এক বছর আগেও উঠে দাঁড়াতে পারতেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঠায় দাঁড়িয়ে থেকে ছাত্রদের অঙ্ক করাতেন। আর এখন উঠে দাঁড়াতেও অন্যের সাহায্য লাগে। ছাত্রছাত্রী তো দূর অস্ত্, নিজের সন্তানদের পাশে দাঁড়ানোর শক্তিও হারিয়েছেন গাজার বাসিন্দা ৩৬ বছরের আলি ওয়াদান।
গাজা-ইজরায়েল লড়াইয়ের পর বছর ঘুরে গিয়েছে। গত বছর অগস্টে শেষ হওয়া পঞ্চাশ দিনের লড়াইয়ে গাজায় যে রক্ত ঝরেছে, তাতে এখনও ন্যূনতম প্রলেপও পড়েনি। স্ত্রী, সন্তান-সহ পরিবারের ১১ জনকে হারিয়েছেন আলি। বোমার ঘায়ে খোয়া গিয়েছে একটি পা। অন্য পায়ের গুরুতর আঘাত সারানো যাবে না— জবাব দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। সেই পা কেটে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে কেটে গিয়েছে ১২ মাস। গাজার অলিগলিতে এখনও ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে যুদ্ধের দাগ। ধ্বংস হওয়া ১২ হাজার বাড়ি আর ক্ষতবিক্ষত ১০ লক্ষ বাসভবনের একটারও গায়ে এখনও মেরামতির চাদর চড়েনি। এখনও ঘরছাড়া দশ হাজার মানুষ। আর এক বছর পরেও গাজা-ইজরায়েল সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যাটা স্পষ্ট হয়নি। রাষ্ট্রপুঞ্জের ত্রাণকার্যের বিভাগীয় প্রধান পিয়ের ক্রাহেনবুলের কথায়, ‘‘ওই এলাকা টাইম বোমার অনুষঙ্গ মনে করিয়ে দেয়। সাধারণ মানুষের জীবন কী ভাবে থমকে দিয়েছে এই লড়াই, তা ওই এলাকা দেখে বোঝা যাচ্ছে।’’
আলি জানালেন, এখন কাঠ আর একটা বড় প্লাস্টিকের ছাউনির তলায় সপরিবার থাকেন তিনি। পরিবার বলতে দু’এক জন এখনও প্রাণে বেঁচে আছেন। আগে যে চারতলা বাড়িটায় থাকতেন, সেখান থেকে একটাই জিনিস উদ্ধার করা গিয়েছে। তাঁদের ফ্রিজ। কিন্তু যে পরিবারের কাছে খাবার নেই, তাঁরা ফ্রিজ নিয়ে কী করবেন, ভেবে পাচ্ছেন না আলি!
ইজরায়েল-গাজা সীমান্তে একটি খামার সামলাতেন গাদি ইয়ার্কোনি। যুদ্ধ শেষের ঠিক আগের দিনই বোমার আঘাতে দু’টো পা নষ্ট হয়েছে তাঁর। মারা গিয়েছেন তাঁর দুই বন্ধুও। তিনি জানালেন, যুদ্ধ পরবর্তী মানসিক অবসাদের চিকিৎসা চলছে ওই এলাকার শ’পাঁচেক শিশুর। বর্তমানে গাদি স্থানীয় কাউন্সিলের সদস্য। সমস্ত শক্তি দিয়ে এখন শান্তির প্রচার করে চলেছেন তিনি। স্থানীয় অর্থনীতির হাল ফেরাতে, গাজার বাসিন্দাদের মাঠা গোঁজার একটা স্থায়ী ঠাঁই ফিরিয়ে দিতে লাগাতার কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁর কথায়, ‘‘সীমান্তের দু’দিকেই শান্তি বজায় রাখার উপর নজর দিতে হবে। গাজা ভূখণ্ডের পাশাপাশি ইজরায়েলের সীমান্ত এলাকাগুলিতেও উন্নয়নের কাজ হলে শান্তি ফিরবে। রক্তপাত থেকে মুক্তি এ ভাবেই ফিরতে পারে।’’
শান্তি ফেরানোর প্রক্রিয়া যে আদতে সহজ নয়, তা স্বীকার করেছেন বিশেষজ্ঞেরা। গত অগস্টের পর জল বহু দূর গড়িয়েছে। ছোট ছোট জঙ্গিগোষ্ঠী আর হামাসের পক্ষে দাঁড়ায়নি। গাজা সংলগ্ন এলাকায় আধিপত্য কায়েম করে রাখা জঙ্গিগোষ্ঠী যুদ্ধ শেষেও নিয়ম করেই ইজরায়েলের সীমান্ত লক্ষ্য করে গোলাগুলি ছুড়েছে। ইসলামিক স্টেটের শরিক হিসেবে নিজেদের ঘোষণা করে গাজায় মাথা তুলছে সালাফিরাও। তারা হামাসের বিরুদ্ধে দাঁড়ালেও ইজরায়েলে রকেট ছুড়ে হুমকির পারদ চড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিতে মিশর ও ইজরায়েল, গাজা ভূখণ্ড সংলগ্ন এলাকার রাশ যাদের হাতে রয়েছে, তারা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভাবে হামাসের পক্ষেই পদক্ষেপ করেছে। সীমান্ত খুলে দিয়ে পণ্যের দেওয়া নেওয়া, মানুষকে যাতায়াত করতে দেওয়ায় সালাফিদের কোণঠাসা করে হামাসের পক্ষে জনমত গঠনের পক্ষে সায় দেওয়া হচ্ছে বলে দাবি বিশেষজ্ঞদের।
বছর ঘুরলেও ক্ষতস্থান এখনও দগদগে। ঘর নেই, খাবার নেই, পরিজনের মৃত্যুতে এখনও শোকস্তব্ধ গাজা। ছবিটা বদলায়নি একটুও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy