একশো আশিতে একশো!
রাজ্যে লোকসভা ভোটের প্রচার শুরু হয়েছে মাসখানেক আগে। তার পর থেকে এ পর্যন্ত নির্বাচনী বিধিভঙ্গ, অশালীন ভাষা প্রয়োগ, প্রচারে বাধা দেওয়া নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ১৮০টি অভিযোগ জমা পড়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে। রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসার (সিইও) সুনীল গুপ্তর দফতর থেকে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এর মধ্যে ১০০টি-র ক্ষেত্রে পদক্ষেপ করা হয়েছে।
সিইও-র দফতর সূত্রের খবর, ১৮০টি অভিযোগের মধ্যে শাসক দল তৃণমূলের দায়ের করা অভিযোগের সংখ্যা ১০। তার মধ্যে ৭টির ক্ষেত্রে পদক্ষেপ করা হয়েছে। বিরোধীদের অভিযোগ, তৃণমূলের অভিযোগের ক্ষেত্রে সিইও দফতরের সক্রিয়তা তুলনামূলক ভাবে বেশি। যদিও এ ক্ষেত্রেও শতকরা ৭০ শতাংশের বেশি নম্বর পায়নি সিইও-র দফতর।
আগামিকাল, রবিবার রাজ্যের বিরোধী দলগুলি সুনীলবাবুর দফতরের কাজকর্মের এই পরিসংখ্যানই পেশ করতে চলেছে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ভি এস সম্পতের কাছে। রাজ্যে নির্বাচন প্রক্রিয়ার প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে আজ, শনিবার রাতে কলকাতায় আসছেন সম্পতের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের তিন সদস্যের ফুল বেঞ্চ। সম্পৎ-বাহিনীর প্রথম বৈঠকটিই হবে সুনীল গুপ্তর সঙ্গে। কমিশন সূত্রের খবর, সেখানেই সিইও-কে কড়া বার্তা দিতে পারেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার।
রাজ্যে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে গত ২৫ মার্চ এক দিনের সফরে রাজ্যে এসেছিলেন উপ-নির্বাচন কমিশনার বিনোদ জুৎসি। সিইও-র দফতরের কাজকর্মে অসন্তুষ্ট বিরোধী নেতারা সে সময় সুনীলবাবুর সামনেই জুৎসির কাছে অভিযোগ করেছিলেন। সিইও-র দফতর সূত্রের খবর, সব কিছু খতিয়ে দেখে জুৎসি কলকাতা ছাড়ার আগে এটা স্পষ্ট করে দেন যে, তিনি সুনীলবাবুর কাজকর্মে সন্তুষ্ট নন। বিমানবন্দরে দাঁড়িয়েই তিনি সুনীলবাবুকে আরও সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দিয়ে যান বলেও সিইও-র দফতর সূত্রের খবর।
কমিশন সূত্রের খবর, জুৎসি দিল্লি ফিরে যাওয়ার পরে কিছুটা সক্রিয় হয় সিইও-র দফতর। এক মাস আগের জমা পড়া অভিযোগের কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেওয়া হয় বীরভূমের তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডলকে। বিজেপি প্রার্থী পি সি সরকার, সিপিএম নেতা আনিসুর রহমান, রাজ্যের মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্রকে সতর্ক করে কমিশন। কিন্তু জমে থাকা অভিযোগের সংখ্যা এত বেশি হয়ে গিয়েছে যে, জুৎসি ফিরে যাওয়ার দিন দশেক পরে দেখা যাচ্ছে এখনও ৮০টি অভিযোগের কোনও নিষ্পত্তিই করেনি সিইও-র দফতর। কমিশন সূত্রের খবর, বিশেষ করে ছ’টি জেলার জেলাশাসক, পুলিশ সুপারদের বিরুদ্ধে যে পক্ষপাতমূলক আচরণের অভিযোগ উঠেছে, তা নিয়ে কোনও পদক্ষেপই করা হয়নি।
জুৎসি ফিরে যাওয়ার পরে রাজ্যে নির্বাচনের কাজ করতে গিয়ে দুই অফিসার নিগৃহীত হয়েছেন। দু’টি ঘটনাই ঘটেছে কলকাতার লাগোয়া দুই জেলা হাওড়া এবং উত্তর ২৪ পরগনায়। ওই দু’টি ক্ষেত্রেও সিইও-র দফতরের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নির্বাচনের কাজে নিযুক্ত অফিসারেরাই। কমিশনের ফুল বেঞ্চ সেই বিষয়েও পৃথক ভাবে ফাইল তৈরি করেছে বলে কমিশন সূত্রের খবর।
শনিবার রাতে কলকাতায় পৌঁছে সম্পৎ-সহ কমিশনের ফুল বেঞ্চ সিইও-র সঙ্গে বৈঠক করবে। এর পরে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলির জেলাশাসক এবং এসপি-দের সঙ্গে বৈঠক করবে তারা। রবিবার স্বীকৃত রাজনৈতিক দলগুলি ছাড়াও বাকি জেলাগুলির ডিএম-এসপি-দের এবং পরে রাজ্যের মুখ্যসচিব এবং স্বরাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করবেন সম্পৎ।
প্রশাসন সূত্রে খবর, ভোট কেন্দ্রগুলিতে আচ্ছাদন, জলের মতো ন্যূনতম পরিষেবা আছে কি না, ভোটার তালিকায় নাম তোলা বা বাদ দেওয়ার কাজ ঠিক মতো হয়েছে কি না, অভিযোগের নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে কতটা কাজ হয়েছে, নির্বাচনী আচরণবিধি কার্যকর করার ক্ষেত্রে কতটা সক্রিয় ছিল জেলা প্রশাসন এই সব বিষয়গুলিই খতিয়ে দেখবেন সম্পৎ।
কমিশন সূত্রে খবর, দেওয়ালে লেখার ক্ষেত্রে সব দল সমান সুযোগ পাচ্ছে না বলে যে সমস্ত অভিযোগ উঠেছে, তাতে সিইও অফিসের ভূমিকাও প্রশ্নের মুখে। এখনও ৩৭ হাজার জামিন অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা যায়নি। সিইও-এর বিরুদ্ধে আরও একটি অভিযোগ হল, তাঁর কাছে অভিযোগ এলেই প্রতিকারের জন্য তিনি তা পাঠিয়ে দিচ্ছেন দিল্লিতে, নির্বাচন কমিশনের দফতরে। অথচ অভিযোগের সিংহভাগ তাঁর অফিসই সমাধান করতে পারে বলে মনে করে কমিশন।
এই সব অসংখ্য অভিযোগ পেয়েই গত ২৫ মার্চ কলকাতায় এসে সিইও-কে সতর্ক করে দিয়েছিলেন জুৎসি। তার পর সিইও অফিসের কাজে গতি এসেছে বলে দাবি করা হলেও দ্রুত তদন্ত করে অভিযোগের নিষ্পত্তি করার ক্ষেত্রে সুনীল গুপ্তর দফতর কতটা সক্রিয় হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েই গিয়েছে। এ দিনই কংগ্রেস নেতা তথা উত্তর কলকাতা কেন্দ্রের প্রার্থী সোমেন মিত্র অভিযোগ করেন, সিইও-র দফতর বিরোধীদের অভিযোগ গুরুত্ব দিয়ে দেখছে না। একই সঙ্গে তাঁর অভিযোগ, শাসক দলের নির্দেশে থানাগুলি ‘পোস্ট অফিসে’র ভূমিকা পালন করছে।
কয়েকটি জেলা প্রশাসনের কাজকর্মেও যে কমিশন অসন্তুষ্ট, নবান্নের কাছে সেই বার্তা এসে পৌঁছেছে। জেলাগুলির মধ্যে রয়েছে প্রধানত দুই ২৪ পরগনা, বর্ধমান, হাওড়া, বীরভূম এবং নদিয়া। শহরে এক রাত কাটিয়ে, সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলার পরে অভিযুক্ত জেলাগুলির প্রশাসনিক কর্তাদের বিরুদ্ধে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার কোনও ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিতে পারেন বলেও মনে করা হচ্ছে।
পরিস্থিতি বিচার করে তাই নির্বাচনী বিধি কার্যকর করা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজ আরও আঁটোসাটো করতে চাইছে কমিশন। ইতিমধ্যে পুলিশ পরিদর্শকের অধীনে আরও বেশি সংখ্যক ভোটকেন্দ্রকে আনা হয়েছে। নির্বাচনী বিধি ভঙ্গ হচ্ছে কি না, তা দেখার জন্য ৫৪৭টি সরকারি ‘সেল’ বিভিন্ন কেন্দ্রে ঘুরে বেড়াচ্ছে। উত্তরবঙ্গের চারটি লোকসভা কেন্দ্রে ভোট হবে ১৭ এপ্রিল। সে জন্য আজ, শনিবার কেন্দ্রীয় বাহিনী ঢুকছে রাজ্যে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy