখা যায় বিশ্বের ভোজনবিলাসীদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি মানুষের প্রথম পছন্দ চাইনিজ খাবারই। কলকাতায় গত বহু নামী-দামি চিনে খাবারের দোকানের কথাও আমরা জানি। কিন্তু এই মহানগরের আনাচেকানাচে এমন অনেক কম-খ্যাত রেস্তঁরাও রয়েছে যেখানে আপনি পেতে পারেন ১০০ ভাগ খাঁটি চিনে খাবারের স্বাদ।
ইউ চু
কলকাতা শহরের প্রাচীনতম চাইনিজ খাবারের দোকানগুলির মধ্যে একটি হল ইউ চু। চতুর্থ প্রজন্মের মালিক জোয়েল হুয়াং এখন দেখাশোনা করেন এটি৷ তাঁর মা জোসেফাইন লি ইং হুয়াং বিখ্যাত জোসেফাইন নুডলস তৈরি করেছিলেন, যেটি এখনও খাদ্যরসিকদের প্রিয়। এই রেস্তঁরায় মুখরোচক প্যান-ফ্রায়েড নুডলসে চিকেন, চিংড়ি, মাশরুম এবং অন্যান্য শাকসব্জি জিভে জল এনে দিতে বাধ্য। ইউ চু চিমনি স্যুপের জন্যও পরিচিত— সব্জি, মাংস এবং ডিম সহ ধোঁয়া ওঠা স্যুপ, যা শীতকালে আমাদের মন ভুলিয়ে দেবেই। গণেশ চন্দ্র আভেনিউর এই দোকানকে আপনি কলকাতার চিনে খাবারের অন্যতম পীঠস্থান বলে ধরে নিতেই পারেন।
বিশ্বের ভোজনবিলাসীদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি মানুষের প্রথম পছন্দ চাইনিজ খাবার
আহ লেউং
ট্যাংরার আহ লেউং এখানকার চিনে প্রাতঃরাশের জন্য পরিচিত। অল্প ব্যয়েই মুখরোচক চিনে খাবার খেতে আপনি ঢুঁ মারতে পারেন পুরনো এই দোকানে। কলকাতার চায়নাটাউনেই একটি চিনা পরিবার দ্বারা পরিচালিত এই খাবারের দোকানে প্রতি দিনই স্থানীয় মানুষজন ভিড় জমান। ‘সিঙ্গারা চাউ’— এখানকার বিখ্যাত একটি খাবার। তাজা নুডলস, সব্জি এবং মাংসের সঙ্গে পরিবেশন করা হয় গরম গরম ওয়ন্টন। সব রকম চেখে দেখার জন্য সাতসকালে পৌঁছে যাওয়াই ভাল।
তাই সেন চাইনিজ ইটিং হাউস
এই ছোট্ট ভোজনশালার মালিক এডউইন লিয়াও এখানকার প্রধান শেফও বটে। বেন্টিঙ্ক স্ট্রিটের এই দোকানে আপনি পাবেন যথার্থ চিনে খাবার। বয়স বেশি না হলেও এই রেস্তঁরায় মাংসের পদ , স্যুপ কিংবা নুডলস খেতে খেতে মনে হতেই পারে কলকাতায় নয়, আপনি রয়েছেন চিন দেশের কোনও ভোজনালয়ে। সুস্বাদু চাইনিজ খেতে হলে হাতে কিছুটা সময় নিয়ে ঘুরে আসেন তাই সেন চাইনিজ ইটিং হাউসে।
পুরানো কলকাতার কেবিন-স্টাইলে সাজানো এই রেস্তঁরাটি তার সুস্বাদু খাবারের জন্য বিশেষ জনপ্রিয়তা পেয়েছে
চাং ওয়া
পুরানো কলকাতার কেবিন-স্টাইলে সাজানো এই রেস্তঁরাটি তার সুস্বাদু খাবারের জন্য বিশেষ জনপ্রিয়তা পেয়েছে৷ পর্কের পদগুলি এখানে বিশেষ লোভনীয় এবং আরও একটি জিভে জল আনা বিকল্প হল প্রন চাউমিন। আশেপাশের অফিসযাত্রী মানুষ এই রেস্তঁরাটিকে ভীষণ পছন্দ করেন এখানকার চাইনিজ খাবারের জন্যই। চাং ওয়া থেকে অনলাইনে অর্ডার দিয়ে আপনি ঘরে বসেও এখানকার সুখাদ্য চেখে দেখতে পারেন। চাঁদনি চক মেট্রো স্টেশনের পাশে এই রেস্তঁরা বিভিন্ন খ্যাতনামা ফুড ব্লগারদেরও বিশেষ পছন্দ।
ফুং ফা
চায়নাটাউনের প্রবেশদ্বারের কাছে অবস্থিত ফুং ফা ক্যান্টোনিজ খাবারপ্রেমীদের জন্য একটি আকর্ষণীয় স্থান। আবছা আলোয় সাধারণ অন্দরসজ্জায় ছিমছাম এই রেস্তঁরায় অল্প ব্যয়েই খাঁটি চীনে খাবারের স্বাদ নিতে পারবেন আপনি। মাংসের নানা ডিশ, মধু-মরিচ দিয়ে মাছের পদ, মিক্সড রাইস নুডলস ইত্যাদি খেতে এখানে বহু দূর-দুরান্ত থেকে নিয়মিত অনেক মানুষ হানা দেন।