Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
taliban

Kabul: সংবিধান পাল্টে কাবুলে কি এ বার ‘একুশে আইন’

রাস্তা থেকে যাতে কোনও বাড়ির মহিলাকে দেখা না যায়, সেই জন্য প্রতিটি বাড়ির একতলা ও দোতলায় জানলায় রঙিন কাচ লাগাতে হবে।

ছবি রয়টার্স।

ছবি রয়টার্স।

সংবাদ সংস্থা
কাবুল শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৬:০১
Share: Save:

আফগান-ভূম থেকে আমেরিকার বিদায়ের পরেই সরকার গঠনের তোড়জোড় শুরু করেছে তালিবান। নয়া সরকারের ভূমিকা নিয়ে ইতিমধ্যেই তৈরি হয়েছে জল্পনা। আতঙ্কে বহু দেশবাসী। সূত্রের খবর, সংবিধান বদলের ভাবনাও শুরু করেছেন তালিবান নেতৃত্ব। বর্তমান সংবিধান ২০০৪ সালে বিদেশি শক্তির তত্ত্বাবধানে তৈরি হয়েছিল। বর্তমান জমানায় ১৯৬৪ সালের সংবিধানকেই ফেরানো হতে পারে বলে খবর।

সংবিধানের ২৫ নম্বর অনুচ্ছেদে প্রত্যেকের সমানাধিকারের কথা বলা হয়েছে। নয়া জমানায় এখনও পর্যন্ত তালিবানের যে বিধি জারি করা হয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, বোরখা কিংবা এক জন পুরুষ আত্মীয় ছাড়া মহিলাদের প্রকাশ্যে বেরোনো নিষিদ্ধ। মহিলাদের হাঁটাচলার শব্দ যাতে শোনা না যায়, তাই উঁচু হিলের জুতো পরা নিষিদ্ধ। প্রকাশ্যে কথা বলার সময়ে কোনও মহিলার কণ্ঠস্বর যেন অপরিচিত ব্যক্তির কানে না যায়। রাস্তা থেকে যাতে কোনও বাড়ির মহিলাকে দেখা না যায়, সেই জন্য প্রতিটি বাড়ির একতলা ও দোতলায় জানলায় রঙিন কাচ লাগাতে হবে।

১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত শাসনকালে শরিয়ত কার্যকর করেছিল তালিবান। সেই সময়ে মহিলাদের কাজের উপরে নিষেধাজ্ঞা, বালিকাদের স্কুলে পড়া নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি মহিলাদের প্রকাশ্যে মুখ ঢেকে চলার নিদান জারি করা হয়েছিল। রাস্তাঘাটে বেরোনোর ক্ষেত্রে কোনও মহিলার অন্তত এক জন পুরুষ আত্মীয়কে সঙ্গে নিয়ে বোরোনোর নিয়মও জারি করা হয়।

অনুচ্ছেদ ২৬ অনুযায়ী অপরাধমূলক কার্যকলাপে শাস্তি দিতে পারে শুধু মাত্র আদালতই। আফগান সংবিধান অনুযায়ী ব্যক্তিস্বাধীনতা বজায় রাখা এবং মানবাধিকার যাতে লঙ্ঘিত না হয় সেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কারও উপরে নিগ্রহও বরদাস্ত করা হবে না বলে জানানো হয়েছে সংবিধানে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, তালিবানের কব্জায় থাকা উত্তরের প্রদেশগুলি থেকে পালিয়ে যাওয়া বহু বাসিন্দার অভিযোগ, নৃশংস অত্যাচার চালাচ্ছে তালিব যোদ্ধারা। রাস্তায় দেহ পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। এমনকি তালিব যোদ্ধাদের বিয়ের জন্য মহিলাদের অপহরণও করা হয়েছে।

’৯৬ সালে প্রথম দফার শাসনেও কঠোর ভাবে ইসলামি শাসন কার্যকরের পরে নৃশংস অত্যাচার চালানোর অভিযোগ উঠেছে তালিবানের বিরুদ্ধে।

অনুমতি ছাড়া কারও বাড়িতে তল্লাশি চালানো যাবে না বলা হয়েছে অনুচ্ছেদ ২৮-এ। এমনকি রাষ্ট্রের ক্ষেত্রেও এই নিয়ম বলবৎ হবে। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি সম্পূর্ণ আলাদা। আফগানিস্তান থেকে পলাতক এক সাংবাদিক আমেরিকান পত্রিকায় লিখেছেন, ‘‘মাসখানেক আগে সবে বাদাখশান দখলের পরেই ১৪-১৫ বছর বয়সি কিশোরীদের খোঁজে বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালাত তালিব যোদ্ধারা।’’

অনুচ্ছেদ ২৯ অনুযায়ী আদালতের নির্দেশ ছাড়া সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা যাবে না বলা হয়েছে। কিন্তু এক দল গবেষক জানিয়েছেন, ক্ষমতায় আসার পরেই বহু জায়গায় মহিলাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার হুমকি দিয়েছে তালিবান। যদিও প্রকাশ্যে তালিবান জানিয়েছে, ইসলামি আইন মেনেই তারা মহিলাদের অধিকার সুরক্ষিত করবে।

সংবিধানের ৩২তম অনুচ্ছেদে অস্ত্র ছাড়া আফগান বাসিন্দারা প্রকাশ্যে শান্তিপূর্ণ জমায়েতের অধিকার দেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক দল গঠনেরও স্বাধীনতা রয়েছে। কিন্তু এক আমেরিকান সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, সরকার গঠনে ইরানের মডেল অনুসরণ করতে পারে তালিবান। সে ক্ষেত্রে তালিবান প্রধান হিবাতুল্লা আখুন্দজ়াদা থাকবেন ক্ষমতার শীর্ষে। তার অধীনে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী-সহ মন্ত্রী পরিষদ। আলাদা করে কোনও নির্বাচন বা রাজনৈতিক দল থাকবে না।

অনুচ্ছেদ ৩৪-এ বলা হয়েছে, প্রত্যেক আফগান বাসিন্দার শিক্ষার অধিকার রয়েছে। সরকারকে সেই জন্য শিক্ষার বন্দোবস্ত করতেই হবে। প্রাথমিক শিক্ষা প্রত্যেকের জন্য বাধ্যতামূলক। কিন্তু এ ক্ষেত্রেও বাস্তব একেবারেই আলাদা। ইতিমধ্যেই কার্যনির্বাহী শিক্ষামন্ত্রী আব্দুল বাকি হক্কানি জানিয়েছেন, শরিয়ত মেনে পুরুষ ও মহিলা একত্রে নয়, পৃথক ভাবে পড়াশোনা করতে পারবে।

সম্প্রতি পড়াশোনার অধিকারের দাবিতে হেরাট বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা প্রতিবাদ, বিক্ষোভে দেখিয়েছেন। সেখানে শামিল হয়েছেন অন্তত ৫০ জন মহিলাও। তাঁদের অতীতের পড়াশোনার সমস্ত নথি যাতে সংরক্ষণ করা হয়, সেই দাবিও জানিয়েছেন পড়ুয়ারা। পড়াশোনার পাশাপাশি কাজ ও সুরক্ষার দাবিতেও সরব হয়েছেন মহিলারা।

অন্য বিষয়গুলি:

taliban Afghanistan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy