‘যাওয়ার জন্য মুখিয়ে রয়েছি।’
আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই মন্তব্যে বেজায় চটেছেন অনেকেই। বিশেষত বিশ্বের ১৪০ কোটি ক্যাথলিক খ্রিস্টান। কারণ যেখানে যাওয়ার জন্য ‘মুখিয়ে রয়েছেন’ ট্রাম্প, তা হল সদ্য প্রয়াত পোপ ফ্রান্সিসের শেষকৃত্য অনুষ্ঠান। যে অনুষ্ঠানটি শোকের আবহে মোড়া, তাতে অংশ নেওয়ার জন্য কেউ কেন ‘উন্মুখ’ হবেন, প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই।
দীর্ঘ রোগভোগের পরে গত কাল সকালে প্রয়াত হয়েছেন ৮৮ বছর বয়সি পোপ। আজ সকালে ভ্যাটিকানের তরফে ঘোষণা করা হয়, আগামী শনিবার পোপের শেষকৃত্য হবে। সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন ব্রিটেনের যুবরাজ উইলিয়াম এবং আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট হাভিয়ের মিলেই। পোপ ফ্রান্সিসের জন্মভূমি আর্জেন্টিনা। এই শেষকৃত্য অনুষ্ঠান প্রসঙ্গেই আজ তাঁর নিজস্ব সমাজমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প লেখেন, “পোপের শেষকৃত্যে অংশ নিতে আমি ও ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া রোমে যাব। ওই অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য আমরা মুখিয়ে রয়েছি।” কাল পোপের মৃত্যুর পরে ট্রাম্প সমাজমাধ্যমে লিখেছিলেন, “ঈশ্বর তাঁকে ও তাঁর ভক্তদের আশীর্বাদ করুন।” অভিবাসীদের প্রতি অমানবিক আচরণের মতো বিষয় নিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে পোপের মতবিরোধ হয়েছিল। কিন্তু সদ্যপ্রয়াত কারও সম্পর্কে ট্রাম্পের এই অসংবেদনশীল মনোভাবের সমালোচনায় সরব হয়েছে নেট দুনিয়া।
আড়ম্বরহীন জীবনযাপনে অভ্যস্ত পোপ ফ্রান্সিস তাঁর শেষ ইচ্ছায় উল্লেখ করেছিলেন, প্রথামাফিক সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকার পরিবর্তে তাঁকে যেন সমাহিত করা হয় ‘পেপাল ব্যাসিলিকা অব সেন্ট মেরি মেজর’-এ। তাঁর শেষ ইচ্ছাপত্রে পোপ লিখেছিলেন, “সারা জীবন আমি মা মেরির সেবায় নিজের জীবন উৎসর্গ করেছি। তাই সেন্ট মেরি মেজর ব্যাসিলিকায় আমাকে নশ্বর দেহ রাখার অনুরোধ করছি।” তিনি আরও লিখেছেন, “সমাধির স্থানটি যেন মাটিতে হয়, কোনও বাড়তি অলঙ্করণের প্রয়োজন নেই।”
আজ সকালে পোপের মরদেহের একটি ছবি প্রকাশ করেছে ভ্যাটিকান। দেখা যাচ্ছে, কাঠের কফিনে শায়িত ফ্রান্সিস। পরণে পোপের পোশাক। হাতে জপের ‘রোজ়ারি’, আঙুলে পোপের বিশেষ আঙটি। প্রথা অনুযায়ী, পোপকে সমাহিত করার পরে ভেঙে ফেলা হবে তাঁর আঙুলের ওই আংটি, যাতে কোনও ভাবে সেটি অন্য কেউ ব্যবহার করতে না পারে।
সোমবার থেকেই পোপের দেহ শায়িত রয়েছে একটি ঢাকা খোলা কাঠের কফিনে, তাঁর বাসভবন সান্টা মার্টায়। দেশ-বিদেশ থেকে কার্ডিনালরা এসে তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়ে যচ্ছেন। এখনও সরকারি ভাবে ঘোষণা না করা হলেও ভ্যাটিকান সূত্রের খবর, বুধবার থেকে কফিন থাকবে সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকায়। অগণিত মানুষ সেখানে এসে শ্রদ্ধা জানাবেন ফ্রান্সিসকে।
পরবর্তী পোপ নির্বাচনের জন্য ভোট দেবেন যে কার্ডিনালেরা, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ৪ ভারতীয়— কার্ডিনাল ফিলিপ নেরি ফেরাও, কার্ডিনাল বাসেলিয়োস ক্লিমিস, কার্ডিনাল অ্যান্টনি পুলা এবং কার্ডিনাল জর্জ জ্যাকব কুভাকড়। সংবাদ সংস্থা
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)