এক শিক্ষিকার কোলে উদ্ধার হওয়া় শিশু। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য।
ভিড় লোকালে নাগাড়ে কেঁদে যাচ্ছে একরত্তি শিশুটি। অথচ নির্বিকার ‘মা’।
শনিবার, সকালে স্কুলে যাওয়ার পথে আপ-শান্তিপুর লোকালের দৃশ্যটি কেমন সন্দেহজনক লেগেছিল জনাকয়েক শিক্ষিকা ও ছাত্রীর। ‘মা’কে প্রশ্ন করায় তেমন সাড়া মেলেনি। তাতে সন্দেহ জাঁকিয়ে বসেছিল আরও। চলন্ত ট্রেনেই শুরু হয়েছিল ‘জেরা’। একসময় সেই প্রশ্নের মুখেই ভেঙে পড়েছিলেন ‘মা’। কবুল করেন, ওই শিশুকন্যা তাঁর নয়। এক দম্পতি তাঁকে স্বেচ্ছায় মানুষ করতে দিয়েছেন।
ট্রেন থেকেই ফোন করে ওই শিক্ষিকারা ব্যাপারটা জানান রানাঘাট জিআরপিকে। খবর যায় শান্তিপুর আরপিএফের কাছে। সকাল দশটা নাগাদ ট্রেনটি শান্তিপুর স্টেশনে ঢুকতেই আরপিএফের জওয়ানেরা শিশুটিকে উদ্ধার করে শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করান। আটক করা হয় হাওড়ার উলুবেড়িয়ার চেঙ্গাইল গ্রামের বাসিন্দা পল্লবী সর্দার নামে ওই মহিলাকে।
আরপিএফের জেরায় ওই মহিলা জানিয়েছেন, তাঁর দুই ছেলে। কোনও মেয়ে নেই। তাই প্রতিবেশী স্বপ্না মণ্ডল সদ্যোজাত শিশুকন্যাকে তাঁর হাতে তুলে দিয়েছেন। সেই শিশুকে নিয়ে তিনি বাপের বাড়ি, বীরনগরে যাচ্ছিলেন। তাঁর দাবি, ‘‘অহেতুক সন্দেহ করে আমাকে বিপাকে ফেলা হল!’’
পল্লবীর কাছ থেকে আরপিএফ শিশুটির মায়ের ফোন নম্বর নিয়ে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে। এ দিন সন্ধ্যায় ওই শিশুটির মা স্বপ্না মণ্ডল শান্তিপুরে এসে জিআরপি-র সঙ্গে দেখা করেন। স্বপ্নাদেবী বলেন, ‘‘আমার দুই ছেলে এক মেয়ে। স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই রাজমিস্ত্রির জোগাড়ে। অভাবের সংসারে এই সন্তান আমরা চাইনি। সেই কারণেই মেয়েকে পল্লবীর হাতে তুলে দিয়েছিলাম।’’
জেলার চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির সভাপতি রিনা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘শিশুটিকে আমাদের হেফাজতে নিয়েছি। গোটা বিষয়টা ভাল করে খতিয়ে দেখে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব। তবে এ ভাবে নিজের সন্তানকে অন্যের হাতে তুলে দেওয়া যায় না।’’
রোজ দিনের মতো এ দিনও পায়রাডাঙা ও চাকদহ থেকে বেশ কয়েকজন শিক্ষিকা উঠেছিলেন ওই লোকালে। তাঁরা সকলেই শান্তিপুর ও ফুলিয়া স্কুলের শিক্ষিকা। তাঁদেরই একজন তনুশ্রী ঘোষ জানান, তাঁদের সামনের আসনে শিশুটিকে নিয়ে বসেছিলেন পল্লবী। মহিলার হাবভাব দেখে তাঁদের খটকা লাগে। পল্লবীকে জিজ্ঞাসা করে তাঁরা জানতে পারেন যে, শনিবারেই তিনি সন্তান প্রসব করেছেন।
স্কুল শিক্ষিকা তনুশ্রীদেবীর কথায়, ‘‘সন্দেহ আরও গাঢ় হয় যখন দেখি বাচ্চাটা কেঁদেই যাচ্ছে। অথচ ওই মহিলা চুপ করে বসে আছেন। তাছাড়া একদিন আগে মা হলে যা শারীরিক অবস্থা থাকে ওই মহিলাকে দেখে মোটেই তা মনে হয়নি।’’ এরপর আর দেরি করেননি তাঁরা। খবর দেন জিআরপিকে।
শনিবার স্কুলের ছুটি হয়ে গিয়েছে দুপুর দেড়টায়। কিন্তু ছুটির পরেও ওই শিক্ষিকারা কেউ বাড়ি ফেরেননি। এ দিন রাত পর্যন্ত তাঁরা শান্তিপুর স্টেশনে ছিলেন। বার বার খোঁজ নিয়েছেন শিশুটির। পল্লবী ও স্বপ্নাদেবীর কথা তাঁরা বিশ্বাস করতে পারছেন না। পলি রায় বসু নামে আর এক শিক্ষিকা যেমন বলছেন, ‘‘ওঁদের গল্পটা কেন জানি না বিশ্বাস হচ্ছে না। মনে হচ্ছে এর পিছনে অন্য কোনও ব্যাপার রয়েছে। আরপিএফের বিষয়টি ভাল করে খতিয়ে দেখা উচিত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy