ধ্বংসস্থল থেকে এখনও উঠছে ধোঁয়া। ছবি: রয়টার্স।
কয়েকশো টন সোডিয়াম সায়ানাইড মজুত ছিল গুদামঘরের দু’টি জায়গায়। সেই বিষাক্ত রাসায়নিকই ধীরে ধীরে মিশতে শুরু করেছে বাতাসে। বুধবার তিয়ানজিনের গুদামে জোড়া বিস্ফোরণের চার দিন পর এখন এটাই সব চেয়ে বড় ভয়ের কারণ উত্তর চিনের বন্দর শহরটিতে।
গ্যাস-মুখোশ আর শরীর ঢাকা পোশাকের সেনা ও উদ্ধারকারীরা তাই চেষ্টা করছে যত দ্রুত সম্ভব সেই রাসায়নিক সরিয়ে ফেলার। কারণ, এক বার বৃষ্টি নামলেই তার সঙ্গে মিশে তৈরি হয়ে পারে আরও বিষাক্ত কোনও প্রাণঘাতী গ্যাস। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে বুধবার ঘটনাস্থলে পৌঁছন চিনের প্রধানমন্ত্রী লি খ্যছিয়াং।
বিস্ফোরণের চার দিন পর, রবিবারও ধ্বংসস্তূপের তলা থেকে উদ্ধার হয়েছে আরও আটটি মৃতদেহ। তিয়ানজিনের ওই গুদামে ভয়াবহ বিস্ফোরণে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১১২। মৃতদের অধিকাংশই দমকল কর্মী। এখনও পর্যন্ত খোঁজ পাওয়া যায়নি প্রায় ১০০ জনের। পুলিশ জানিয়েছে, বিস্ফোরণের তীব্রতা এতই বেশি ছিল যে উদ্ধার হওয়া অধিকাংশ মৃতদেহই শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। রবিবার সকালে সাংবাদিক বৈঠকে জানানো হয়েছে, মৃতদের মধ্যে ২৪ জনের পরিচয় জানা গিয়েছে। বাকি দেহগুলি শনাক্তকরণের জন্য ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে।
সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তিয়ানজিনে ডংজিয়াং পোর্ট রুই হাই ইন্টারন্যাশনাল লজিস্টিক সংস্থার ওই গুদামঘরটির দু’টি জায়গা মিলিয়ে কয়েকশো টন সোডিয়াম সায়ালাই়়ড মজুত ছিল। অনুমোদিত পরিমাণের তুলনায় যা ৭০ গুণ বেশি। মূলত ক্ষতিকর রাসায়নিক আমদানি-রফতানি করত ওই সংস্থাটি। ২১৭ জন রাসায়নিক এবং পরমাণু বিশেষজ্ঞের একটি দলকে পাঠানো হয়েছে ঘটলাস্থলে। সেখানে যে বিষাক্ত সোডিয়াম সায়ানাইড মিলেছে তা স্বীকার করেছেন সামরিক বাহিনীর এক শীর্ষ কর্তা জেন শি লিউজ। রায়ায়নিক দূষণের আশঙ্কায় ওই এলাকার ৩ কিলোমিটারের মধ্যে বাসিন্দাদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে গ্রিনপিস জানিয়েছে, বন্দর ঘিরে যে সমুদ্র রয়েছে সেই জলে কোনও বিষাক্ত রাসায়নিক পাওয়া যায়নি।
এ দিকে বিস্ফোরণ-পরবর্তী পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসছেন সাধারণ মানুষ। রটছে বহু গুজবও। সমালোচনা থেকে বাঁচতে ইতিমধ্যেই ৫০টি ওয়েবসাইট বন্ধ করে দিয়েছে চিনা সরকার। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমেও সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে সরকারকে। যেমন চিনের মাইক্রো ব্লগিং সাইট সিনা উইবোতে এক জন লিখেছেন, ‘‘সত্যি কি গুজব রটছে? প্রত্যেক বারই কোনও দুর্ঘটনা হলে এ রকম গুজব রটে কেন?’’ অন্য এক জন আবার লিখেছেন, ‘‘সরকার মিথ্যা কথা বলছে। এই সরকারকে বিশ্বাস করা যায় না।’’ এর পরই রাতারাতি বাতিল করা হয়েছে ৩৬০টি সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট। তবে দুর্ঘটনার ফায়দাও তুলছে কেউ কেউ। অভিযোগ, বিস্ফোরণে বাবার মৃত্যু হয়েছে এমন দাবি করে হাজার হাজার ডলার অনুদান তুলছিল এক কিশোরী। তাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
তবে ওয়েবসাইট বন্ধ করেও মানুষের অসন্তোষ চাপতে পারছে না সরকার। সরকারি অফিসের বাইরে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। টেলিভিশনেও দেখা গিয়েছে, ধ্বংস হয়ে যাওয়া বাড়ির ছবি হাতে পথে নেমেছেন অনেকে। কারও হাতে, কারও মাথায় ব্যান্ডেজ। ‘‘আমার খুব ভয় করছে। এই বিষাক্ত রাসায়নিক মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে শরীরের’’, আশঙ্কা স্পষ্ট ঝাং ইনবাওয়ের চোখে। গুদামটির ৮০০ মিটারের মধ্যে বাড়ি ঝাংয়ের। ক্ষতিপূরণের পাশাপাশি এ বিষয়ে তদন্তও দাবি করেছেন তিনি। জেলাশাসকের অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন নিখোঁজ দমকল কর্মীদের পরিবারের লোকেরাও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy