Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

দহনে স্বস্তি দিতে এগোল ছুটি, ক্লাস সকালে

গরম এড়াতে। বনগাঁয় ছবি তুলেছেন নির্মাল্য প্রামাণিক।

গরম এড়াতে। বনগাঁয় ছবি তুলেছেন নির্মাল্য প্রামাণিক।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:১০
Share: Save:

গরমের দাপট কবে কমবে, ঠিক নেই। এই অবস্থায় স্কুলপড়ুয়াদের কিছুটা স্বস্তি দিতে বৃহস্পতিবার জোড়া বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে রাজ্যের স্কুলশিক্ষা দফতর।

একটি বিজ্ঞপ্তি বলছে, স্কুলে এ বার গরমের ছুটি দু’সপ্তাহেরও বেশি এগিয়ে আনা হয়েছে। সাধারণ ভাবে ১৭ মে থেকে ৮ জুন পর্যন্ত গরমের ছুটি থাকে। এ বার সেই ছুটি ২ মে শুরু হয়ে চলবে ৩১ মে পর্যন্ত।

আর অন্য বিজ্ঞপ্তিটিতে জানানো হয়েছে, গরমের ছুটি শুরু হওয়ার আগে বিভিন্ন জেলার পরিস্থিতি বিচার করে দুপুরের ক্লাস সকালে করানো যায় কি না, সংশ্লিষ্ট জেলাশাসকেরাই তা খতিয়ে দেখবেন। তার পরে সিদ্ধান্ত নিয়ে স্কুলগুলিকে সেটা জানিয়ে দেবেন। এ দিনের বিজ্ঞপ্তি দু’টি মূলত সরকারি ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলের জন্য জারি করা হয়েছে। তবে বেসরকারি স্কুলগুলিও যাতে এই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়, মৌখিক ভাবে সেই আবেদন জানিয়েছেন স্কুলশিক্ষা দফতরের এক কর্তা।

কয়েক দিন ধরে বিশেষ করে কলকাতায় একনাগাড়ে তাপপ্রবাহ চলছে। দক্ষিণবঙ্গের অন্যান্য জেলায় তাপপ্রবাহ না-হলেও তাপমাত্রা অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। বসিরহাটে এ দিন ‘সানস্ট্রোক’-এ মৃত্যু হয়েছে এক প্রৌঢ়ের। অলোক ঘোষ (৬১) নামে ওই প্রৌঢ় বাজার করে সাঁইপালার বাড়িতে ফিরছিলেন। ফেরার পথে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। বসিরহাট জেলা হাসপাতালের চিকিৎসক তপন রায় বলেন, “প্রাথমিক পরীক্ষার পরে মনে হচ্ছে, অতিরিক্ত গরমের জেরে সানস্ট্রোকে ওই প্রৌঢ়ের মৃত্যু হয়েছে।”

গরমে সাধারণ মানুষ তো বটেই, ভোট-প্রার্থীরাও নাজেহাল। দহন বাড়তে থাকায় উদ্বিগ্ন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। এ দিন বর্ধমানের সমুদ্রগড়ে তিনি বলেন, “প্রচণ্ড গরম চলছে। বাচ্চাদের স্কুলে যেতে কষ্ট হচ্ছে। শিক্ষকদেরও কষ্ট হচ্ছে। প্রশাসন, সাংবাদিক এবং ভোটের কাজ যাঁরা করছেন, সকলেরই কষ্ট হচ্ছে গরমে।” এর পরেই ছেলেমেয়েদের সতর্ক করে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “বাচ্চারা, বাড়ি গিয়েই জল খাবে না। সভায় এসেই স্বপনকে (মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ) বলছিলাম, মাথায় ছাউনি নেই কেন? মানুষের ক্ষতি হলে তো আমারই সব থেকে বেশি ক্ষতি হবে।”

সভা চলতে চলতেই মমতার নজরে আসে, পুলিশকর্মীরা সমবেত মহিলাদের ছাতা বন্ধ করতে বলছেন। মুখ্যমন্ত্রী সঙ্গে সঙ্গে বলেন, “লক্ষ্মী ভাই আমার, ওঁদের ছাতা খুলতে দিন।” সভা চলাকালীন মুখ্যমন্ত্রী এক সময় বলেন, “আমি যত বলব, তত মানুষের কষ্ট বাড়বে। কারণ, বাতাসে গরম হলকা বইছে।” এর পরেই সভা সংক্ষিপ্ত করে দেন মুখ্যমন্ত্রী।

গরমে স্কুলের ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকদের যে কষ্ট হচ্ছে, তা অনুধাবন করেই এ দিন স্কুলশিক্ষা দফতর বিজ্ঞপ্তি দিয়ে গ্রীষ্মের ছুটি এগিয়ে এনেছে। গরমের ছুটি এগিয়ে আনার জন্য দফতরের কাছে আবেদন জানিয়েছিল প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ ও মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। তার জেরেই ছুটি এগোনোর সিদ্ধান্ত বলে স্কুলশিক্ষা দফতরের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

স্কুলশিক্ষা দফতরের এক কর্তা এ দিন জানান, নতুন বিজ্ঞপ্তির জেরে গরমের ছুটি সাত দিন বেড়ে গিয়েছে। তিনি বলেন, “এই সাত দিনে পঠনপাঠনের যা ক্ষতি হবে, ভবিষ্যতে অন্য ছুটি কমিয়ে তা পুষিয়ে দেওয়া হবে।” বিজ্ঞপ্তিতে আলাদা ভাবে অন্য বোর্ডের অনুমোদিত বা সরকারি সাহায্য নেয় না, এমন বেসরকারি স্কুলের ছুটির ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি ঠিকই। তবে স্কুলশিক্ষা দফতরের কর্তা বলেন, “ওই সব স্কুলের কর্তৃপক্ষের কাছেও আবেদন জানানো হচ্ছে, সম্ভব হলে গরমের ছুটি এগিয়ে আনুন।”

গরমের ছুটি এগিয়ে আনা হলেও তা শুরু হতে এখনও এক সপ্তাহ বাকি। এই ক’দিন দুপুরের বদলে সকালে ক্লাস করানো সম্ভব কি না, তা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জেলাশাসকদের। দ্বিতীয় বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, জেলার পরিস্থিতি বিচার করে প্রয়োজনে সকালে ক্লাস নেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক। এই ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিতে হবে। বিষয়টি ছাত্রছাত্রী এবং শিক্ষকদের আগাম জানিয়েও দিতে বলা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।

লা মার্টিনিয়ার, ক্যালকাটা বয়েজ, সেন্ট জেমস, সেন্ট জেভিয়ার্সের মতো আইসিএসই বোর্ডের অনেক স্কুল ইতিমধ্যেই ক্লাসের সময় এগিয়ে আনার কথা জানিয়ে দিয়েছে।

কিন্তু এই প্রচণ্ড দহনে অবিলম্বে স্কুলে ছুটি না-দিয়ে এক সপ্তাহ পরে তা শুরু করার কারণ কী?

স্কুলশিক্ষা দফতরের এক কর্তা বলেন, “সাধারণ ভাবে জুনের প্রথম সপ্তাহে বর্ষা চলে আসবে বলে ধরা হয়। তাই জুনের গোড়ায় স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনই গ্রীষ্মের ছুটি শুরু হয়ে গেলে মে-র শেষে প্রবল গরমের মধ্যেই ফের স্কুল খুলে দিতে হবে। সেটা মোটেই কাম্য নয়।” একই সঙ্গে তিনি জানিয়ে দেন, ক্লাসের সময় বদলানো হলে সকাল সাড়ে ৬টা থেকে বেলা সওয়া ১১টা পর্যন্ত স্কুল হবে। তবে অনেক স্কুলই জানিয়েছে, পরিকাঠামোর অভাবে প্রথম থেকে দশম বা দ্বাদশ পর্যন্ত সব শ্রেণির ক্লাস সকালে একসঙ্গে নেওয়ার ব্যবস্থা করা কঠিন। তাই এই বিজ্ঞপ্তি মানা আদৌ সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

অন্য বিষয়গুলি:

summer vacation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy