সরকারি নিয়মের ভারে ক্লান্ত মানুষের বিক্ষোভ-আন্দোলন। ফাইল চিত্র।
দেশ করোনা-শূন্য হওয়ার আগে লকডাউন বা অন্যান্য কড়াকড়ি লঘু করতে রাজি ছিল না বেজিং প্রশাসন। সরকারি নিয়মের ভারে ক্লান্ত মানুষ সম্প্রতি এ নিয়ে বিক্ষোভ-আন্দোলন শুরু করেছেন। এ দিকে বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, ‘জ়িরো কোভিড পলিসি’-র জন্যই চিনের বাসিন্দাদের মধ্যে যথেষ্ট রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়নি। এখনও করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঘটে চলেছে। মিউটেশন ঘটে নতুন স্ট্রেন তৈরি হচ্ছে। যা সার্বিক ভাবে বেশ বিপজ্জনক।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রথম ধরা পড়েছিল চিনে। ২০১৯ সালের একেবারে শেষে। রাতারাতি ‘তালাবন্ধ’ করে দেওয়া হয়েছিল একের পর এক শহরকে। যে যেখানে ছিলেন, আটকে পড়েছিলেন সেখানেই। সেই প্রথম ‘লকডাউন’ শব্দের সঙ্গে পরিচয় ঘটেছিল বিশ্বের। একে একে সব দেশই ঘরবন্দি হয়। কিন্তু এখন যখন গোটা বিশ্ব স্বাভাবিক জীবনযাপন শুরু করেছে, করোনাভাইরাসকে সঙ্গে নিয়েই বাঁচা শিখছে, চিন অবিচল জ়িরো কোভিড পলিসিতে। স্কুল, কলেজ থেকে দোকান, বাজার, অফিস, ব্যবসা-বাণিজ্য প্রায় সবই বন্ধ একাধিক অঞ্চলে। বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, কম টিকাকরণ, কম কার্যকরী টিকা দেওয়া ও অতিরিক্ত কঠিন করোনা-নীতির জন্যই চিনে সংক্রমণ এখনও কমেনি। মঙ্গলবার চিনে ৩৮,৪২১ জন সংক্রমিত হয়েছেন। রবিবার সংক্রমণ সংখ্যা ছিল ৩৯,৭৯১। বিশেষজ্ঞেরা সাবধান করে দিয়ে জানাচ্ছেন, চিন এই মুহূর্তে বিপজ্জনক হয়ে রয়েছে।আরও খারাপ ভেরিয়েন্ট তৈরির আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে। এর অন্যতম কারণ, মানুষের কম রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা। আগের প্রতিটি সংক্রমণ-ঢেউয়ে মানুষকে ঘরে আটকে রাখা হয়েছিল। ফলে প্রাকৃতিক ভাবে তাঁদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়নি। টিকাকরণ হারও এ দেশে কম। তার উপর যে কোভিড টিকা দেওয়া হয়েছে, তা-ও কম কার্যকরী দেশে তৈরি ভ্যাকসিন।
প্রবল বিক্ষোভের মুখে চিনের গুয়াংঝৌ শহরে আচমকাই আজ করোনা-নীতি প্রত্যাহার করা হয়েছে। গত কাল রাতেও এ শহরে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের হাতাহাতি হয়। দেশের অন্যত্রও প্রতিবাদ আন্দোলন চলছে। বিক্ষোভ দমনে কঠোর পদক্ষেপ করছে প্রশাসন। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে উষ্মা তৈরি হয়েছে। আমেরিকা ও কানাডা চিনের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে বিষয়টি সহানুভূতির সঙ্গে দেখার অনুরোধ জানিয়েছে। আজ দুপুরে আচমকাই চিন সরকারের পক্ষ থেকে গুয়াংঝৌয়ে লকডাউন তুলে দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়। গণহারে করোনা-পরীক্ষার নির্দেশও প্রত্যাহার করা হয়েছে। তবে গুয়াংঝৌয়ের সব অঞ্চলকে ‘মুক্তি’ দেওয়া হয়নি। হাইঝুতে লকডাউন বহাল রয়েছে। মঙ্গলবার রাতে এখানে বড়সড় বিক্ষোভ হয়েছিল। শুধু কাল নয়, গত কয়েক মাসে একাধিক বিক্ষোভ আন্দোলন চলেছে হাইঝুতে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরছে বিক্ষোভের বেশ কিছু ভিডিয়ো। একটি ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে, বিক্ষুব্ধ মানুষজন নিরাপত্তা বাহিনীকে লক্ষ্য করে পাথর ছুড়ছে। চার দিকে কাচের টুকরো পড়ে। বর্মের আড়ালে লুকিয়েছে সেনা-জওয়ানরা। একটি ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, কমলা রঙের ব্যারিকেড ভেঙে ফেলেছে মানুষ। চার দিকে মানুষের চিৎকার। এর পরেই দেখা যায়, বেশ কিছু লোকের হাত পিছমোড়া করে বেঁধে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ।
আরও একটি ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে চিনের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ানকে প্রশ্ন করেছেন এক সাংবাদিক— চিনের মানুষ যে লকডাউনে ক্ষুব্ধ, কবে উঠবে তা? এই প্রশ্নের মুখে দীর্ঘক্ষণ চুপ করে থাকেন ঝাও। তিনি যে অস্বস্তিতে, বেশ বোঝা যায়। বেশ কিছু ক্ষণ পরে উত্তর দেন ঝাও, যদিও তাঁর নীরবতার অংশটুকুই ছড়িয়ে পড়েছে টুইটারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy