ফাইল চিত্র।
আমেরিকা চাইছে ইরানের সঙ্গে সংঘাতের পরিস্থিতিতে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বড় শক্তি ও তেহরান-ঘনিষ্ঠ ভারতকে সঙ্গে রাখতে। অন্য দিকে ভারতের চেষ্টা, আমেরিকা-ইরানের সংঘাতের পরিবেশে দু’দেশের সঙ্গেই যতটা সম্ভব ভারসাম্য বজায় রেখে চলা। মার্কিন ড্রোন হামলায় ইরানের সামরিক কমান্ডার কাসেম সোলেমানির মৃত্যুর পরে গত কয়েক দিনের কূটনৈতিক আদানপ্রদানের পরে এমনটাই মনে করছে সংশ্লিষ্ট শিবির।
সোলেমানি-হত্যার পরে ভারত যে সাবধানী বিবৃতিটি দেয় তাতে কোথাও ঘটনার নিন্দা ছিল না। আবার সোলেমানি সম্পর্কেও কোনও নেতিবাচক উল্লেখ ছিল না। এর পরেই ডোনাল্ড ট্রাম্প দিল্লিতে এক জঙ্গি হামলার সঙ্গে কাসেম সোলেমানির যোগকে তুলে ধরে টুইট করেন। ভারত কিন্তু তাতে টুঁ শব্দও করেনি। এর পরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে তাঁদের ইরান-নীতি নিয়ে কথা বলার পাশাপাশি মার্কিন বিদেশসচিব মাইক পম্পেয়ো কথা বলেন ভারতের হবু বিদেশসচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলার সঙ্গে। গত কাল রাতেও বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্করের সঙ্গে কথা হয় পম্পেয়োর।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এই শেষ ফোনালাপের পরে পম্পেয়ো তাঁর টুইটে ইরানের ঘোর নিন্দা করে বলেন, ‘‘এস জয়শঙ্কর এবং আমি এখনই কথা বললাম ইরানের পক্ষ থেকে দেওয়া ক্রমাগত উস্কানি এবং হুমকি নিয়ে। আমেরিকার নাগরিক এবং আমাদের বন্ধুদের জীবন বাঁচাতে ও নিরাপদ রাখতে ট্রাম্প প্রশাসন কোনও দ্বিধা করবে না।’’
কিন্তু উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, পম্পেয়োর সঙ্গে এই টেলিফোন সংলাপের পরে জয়শঙ্কর যে টুইটটি করেন সেখানে ইরানের নামোল্লেখ পর্যন্ত নেই। তাঁর বক্তব্য, ‘‘উপসাগরীয় অঞ্চলে উত্তেজনা বাড়া নিয়ে মার্কিন বিদেশসচিব পম্পেয়োর সঙ্গে ফোনে কথা হল। ভারতের উদ্বেগ ও স্বার্থের দিকটিকে তুলে ধরা হয়েছে।’’ এর পরেই প্রশ্ন উঠেছে, দুই নেতার একই বিষয়ে এই দুই পৃথক ভাষ্য নিয়ে।
কূটনৈতিক সূত্রের মতে, ভারত আমেরিকার প্রতি বিশ্বস্ত থেকেও ইরানকে চটাতে চাইছে না। চাবাহার বন্দিরে বিপুল বিনিয়োগ, ইরানের সহায়তায় পাকিস্তানকে এড়িয়ে আফগানিস্তান-সহ পশ্চিম এশিয়ার বাণিজ্যিক যোগাযোগ বাড়ানো, পরে ফের তেল আমদানির রাস্তা খুলে রাখার মতো বিষয়গুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভারতের কাছে। উল্টো দিকে আমেরিকা এর প্রতিটি খুঁটিনাটি সম্পর্কেই অবহিত। ইরান ও ভারতের ঐতিহাসিক সম্পর্কের কথাও তাদের অজ্ঞাত নয়। তাই ইরানকে বিশ্বে একঘরে করে দেওয়ার যে প্রকল্প হাতে নিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন, তাতে নয়াদিল্লিকে তেহরানের থেকে দূরে এবং বিচ্ছিন্ন রাখাটা জরুরি হোয়াইট হাউসের কাছে। বিদেশ মন্ত্রক সূত্র জানাচ্ছে যে ঠিক এই কারণেই দীর্ঘদিন ধরে কার্যত ভারতের পিছনে লেগে থেকে ইরান থেকে তাদের তেল আমদানি শূন্যে নিয়ে যেতে বাধ্য করেছে ওয়াশিংটন। সেই প্রয়াস অদূর ভবিষ্যতেও চালানো হবে।
এই টানাপড়েনের কূটনীতিতে ভারত কতটা জাতীয় স্বার্থ সুরক্ষিত রেখে এই ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে এখন সেটাই দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy