গত বছরের জুলাইয়ে বিতর্কিত একটা ভোট দেখেছিল পাকিস্তান। সেই ধাক্কা দেশটা যখন কাটিয়ে উঠছে, তখন ভারতের ৯০ কোটি ভোটার আগামী ১১ এপ্রিল থেকে দফায় দফায় রওনা হবেন বুথের পথে। হার-জিতের অঙ্ক স্পষ্ট হয়ে যাবে ২৩ মে।
মহম্মদ আলি জিন্না যেমন চেয়েছিলেন, পাকিস্তান এবং ভারতের সম্পর্কটা ঠিক সে রকম হয়নি। পাকিস্তানের জনকের ইচ্ছে ছিল, সম্পর্কটা হবে আমেরিকা এবং কানাডার মতো। দুঃখের কথা, দু’টো দেশ যুদ্ধ আর সংঘাতে জড়িয়ে পড়ল বারবার। সেই সঙ্গে গত সাত দশকের অধিকাংশ সময় ধরে একটা যুদ্ধজিগির দু’টো দেশের উপরেই চেপে বসে রইল।
আসন্ন ভোটে কি জাতীয় নিরাপত্তার মতো বিষয়ই বড় হয়ে উঠে বিজেপিকে ফিরে আসতে সাহায্য করবে? নাকি সরকারের প্রতিশ্রুতি না-রাখা এবং সামাজিক-অর্থনৈতিক ব্যর্থতা দরজা খুলে দেবে বিরোধীদের জন্য? জানতে আর দেড় মাস।
মাসখানেক আগে প্রায় যুদ্ধই লেগে গিয়েছিল। সেই ঘোর এখনও কাটেনি। ভারত-পাক যুদ্ধের ভয়টা দু’দেশের ১৫০ কোটিরও বেশি শান্তিকামী মানুষের পাশাপাশি সারা দুনিয়ারও ঘুম কেড়ে নেয়। কারণ দু’টো দেশ শুধু যে পরস্পরকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলতে পারে তা-ই নয়, পৃথিবী জুড়ে ঠান্ডার স্রোতও বইয়ে দিতে পারে। দুই দেশই তো পরমাণু শক্তিধর!
তবে শুধু গণবিধ্বংসী অস্ত্র নয়, এই মারমুখী মনোভাবটা মাঝে মাঝেই মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার আরও একটা কারণ আছে। সেটা হল— পরস্পরকে অস্থির করে তোলার ক্ষমতা রাখে দু’টো দেশই। ভারতের যেমন কাশ্মীর, তেমন পাকিস্তানেরও নিজস্ব স্পর্শকাতর এলাকা আছে। দুই দেশের মধ্যে বিশ্বাসের অভাব। তাই তারা পরস্পরের ঘোলা জলে মাছ ধরতে যায়। তারই ফল ছায়াযুদ্ধ, অস্থিরতা।
পাকিস্তানের সাধারণ মানুষ কিন্তু এই সমস্যাটা সম্পর্কে সচেতন। লোকে বোঝে যে, পরস্পরকে খুঁচিয়ে যাওয়ার এই নীতি চলতে পারে না। এতে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক ক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আবার ভারতের আর্থিক গতিপথ, বিশেষ করে সে দেশে আসা বিদেশি বিনিয়োগের পক্ষেও তো যুদ্ধের এই আবহটা ভাল নয়। দক্ষিণ এশিয়ায় প্রভাব বাড়াতে চাইছে ভারত। কিন্তু পশ্চিমের প্রতিবেশী পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ থাকলে সে পথও মসৃণ হবে না।
সাউথ ব্লকে কে ক্ষমতায় আসবেন, তা তো আমরা ঠিক করব না। ভারতের মানুষ তাঁদের পছন্দসই দলকে ক্ষমতায় আনবেন। তবে একটা ব্যাপার নিশ্চিত। ‘অবিশ্বাস’ নামক এই দুর্বলতম জায়গাটা মেরামত না-হলে দু’টো দেশই ইতিহাসের চোরাবালিতে তলিয়ে যেতে থাকবে একটু একটু করে।
ভোটের পরে তাই দু’টো দেশই কোনও একটা পরীক্ষিত বন্দোবস্ত তৈরি করুক, যা আস্থা আনবে। যাতে অন্যের অস্বস্তি তৈরি করা বন্ধ হবে। স্থিতিশীলতা চাইলে দুই দেশকেই তাদের স্পর্শকাতর এলাকাগুলোয়, সেখানকার মানুষদের দিকে নজর দিতে হবে।
আমি স্বপ্ন দেখি মুক্ত, বন্ধুত্বপূর্ণ এক দক্ষিণ এশিয়ার। যেখানে কেউ চাইলে গাড়ি চালিয়ে সটান কলকাতা থেকে চলে যেতে পারেন কোয়েটায়। মাঝপথে কেউ তাঁদের থামাবে না। পরমাণু যুদ্ধের ভয় ভুলে জীবন হবে শান্তি ও সমৃদ্ধির। হ্যাঁ, এমন একটা স্বপ্নের জন্যই তো বাঁচা যায়!
লেখক সাংবাদিক, ‘রেডিও পাকিস্তান’-এর প্রাক্তন ডিজি
অনুলিখন: সূর্য্য দত্ত
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy