বছর তিনেক আগে সংবাদমাধ্যমের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে দেওয়ায় সাধুবাদ কুড়িয়েছিলেন দেশের প্রেসিডেন্ট থেন সেন। কিন্তু গত কাল মায়ানমারের এক আদালত একটি পত্রিকার প্রধান-সহ চার সাংবাদিককে দশ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে। আর তাতেই নতুন করে শুরু হয়েছে বিতর্ক। ওই সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে দেশের গোপন তথ্য ফাঁস করার অভিযোগ উঠলেও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে ঘুরপাক খাচ্ছে একটাই প্রশ্ন, থেন সেন সুর বদল করেছেন বলেই কি এই পদক্ষেপ? দেশের সাংবাদিকরা বলছেন, পাঁচ দশকের নিষেধাজ্ঞা তুলে দিয়ে সংবাদমাধ্যম নিয়ে যে সংস্কারের পথে হাঁটা শুরু হয়েছিল, সেই ক্ষেত্রে এটা বড় ধাক্কা।
মায়ানমারের প্রেসিডেন্টের মুখপাত্রের অবশ্য মুখে কুলুপ। গত সোমবারই প্রেসিডেন্টকে কিন্তু বলতে শোনা গিয়েছে, “যদি সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা দেশের ভাল করার বদলে বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়ায়, সে ক্ষেত্রে আইন অনুযায়ী কার্যকরী পদক্ষেপ করা হবে।” এ বছর জানুয়ারিতে ওই পত্রিকায় প্রকাশিত একটি রিপোর্টে দাবি করা হয়, ‘মায়ানমারের উত্তরপশ্চিমে পাউকে বিস্তীর্ণ জমি অধিগ্রহণ করে সেনাবাহিনী একটি কারখানা তৈরি করেছে। সেখানে রাসায়নিক অস্ত্র তৈরি করা হচ্ছে। চিনা প্রযুক্তিবিদদেরও প্রায়শই যাতায়াত করতে দেখা যায় কারখানায়।’ রিপোর্টে কারখানার শ্রমিকদের বক্তব্যও তুলে ধরা হয়েছিল। যদিও ওই তথ্য ভুল জানিয়ে সরকারের দাবি, কারখানায় সেনাবাহিনীর প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম তৈরি করা হয়। এর বেশি কোনও ব্যাখ্যা তারা দেয়নি। উল্টে জুন মাস থেকে ওই পত্রিকা ছাপাই বন্ধ করে দিয়েছে সরকার।
যে আইনে (রাষ্ট্রের গোপন আইন) সাংবাদিকদের সাজা ঘোষণা করা হয়েছে, সেটি ব্রিটিশ আমলের। নিউ ইয়র্কের ‘কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্টস’ (সিপিজে) ঘটনাটি জানতে পেরে উদ্বেগ জানিয়েছে। সংস্থার মতে, প্রায় একশো বছরের কাছাকাছি পুরনো আইন ব্যবহার করে এমন কড়া শাস্তি ঘোষণা নিন্দনীয়। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষায় থেন সেন যে কখনও আগ্রহী ছিলেন, এই রায়ের পরে সেটা আর বিশ্বাস করা মুশকিল।
দেশের নতুন সরকারে পূর্বতন সেনাবাহিনীর অফিসাররাই রয়েছেন। তাই মায়ানমার ফের উল্টো পথে হাঁটবে কিনা, সেই আশঙ্কা সব সময়েই রয়েছে। বিশেষ করে যেখানে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের প্রসঙ্গটি পুরনো। কারণ দেশের বিদ্রোহীদের উপরে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ আগেই উঠেছে মায়ানমার সরকারের বিরুদ্ধে। যদিও সরকার তা মানেনি।
আজ কয়েকশো সাংবাদিক ইয়াঙ্গনের শোয়েডাগন প্যাগোডার কাছে জমায়েত করে বিক্ষোভ দেখান। তাঁদের পরনে ছিল ‘স্টপ কিলিং প্রেস’ লেখা টি শার্ট। ওয়েবসাইটে কেউ কেউ বলেন, “মায়ানমারে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা বরাবরই অধরা স্বপ্নের মতো থেকে যাবে। এখনও দেশের সরকার ঠিক করে দিচ্ছে কী ছাপা হবে!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy