Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

ইয়েচুরির মন্তব্যে জোট-জল্পনা জারি, আজ বৈঠকে কংগ্রেস

রাজ্যে বিধানসভা ভোট যত কাছে আসছে, জোট-সম্ভাবনা নিয়ে চর্চা তত গতি পাচ্ছে! বিভিন্ন রকমের অঙ্ক কষা চলছে সব শিবিরেই। সাম্প্রতিক সব ভোটের ফলাফলের নিরিখেই তৃণমূল রাজ্যে বিরোধীদের চেয়ে অনেক এগিয়ে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৫ ০২:৫৫
Share: Save:

রাজ্যে বিধানসভা ভোট যত কাছে আসছে, জোট-সম্ভাবনা নিয়ে চর্চা তত গতি পাচ্ছে! বিভিন্ন রকমের অঙ্ক কষা চলছে সব শিবিরেই।

সাম্প্রতিক সব ভোটের ফলাফলের নিরিখেই তৃণমূল রাজ্যে বিরোধীদের চেয়ে অনেক এগিয়ে। শাসক দলের মোকাবিলায় বিরোধীদের একজোট হওয়া উচিত, এই যুক্তির পক্ষে সওয়াল করে চলেছেন বাম ও কংগ্রেস শিবিরের একাংশ। বিহারে জেডিইউ-আরজেডি-কংগ্রেসের মহা়জোট বিজেপি-কে হারিয়ে দেওয়ার পরে এই সওয়াল আরও জোরালো হয়েছে। আবার সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ক অটুট রাখতে সীমিত শক্তির কংগ্রেসকে ফের কাছে টানা উচিত বলে মনে করছে তৃণমূলের একাংশ। নিশ্চিত আসন পাওয়ার আশায় কংগ্রেস বিধায়কদের একাংশও এই ভাবনার শরিক! এমন চর্চা-জল্পনার আবহেই শুক্রবার নতুন ইন্ধন জুগিয়ে গেলেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি।

সিপিএমের বিগত পার্টি কংগ্রেসের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কংগ্রেসের সঙ্গে সরাসরি নির্বাচনী সমঝোতা সম্ভব নয়। যদিও সেই পার্টি কংগ্রেসেরই রাজনৈতিক ও কৌশলগত দলিলে বলা আছে, রাজ্যওয়াড়ি পরিস্থিতি বিচার করে সংশ্লিষ্ট নেতৃত্ব প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। লৌহপর্দায় এই ফাঁক সম্পর্কে ইয়েচুরি সম্যক অবহিত! সিপিএমের বর্ধিত রাজ্য কমিটির অবসরে এ দিন তাঁর কাছে প্রশ্ন ছিল, শিলিগুড়িতে পঞ্চায়েত ও পুরভোট ঘিরে বাম নেতৃত্ব কংগ্রেস সম্পর্কে ‘বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব’ নিয়েছেন। দলের রাজ্য নেতৃত্ব তা নাকচ করেননি। তা হলে কি বিধানসভা ভোটে কংগ্রেসের সঙ্গে বন্ধুত্ব আরও প্রসারিত হওয়ার সম্ভাবনা আছে? সিপিএমের সাধারণ সম্পাদকের জবাব, ‘‘এখন আমরা প্লেনাম, ব্রিগেড সমাবেশ এবং সাংগঠনিক কাজ নিয়ে ব্যস্ত। বিধানসভা নির্বাচনে কী কৌশল নেওয়া উচিত, সে সব নিয়ে জানুয়ারি থেকে আমরা আলোচনা শুরু করব।’’

তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, ইয়েচুরি কিন্তু সরাসরি বলেননি যে, কংগ্রেসের সঙ্গে কোনও সমঝোতার কোনও প্রশ্নই নেই। বরং, বিষয়টি আলোচনাসাপেক্ষ, এমনই ইঙ্গিত মিলেছে তাঁর কথায়। যার প্রেক্ষিতে সিপিএমের একাংশের ধারণা, কংগ্রেসের জন্য সমঝোতার দরজা বন্ধ করে দেননি সাধারণ সম্পাদক। পরিস্থিতি বিচার করে আলিমুদ্দিনের নেতাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুবিধা করে দেওয়ার মতো অবস্থানই তিনি নিচ্ছেন বলে দলের ওই অংশের বক্তব্য। আবার দলেরই অন্য অংশের বক্তব্য, ইয়েচুরি শুধু জানিয়েছেন, জানুয়ারি মাসের আগে তাঁরা এ সব নিয়ে ভাবছেন না। এর থেকে জোটের জল্পনায় পৌঁছে যাওয়া উচিত নয়!

ঘটনাচক্রে, ইয়েচুরি এমন দিনে ওই মন্তব্য করেছেন, যার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই কলকাতায় কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করতে আসছেন রাহুল গাঁধীর দূত সি পি জোশী। এ রাজ্যে দলের সাংগঠনিক পরিস্থিতি এবং ভবিষ্যতের জোট-সম্ভাবনা নিয়ে এআইসিসি-র তরফে পশ্চিমবঙ্গের ভারপ্রাপ্ত নেতা জোশীর সামনে আজ, শনিবার মতামত দিতে পারেন রাজ্য কংগ্রেস নেতারা। স্বয়ং রাহুলও ভিডিও কনফারেন্সে আলোচনায় যোগ দিতে পারেন। প্রদেশ কংগ্রেসের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশই তৃণমূলের সঙ্গে জোটের বিরুদ্ধে। ইয়েচুরির ইঙ্গিত তাঁদের সওয়ালে সুবিধা করে দিতে পারে বলে কংগ্রেসের একাংশের মত।

বস্তুত, বিধানসভা ভোট যত কাছাকাছি আসবে, বিরোধীদের উপরে শাসক দলের হামলা তত বাড়বে বলে আশঙ্কা ইয়েচুরিদের। সম্প্রতি বাম জাঠায় পরপর হামলা দেখে তাঁদের আশঙ্কা আরও বেড়েছে। এই প্রশ্নে খুব ভিন্নমত নন রাজ্য কংগ্রেস নেতারাও। তবে তাঁদের মধ্যে এর মোকাবিলার পথ নিয়ে দ্বিমত আছে। একাংশ মনে করে, তৃণমূলের হাত ধরেই এর থেকে পরিত্রাণ খোঁজা উচিত! অন্য আর এক দল নেতার মত, প্রয়োজনে বামেদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তৃণমূলকে শক্ত লড়াইয়ে ফেলা উচিত। আর অন্য দিকে সিপিএমের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এ দিন ইয়েচুরির পাশে বসে দলের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম বলেছেন, ‘‘রাজ্যের পরিস্থিতির উপরে বিচার করে রাজ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সেই আলোচনা হবে পরে। তবে এ রাজ্যে বামফ্রন্টই সব চেয়ে স্থায়ী জোট! বামফ্রন্ট মানুষের কাছে যাবে। মানুষই বলবেন, কী ভাবে তৃণমূলের অপশাসন থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে!’’

জোট নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার সম্ভাবনা থাকলেও প্রদেশ কংগ্রেসের ঐক্যবদ্ধ ছবি অবশ্য আজ জোশীর বৈঠকে দেখা যাওয়ার ইঙ্গিত ক্ষীণ! হাঁটুতে অস্ত্রোপচারের পরে আব্দুল মান্নান গাড়িতে বিধান ভবন যাওয়ার অবস্থায় থাকলেও সচেতন ভাবেই তিনি যাবেন না! হাসপাতালে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী তাঁকে দেখতে যাওয়ার পরেও তাঁর ক্ষোভ কমেনি! প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য দিল্লিতে থাকবেন আইএনটিইউসি-র বৈঠকে। সেখানে স্বয়ং রাহুলও বক্তা। স্ত্রীর চোখের চিকিৎসার জন্য ব্যস্ত থাকায় বৈঠকে যেতে পারবেন না বলে জোশী ও অধীরকে জানিয়ে দিয়েছেন মানস ভুঁইয়া। তবে বৈঠকে থাকার কথা আর এক বর্ষীয়ান নেতা সোমেন মিত্রের।

অন্য বিষয়গুলি:

sitaram yechury congress-left alliance
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy